পটুয়াখালী আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলার অভিযোগে জেলা জামায়াতের আমিরসহ জামায়াতপন্থী ১১ আইনজীবীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলাটি করেন পটুয়াখালী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য ও জেলা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মো. মিজানুর রহমান।

মামলার আসামিরা হলেন জামায়াতপন্থী আইনজীবী পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো.

রুহুল আমিন সিকদার, পটুয়াখালী জেলা জামায়াতে আমির আইনজীবী নাজমুল আহসান, জামায়াতের ল ইয়ার্স কাউন্সিলের পটুয়াখালী জেলা শাখার সেক্রেটারি মো. আবু সাঈদ খান শামীম, আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন, মো. মহিউদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী, মো. তাওহীদুর রহমান, মো. মোর্শেদুজ্জামান সাজন, মোহাম্মদ আলী, গাজী মো. হুমায়ূন কবির ও অধ্যাপক কায়সারী। মামলায় ১০ থেকে ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিএনপিপন্থী ৩৭ জন আইনজীবীকে এ মামলায় সাক্ষী দেখানো হয়েছে।  

এজাহারে বলা হয়েছে, ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২৫-২৬ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়ন ফরম ক্রয় এবং জমা দেওয়ার দিন ছিল। ফরম ক্রয়-বিক্রয় শুরু হলে জেলা জামায়াতের আমির নাজমুল আহসান দলীয় আইনজীবী ও বহিরাগতদের নিয়ে বিভিন্ন পদে ছয়টি মনোনয়ন ফরম ক্রয় করে জমা দেন। ফরম বিক্রয়ের সময় শেষ হওয়ার পর আবার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী পরিষদের সক্রিয় সদস্য মো. মহিউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে ফরম ক্রয়ের কথা জানান। এ সময় সাধারণ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা ফরম ক্রয়-বিক্রয়ে দ্বিমত জানালে জামায়াতের জেলা আমির আইনজীবী মো. নাজমুল আহসানের নির্দেশে এজাহারভুক্ত আসামিরা বাদী ও সাক্ষীদের মারধর করে মারাত্মক জখম করেন। হামলার সময় বাদী ও সাক্ষীদের মুঠোফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে জামায়াতপন্থী আইনজীবীর মামলায় জামিন পেলেন বিএনপিপন্থী ১১ আইনজীবী৬ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে মামলার প্রধান আসামি জেলা জামায়াতের আমির মো. নাজমুল আহসান বলেন, ‘গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে কে কাকে হামলা ও মারধর করেছে, তার ভিডিও চিত্র দেশবাসী দেখেছেন, এখানে লুকানোর কিছু নাই। অপরাধীদের অপরাধ ঢাকার জন্য বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন, যা ভিত্তিহীন।’

এর আগে ওই ঘটনায় বুধবার রাতে বিএনপিপন্থী ১১ আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়। হামলার শিকার পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. রুহুল আমিন সিকদার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে বহিরাগত আরও ৩৫ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে এজাহারভুক্ত বিএনপিপন্থী ১১ আইনজীবী পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে আপসের শর্তে জামিন পান।

পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় প্রথমে জামায়াতপন্থী আইনজীবী একটি মামলা করেন। এক দিন পর বিএনপিপন্থী আইনজীবী একটি মামলা করেন। দুই মামলায় সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুনপটুয়াখালী আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে হামলার অভিযোগে বিএনপিপন্থী ১১ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১১ ফ ব র য় র জ ম য় তপন থ

এছাড়াও পড়ুন:

‘ঘুষকে’ অফিসিয়ালি বৈধতা দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, সমালোচনা

ঘুষের পরিমাণ সহনীয় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি। তাদের দাবি, হয়রানি থেকে রক্ষা পেতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এ সংক্রান্ত সভার রেজুলেশনের অংশ বিশেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

আইন পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে জানান, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করা হয়েছে এই সিন্ধান্তের মাধ্যমে। 

জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সভা গত ৬ মার্চ দুপুর ২টায় শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট সুলতান হোসেন মিয়া সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাহী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান। সভার শুরুতে এজেন্ডা ভিত্তিক আলোচনায় সব সদস্য অংশগ্রহণ করেন এবং নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ সর্ব-সম্মতিক্রমে গৃহিত হয়।

আরো পড়ুন:

বাহুবলে গাছে বেঁধে আগুন, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যুবলীগ নেতার ১৩ বছরের কারাদণ্ড

সিদ্ধান্ত নং-২: পেশকার/পিয়নকে সি, আর ফাইলিং এ ১০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নং-৩: যেকোন দরখাস্তে জি, আর/সি,আর ১০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নং- ৪: জামিননামা দাখিলের খরচ মামলা প্রতি ১০০ টাকার নিচে না এবং ২০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নং-৫: গারদখানায় ওকালতনামায় স্বাক্ষরে ১০০ টাকা, সিভিল ফাইলিং এ সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ও হলফনামায় ১০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির নিজের ফেসবুকে শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভায় পাশ হওয়া রেজুলেশনের অংশ বিশেষ পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লেখেন, “ঘুষের সার্টিফিকেট দিলো শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি।” 

ইমরান আল নাজিরের করা পোস্টে মন্তব্য করে সাগর দেওয়ান নামে অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “তারা টাকা ছাড়া নরেও না।”

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম বলেন, “শরীয়তপুর কোর্ট কাচারিতে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ নেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। কোর্টের কর্মচারীরা ইচ্ছেমতো যার থেকে যা পারছেন আদায় করে নিচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, এটা বন্ধ হোক। যেহেতু, এটা একবারে হুট করে বন্ধ করা যাবে না, তাই সভায় ঘুষের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে নির্দিষ্ট আকারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যাতে আমরা কেউ হয়রানির শিকার না হই। ভবিষ্যতে আমরা এই অনৈতিক লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেব।” 

শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন বলেন, “আইনজীবী সমিতি সভা ডেকে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করে এ ধরনের রেজ্যুলেশন ভাইরাল করায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। এটা নজিরবিহীন। ঘুষকে রেজ্যুলেশন আকারে বৈধতা দেওয়া হয় এটা কোনো ইতিহাসে নেই। এটা করে তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করেছে। তারা এই কাজটা ঠিক করেনি।” 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করেন, তারা এই কাজটা কেন করলেন? গত বছরের ৫ আগস্টের পরে এ ধরনের লেনদেন টোটালি বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের জজ স্যার, চিফ স্যার এ ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছেন। কোনো ফাইল বা কোনো কাজ আটকে থাকছে না। সব কাজ যথা সময়ে হয়ে যাচ্ছে। তাহলে কেন আমাদের স্টাফদের ঘুষের আওতায় আনা হলো আমি জানতে চাই?” 

শরীয়তপুর কোর্ট পরিদর্শক শিমুল সরকার বলেন, “আমি জানতে পেরছি, আইনজীবী সমিতি মিটিং করে ঘুষের রেট নির্ধারণ করেছে। এটা তাদের বিষয়। তারা এ বিষয়ে আমাকে এখনো কিছু জানায়নি। আমাদের এখানে ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি-না আমার জানা নেই। এ রকম যদি কেউ নিয়ে থাকেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, “এভাবে সভা ডেকে রেজুলেশন করে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করা বেআইনি। আমি এটা কখনোই সমর্থন করি না। আমি এর নিন্দা জানাই।”

গত ১২ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্যানেল ১৫টি পদের মধ্যে ১৫টি পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধার মুখে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সভাপতি ও জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান সাধারণ সম্পাদক হন।

ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাজা স্থগিত, আপিল করার অনুমতি পেলেন মীর নাসির ও মীর হেলাল
  • ফজলে করিমের দুই ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
  • মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পেটানোর ঘটনায় মামলা
  • ‘উৎকোচের’ টাকা নির্ধারণ, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে শোকজ
  • ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপির জামিন নামঞ্জুর, তিন মামলায় কারাগারে
  • রায়ে সন্তুষ্ট আবরার ফাহাদের বাবা, দ্রুত কার্যকরের প্রত্যাশা
  • আবরার হত্যা: হাইকোর্টের রায় আজ
  • ন্যায়বিচার ও মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে
  • শিশুটিকে ধর্ষণের কথা আদালতে স্বীকার করেছেন হিটু শেখ: আইনজীবী
  • ‘ঘুষকে’ অফিসিয়ালি বৈধতা দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, সমালোচনা