জীবনানন্দ দাশ সারাবিশ্বেই গুরুত্বপূর্ণ
Published: 13th, February 2025 GMT
ফয়জুল লতিফ চৌধুরী: আধুনিক বাংলা ভাষার দুই মহান কবি যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জীবনানন্দ দাশের কবিতা অনুবাদ করার জন্য আপনি বিখ্যাত। আপনি ‘গীতাঞ্জলি’ ও ‘রূপসী বাংলা’সহ মোট সাতটি গ্রন্থ ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছেন। আপনার অনুবাদ সাবলীল এবং স্বাদু। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার আপনাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পুরস্কার ২০২৫-এ ভূষিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি এই পুরস্কার আপনার হাতে তুলে দেওয়া হবে। আপনি কি ঢাকা আসার জন্য প্রস্তুত? পুরস্কারের ঘোষণায় আপনার কেমন লাগছে?
জো উইন্টার: সত্যি বলতে কি, আমি অভিভূত। আমি আনন্দিত। মনে হলো বাংলাদেশ হঠাৎ পেছন থেকে এসে আমার কাঁধে টোকা দিয়ে বলল, এই নাও তোমার বাংলাপ্রীতির স্বীকৃতি। ২০১৬ সালে যখন আমি বাংলাদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলাম, তখন আমি একটি নতুন জাতিগোষ্ঠীর ক্রম-উত্থানের সংকেতগুলো লক্ষ্য করেছিলাম। মনে হয়েছিল পুরোনো এই পৃথিবীতে একটি নতুন জাতিগোষ্ঠী জোরেশোরে তার আত্মপরিচয় সৃষ্টি করে চলেছে। এ পুরস্কার পৃথিবীর এই প্রাণোচ্ছল অংশের সঙ্গে আমার সম্পর্ককে নিবিড়তর করে তুলবে। আমার জন্ম ১৯৪৩ সালে। এ পুরস্কার আমার অশীতিপর জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চার করবে। হ্যাঁ, আমি ঢাকা যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। জীবনানন্দ দাশের বাংলাদেশ আমাকে ডাক দিয়েছে। এ আমন্ত্রণ আমি কী করে উপেক্ষা করব?
l আপনি তো বাংলাদেশ ভালোভাবেই ঘুরেফিরে দেখেছেন। বরিশালেও বেশ কিছু দিন কাটিয়েছেন। বাংলাদেশ ও এর মানুষ সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
ll প্রথমে মনে হয়েছিল বাংলাদেশ ভ্রমণ হবে অনেকটাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণের মতো। পশ্চিমবঙ্গে আমি ১২ বছর ছিলাম আর বাংলাদেশে মাত্র তিন সপ্তাহ। ভারতে প্রাচীন সভ্যতার অনুপেক্ষণীয় নিদর্শনগুলো এবং দৃঢ় ঐতিহ্যের বলয় আমার স্বাধীন চিন্তা প্রক্রিয়াকে আঁকড়ে ধরে রাখত। অন্যদিকে বাংলাদেশে গিয়ে মনে হয়েছিল জীবনের তীরে তীরে নতুন ঢেউ আছড়ে পড়ছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে গিয়ে কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। কয়েকজনের ছিল এলায়িত কেশরাজির দর্শনীয় বিন্যাস। অন্যদিকে আপাদমস্তক বোরকায় আবৃত কয়েকজনের চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের সহ-অবস্থান আমাকে মুগ্ধ করেছিল। মনে হয়েছিল বৈপরীত্যের এই ঔদার্য থেকে ইসলামী বিশ্বের জন্য শিক্ষণীয় কিছু আছে।
বরিশালের কথা যদি বলতে হয় তবে বলব, কবি জীবনানন্দ দাশের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবহনকারী গ্রামীণ এলাকা ঘুরে রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। কারণ জীবনভর তো এই পটভূমি তাঁর আত্মদর্শনকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর বাড়ি তো এখন আর নেই, কিন্তু সেই সরু রাস্তা, বড় বড় গাছপালা, ফুল, ঝোপঝাড় সবই আমাকে তাঁর কবিতাগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। বিশেষ করে ‘মৃত্যুর আগে’ এবং ‘রূপসী বাংলা’র কবিতাগুলো মনের পর্দায় ছবির মতো খুলে গিয়েছিল।
l সনেট রচয়িতা হিসেবে জীবনানন্দের খুব একটা প্রসিদ্ধি নেই। আপনি তার সনেট পড়েছেন। বহুল পঠিত ‘শকুন’ কবিতাটি ইতালীয় কবি দান্তে প্রবর্তিত তেরজে রিমা’র দুরূহ কাঠামোতে লেখা সনেট। সনেট রচয়িতা হিসেবে জীবনানন্দকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ll জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ মূলত সনেট সংকলন। এ কাব্য আমি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছি গভীর আনন্দের সঙ্গে। ‘বেঙ্গল দ্য বিউটিফুল’ নামে ২০০৬ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত। জানি, ‘রূপসী বাংলা’ ছাড়াও জীবনানন্দ দাশের অনেক সনেট আছে। সেগুলি পড়ার সুযোগ হয়নি। ‘রূপসী বাংলা’র সনেটগুলোর আবেদন সর্বতোভাবে চিরন্তন। নিশ্চিতভাবেই ইতালীয়, ফরাসি, ইংরেজি ভাষার বিখ্যাত সনেট রচয়িতাদের সমপর্যায়ের। বাংলায় রবীন্দ্রনাথ বা তাঁরও আগে মাইকেল মধুসূদন সনেট লিখেছেন, কিন্তু এই ‘আবার আসিব ফিরে’ এবং ‘রূপসী বাংলা’র অন্যান্য সনেট এমন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে লেখা– যা তুলনাহীন। তিনি আধুনিক সনেট লেখকদের শিক্ষক স্থানীয় সন্দেহ নেই। হ্যাঁ, ‘শকুন’ কবিতাটি তেরজে রিমার কাঠামোতে রচিত সনেট। জীবনানন্দ তেরজে রিমা পছন্দ করতেন। আমি বলব, মোটের ওপর সনেট লিখিয়ে হিসেবে তিনি অনন্যসাধারণ।
l গত কুড়ি-পঁচিশ বছরে জীবনানন্দ দাশের শত শত কবিতা পাণ্ডুলিপি থেকে উদ্ধার করে প্রকাশ করা হয়েছে। আপনি কি এসব নতুন কবিতা অনুবাদ করার কথা ভাবছেন?
ll জীবনানন্দের এত এত নতুন কবিতার আবিষ্কার দেখে বিস্মিত হয়েছি। আমি ভারত ছাড়ি ২০০৬ সালে। জীবনানন্দের অনুবাদ চালিয়ে যেতে হলে আমাকে ভারতে ফিরতে হবে বা বাংলাদেশে। সেটা করতে পারলে আমি খুশিই হতাম, কিন্তু এই মুহূর্তে সেটি বাস্তবোচিত বলে মনে হচ্ছে না আমার। তা ছাড়া আমার বাংলা জ্ঞানে ভালোই মরিচা ধরেছে। সেটা হয়তো ঠিক করে নেওয়া সম্ভব। এরপরও জন্মসূত্রে বাঙালি, কবিতার অনুরাগী, জীবনানন্দের ব্যাপারে বিশেষ জ্ঞান রাখেন এবং ভালো ইংরেজি জানেন– এমন একজন গুণী ও ধৈর্যশীল মানুষের সাহায্য আমার দরকার হবে যদি আবার অনুবাদ করতে বসি। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় না যে, আমি নতুন করে আর এই দুঃসাহসিক কাজে হাত দিতে পারব। তবে আজ পর্যন্ত যতটুকু আমি করতে পেরেছি, তা আমার সৌভাগ্য বলে মনে করি। বাংলাদেশ থেকে জার্নিম্যান ‘নেকেড লোনলি হ্যান্ড’ প্রকাশ করেছে। কোনো প্রকাশক ‘বেঙ্গল দ্য বিউটিফুল’ প্রকাশ করলে খুব ভালো লাগবে।
l আপনার বাংলা থেকে ইংরেজিতে কবিতা অনুবাদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে কিছু বলুন।
ll আমি বাংলা শিখেছিলাম অল্পই; তাতে কথোপকথন চালানো যায় না খুব একটা। বরং আমি বাংলা পড়তে পারতাম আরও ভালো; তবে তাও যে খুব বেশি ভালো, সে দাবি করা সমীচীন হবে না। কিন্তু একটা বাংলা কবিতায় শব্দগুলো কীভাবে কাজ করছে, তা যদি কোনো বন্ধু একটু ধৈর্য ধরে বুঝিয়ে দিত, তো আমি বুঝতে পারতাম; কারণ কবিতার ব্যাপারটা তো সব ভাষায়ই বলতে গেলে একইভাবে কাজ করে। কোনো কবিতার প্রতিটি শব্দের অর্থ জানার আগপর্যন্ত এবং কবিতাটি ভালোভাবে অনুধাবন করার আগপর্যন্ত আমি কবিতাটির অনুবাদে হাত দিতাম না। কবিতায় শব্দ তথা পদেও ক্রমবিন্যাসটি আমি খুব তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করে নিতাম, কারণ বাক্যের মধ্যে প্রতিটি শব্দের ব্যাকরণিক ভূমিকা জেনে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া একটি কবিতা পড়ার সময় যতক্ষণ না আমি কবিতাটা মনে মনে গুনগুন করে পড়তে পারছি এবং কবিতার সুরটা ধরতে পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি অনুবাদ শুরু করে দিতাম না। একবার সুরটা ধরে ফেলার পর মনে হতো কবিতাটি আমি নিজের ভাষায়ই নিজের মতো করে পড়ে নিতে পারতাম, যদিও কবিতার ভাষা বাংলা বৈ কিছু নয়। বাংলাভাষী অনেকেই অনুবাদক হিসেবে আমার ওপর আস্থা রাখতে পারত না, কারণ একটা ভাষায় সাবলীল হওয়া যাকে বলে, বাংলার ক্ষেত্রে সেটা আমি কখনোই হতে পারিনি। তবু আমি তাদের কাছে অনুরোধ রাখব আমার করা অনুবাদগুলো পড়ে দেখতে। আমি নিজে কবি এবং আমার বিশ্বাস কেবল একজন কবিই পারেন বন্ধ দরজা খুলে আরেকজন কবির সীমানায় প্রবেশ করতে। কিন্তু সে জন্য নিখুঁতভাবে হোমওয়ার্কটা করে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
l ২০১৬ সালে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করার সময় আপনি বলেছিলেন, আধুনিক কবিতার বিশ্বে জীবনানন্দ দাশ মুষ্টিমেয় প্রধানদের অন্যতম। টি.
ll কিছুটা পুরোনো আমলের ইংল্যান্ডে কবিতারসিকদের কাছে এলিয়টের প্রথম দিককার কবিতাগুলো সন্দেহাতীতভাবে সম্পূর্ণ অশ্রুতপূর্ব একটি সুর নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল। আধুনিক বোধ ও মননের সেই কাব্যিক প্রকাশ ও অভিনব সংবেদনশীলতা একটি শিখরস্পর্শী ভিত্তি নির্মাণ করে প্রাচীনদের স্তব্ধ করে দিয়েছিল। শুধু ইংরেজি কাব্যেই নয়, যে কোনো ইউরোপীয় কাব্যের ক্ষেত্রেই তা ছিল এক নতুন মাত্রার উন্মেষ। কবির আত্মপ্রকাশ বা হয়ে ওঠার দিক থেকে এলিয়ট এবং জীবনানন্দের মধ্যে দুটো বড় পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, ভিক্টোরীয় নন্দনতত্ত্বের দীর্ঘ ছায়া থেকে এলিয়টকে মুক্ত হতে হয়েছিল। কিন্তু সহজ প্রারম্ভিক পর্বের সুবাদে এলিয়টের স্বাভাবিক স্বাতন্ত্র্য ছিল অনেকটাই অনিবার্য। অন্যদিকে শুরুর দিনগুলোর কঠিন লড়াই জীবনানন্দকে নিয়ে গিয়েছিল সেই পরিণতির দিকে, যা তাঁর একান্ত নিজস্ব। নিজস্ব বোধ, মনন ও ভাষার নতুনত্বে রবীন্দ্রনাথের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসায় জীবনানন্দ সর্বতোভাবে সফল: তাঁর ব্যক্তিত্ব গড়ে দিয়েছিল, তার কাব্যভাষাকে গঠন করে দিয়েছিল। সময়ের অভিযাত্রায় নানা চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে জীবনানন্দকে। অনেক টানাপোড়েন সয়ে নিতে হয়েছে। দুর্বোধ্যতার অভিযোগ শুনতে হয়েছে আমৃত্যু। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে তিনি স্বীয় কাব্যভাষার প্রতি অনুগত থেকেছেন। কবি জীবনানন্দ দাশ সারা বিশ্বেই গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে এলিয়ট শুরু থেকেই সমাজবিচ্ছিন্ন ও বিপর্যস্ত মানুষের জীবনোপলব্ধির ছবি অনায়াস দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন; অগ্রসর হয়েছেন ভিন্নতর পরিণতির দিকে। শেষাবধি The Four Quartets-এ তিনি ধ্যানমগ্ন সারল্যের হাত ধরে ধর্মীয় সমাধানেই আশ্রয় নিতে চেয়েছেন। সেদিক থেকে, জীবনানন্দ প্রকৃত অর্থেই আধুনিক। জীবনের দ্বৈতরূপ আনুপূর্ব তাঁর পরিচিত ও আয়ত্তাধীন। সচেতন মানব অস্তিত্বের নিবিড় যন্ত্রণা এবং শান্তির প্রলেপকে তিনি একসঙ্গেই চিনেছেন ও জেনেছেন। রূপসী বাংলা এবং অন্যান্য শত কবিতায় তিনি প্রকৃতির অনপনেয় সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অস্তিত্বের সৌন্দর্যের ওপর আলোকপাত করেছেন। যে অভিজ্ঞতারাজি তাঁকে কবি হিসেবে গড়ে তুলেছিল সেই সংবেদনের কথা কখনও বিস্মৃতি হননি। কখনও সরে আসেননি অন্তর্লীন যন্ত্রণার গাঢ় উপলব্ধি থেকে। নিষ্পেষিত স্নায়ুকে আবৃত করে রাখেননি। ব্যক্তিসত্তার রক্তমাংস, রিক্ততা, যন্ত্রণা ও ক্ষতকে অস্বীকার করতে ‘স্বাভাবিকতার’ যে ধারণা চালু করেছে আধুনিক জীবন, জীবনানন্দের কাছে তা অর্থহীন, অনাগ্রহের বিষয়। কোনো প্রচলিত ধারণায় তিনি গা ভাসিয়ে দেননি। এককভাবে দেখলে এলিয়টের বেশ কিছু কবিতার মতো তীক্ষ্ণতা হয়তো জীবনানন্দের কবিতায় নেই; কিন্তু জীবনানন্দের সংহতি ও ব্যাপ্তি গভীরতর এবং একজন ভাষাশিল্পী হিসেবে সময়ের স্বর প্রতিধ্বনিত করার বিষয়ে তিনি তুলনাহীন।
l ‘বনলতা সেন’-এর কথা বাদ দিলে ‘আট বছর আগের একদিন’ জীবনানন্দের অন্য রকম প্রসিদ্ধ একটি কবিতা। এ কবিতা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য শুনতে চাই।
ll ‘আট বছর আগের একদিন’ এমনই এক কবিতা, যা তার তীব্রতায়, সংবেদনশীলতায়, নিখুঁতত্বে এক ভয়াবহতা তৈরি করেছে, কবিতাটির নিতান্ত সাধারণত্বেও রয়েছে সেই একই আবহ। জীবনানন্দের কবিতার মাত্রা কি আমাদের স্নায়ুকে অবশ করে দেয় না? কী সেই কারণ, যা মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে? আধুনিক মানুষের যেন কোনো অবলম্বন নেই। বেঁচে থাকা তার কাছে উদ্দেশ্যহীন, অকারণ, এক অফলপ্রসূতার বোধ ছাড়া কিছুই দেয় না। এই সময় তাঁকে ঠেলে দিয়েছে ওই অনুভূতির দিকে। আমরা সবাই এক ছন্নছাড়া পৃথিবীর অংশ, যার অভিজ্ঞতা আমাদের মর্মান্তিকভাবে ক্লান্ত করে; যা প্রথম ধরা পড়ে ‘বিপন্ন বিস্ময়’ শব্দবন্ধে। মানুষ যেভাবে হ্যামলেটকে বোঝে, হয়তো সেভাবেই আমি হৃদয়ের গভীর থেকে আত্মহননের কার্যকারণ, অন্তরাল টের পাই। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে ভাষা দিতে পারি না। আরও একটু আগের কবিতা ‘বোধ’ যাতে নির্ভুলভাবে ধরা পড়েছে ১৯২০ সালের এক সচেতন মানবসত্তার ছবি। আমার তো মনে হয়, ‘আট বছর আগের একদিন’ একটি উঁচুমানের শিল্প।
l জীবনানন্দের দীর্ঘ কবিতাগুলোতে আমরা লক্ষ্য করি একের পর এক চিত্র উন্মোচিত হচ্ছে, যার নিহিতার্থ উদ্ধার করা কঠিন। তাঁর চিন্তা এবং উপলব্ধি প্রকাশের মধ্যে রয়েছে উল্লম্ফন। আপনি জীবনানন্দ দাশের অনেক দীর্ঘ কবিতা অনুবাদ করেছেন, যেমন– ‘অবসরের গান’ এবং ‘১৯৪৬-৪৭’। জীবনানন্দ দাশের দীর্ঘ কবিতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
ll যে কোনো ‘দীর্ঘ কবিতা’ এবং বিশেষ করে সেই সব আধুনিক কবিতার ক্ষেত্রে একজন পাঠককে অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত কবিতার নিহিতার্থ অল্প হলেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘অবসরের গান’ স্বপ্নের মতো কিন্তু আমার মনে হয়, এটি কেবল পড়ন্ত বিকেলের উষ্ণতায় আবিষ্ট করে। এর চাইতেও অনেক উজ্জ্বল কবিতা জীবনানন্দ লিখেছেন। অন্যদিকে আমি মনে করি, ১৯৪৬-৪৭-এর মতো কবিতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্য কোনো ভাষায় লিখিত হয়নি। দীর্ঘ কবিতা একজন কবির কাছে এমন শৈল্পিক দক্ষতা আশা করে, সচরাচর যা সুলভ নয়। জীবনানন্দ দাশের দীর্ঘ কবিতাগুলো প্রমাণ করে এই দুর্লভ প্রতিভা তাঁর ছিল। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র অন ব দ র জন য হয় ছ ল কর ছ ন র অন য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘পুষ্পা কিংবা কবির সিং নয়, এটা জংলি’
সিয়াম পরনে লুঙ্গি, ঘাড়ে কাক বসা, ঠোঁটে পাতার বিড়ি, একহাতে দিয়াশলাই কাঠি, পেছনে আগুনের জ্বলজ্বলে শিখা। অনেক রহস্যঘেরা তার চারদিক– এমন আবহে গত বছরের মার্চে প্রকাশ করা হয়েছিল জংলি ছবির প্রথম পোস্টার। পোস্টার প্রশংসিত হলেও চারদিকে সাজসাজ রব উঠে পুষ্পা কিংবা কবির সিংয়ের আদলে সম্ভবত ছবিটি নির্মিত হবে। এর পর জংলি ছবির অনেক কিছুই প্রকাশ হয়েছে। একের পর এক ইউনিক পোস্টার, রোমান্টিক গান, প্রি-টিজসহ অনেক কিছুই।
মূলত আসন্ন ঈদের ছবির প্রচারণায় সবার আগেই নেমে পড়ে জংলি। তাই জংলি আদপে কবির সিং না পুষ্পার আদলে সেটা নিয়েও হচ্ছিল চর্চা। সে চর্চায় এবার ঘি ঢাললেন সিয়াম। পরনে লুঙ্গি, চোখেমুখে হিংস্রতা, উশকোখুশকো চুল-দাড়ি আর পুরোদস্তুর অ্যাকশন লুক– সম্প্রতি প্রকাশিত জংলির টিজারে দেশি মাসালা হিরোরূপে দেখা মিলল সিয়াম আহমেদের।
এমন সিয়ামকে এর আগে দেখেনি কেউ! ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের টিজারে পপ কালচার রেফারেন্সে সিয়ামের মুখ থেকেই যেন এলো ভারতীয় ছবির আদলে জবাব, ‘পুষ্পা? কবির সিং? অ্যাহহে! জংলি’!
টিজার প্রকাশের পরপরই দারুণ সাড়া জাগায় চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মাঝে। হুড়হুড় করে শেয়ার করতে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফলে ২০ ঘণ্টার মাথায় ২ মিলিয়নের বেশি ভিউয়ের খবর আসে। অধিকাংশই টিজার কাটের প্রশংসা করছেন।
সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন এম রাহিম; যার প্রথম সিনেমা ‘শান’। প্রথম সিনেমাতেই সিয়ামকে নিয়ে বাজি ধরেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় সিনেমাতে তিনি সিয়ামকে নিয়ে আসছেন জংলি রূপে।
রাহিম বলেন, ‘টিজারে সবার ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। সবাই দারুণ পছন্দ করছেন। অনেকেই ফোন করে ভালোলাগার কথা জানিয়েছেন। জংলির গল্পের আমরা যা দেখাতে চাই দর্শক এমন গল্প বহু বছর দেখেনি। আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটি পুরো মাসালা ছবি আবার গল্পের ছবি। যে গল্প আমাদের হাসাবে, কাঁদাবে এবং নতুন এক মায়ায় আবদ্ধ করবে। সিনেমার টিজার-ট্রেলার তো জাস্ট গল্পের ইঙ্গিত। আমার জংলি পুরো ছবি দেখলে আরও মুগ্ধতা নিয়ে হলে থেকে বের হবেন এটা দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি।’
জংলিতে সিয়ামের দুই নায়িকা। একজন শবনম বুবলি, অন্যজন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। কিন্তু এতদিন জংলি টিম ইচ্ছে করেই এ যেন আগলে রেখেছিল বুবলির চরিত্রটিকে। সিনেমার প্রচারণায় কোথাও না থাকা বুবলিকে এক ঝলক দেখা গেল টিজারে। এখানেই বোঝা গেছে বুবলির চরিত্রের গুরুত্ব। তবে গোটা টিজারে সিয়াম হাজির হয়েছেন ভয়ংকর মারমুখী ভাইবে। লুঙ্গি পরা এই সিয়াম টিজারেই দেখিয়েছেন, দেশীয় গল্পে দেশীয় নির্মাণেও
দারুণ কিছু ঘটানো সম্ভব!
টিজারে শেষ দৃশ্য নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন রহস্য। এতদিন জংলিতে সিয়ামের সঙ্গে বুবলি ও দীঘিই ছিলেন আলোচনারা কেন্দ্রে। টিজারে সিয়ামের সঙ্গে দেখা গেছে একজন শিশুশিল্পীকেও। আন্দাজ পাওয়া গেল, জংলির গল্পে মূল প্লটে শিশুশিল্পীর শক্তিশালী ভূমিকা বিদ্যমান। যদিও বিষয়টি ধোঁয়াশার মধ্যেই রেখেছে টিম। নিশ্চয়ই এই ধাঁধার উত্তর কিছুটা হলেও মিলবে জংলির ট্রেলারে। বাকিটা নিশ্চয়ই দেখা যাবে সিনেমা হলের পর্দায়।
‘জংলি’ ছবির গল্প লিখেছেন আজাদ খান, চিত্রনাট্য করেছেন যৌথভাবে মেহেদী হাসান মুন ও কলকাতার সুকৃতি সাহা। এতে বিভিন্ন চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন– দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রাশেদ মামুন অপু, সোহেল খান, এরফান মৃধা শিবলু প্রমুখ।