গত ১৫ বছরের গুম ও খুনের তদন্ত প্রয়োজন
Published: 13th, February 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের সব গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশদ তদন্ত প্রয়োজন। এসব ঘটনায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অভিযুক্ত রাজনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বর্তমান সরকার শুধু জুলাই-আগস্টের মানবতা লঙ্ঘনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তাদের কাজে সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত ‘জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ-বিচারপ্রক্রিয়া: আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন দাবি করেন বক্তারা। জহুর হোসেন হলে আয়োজিত সভার সঞ্চালনা করেন বিগত সময়ে গুম হওয়া পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’–এর অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম।
গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিনের বক্তব্যে উঠে আসে প্রতিটি গুমের রহস্য উদ্ঘাটনে আরও পরিপূর্ণ তদন্ত প্রয়োজনের গুরুত্বের কথা। তিনি বলেন, ‘শুধু জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়নি। এটা বিগত সরকারের শুরু থেকেই হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে “শহীদ” ও “ডেভিল হান্ট”–এর মতো শব্দগুলো ধর্মতান্ত্রিক, যা আইন ও ন্যায়বিচার থেকে আরও দূরে নিয়ে যায় আমাদের।’ এ সময় ডিজিএফআই ও র্যাবের মতো কয়েকটি সংস্থা, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরকারের হয়ে কাজ করেছে, সেসব সংস্থার বিলুপ্তির কথা বলেন তিনি।
রেজাউর রহমান লেনিনের বক্তব্যে আরও উঠে আসে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) কীভাবে বিভিন্ন অপারেটরের ইন্টারনেট বন্ধ করার নির্দেশ দেয় আর সে সময় শত শত মানুষকে খুন করা হয়, সেসব অভিযোগের তথ্য।
রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়, তাহলে দেশটিকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে আছে।’ শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে বন্দী বিনিময় চুক্তি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের কাজ নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার দুপুরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগী কয়েকজনকে নিয়ে আয়নাঘর নামে পরিচিত প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল এবং র্যাব-২ এর সিপিসি-৩ এর ভেতরের সেলগুলো পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল। তিনি বলেন, ‘অনেকেই গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল। এর মাধ্যমে অনেকে বিদেশে টাকাও পাচার করেছে। সরকারের উচিত এসব টাকা ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের সাহায্য চাওয়া। জনগণকে দাবি করতে হবে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়ার জন্য।’
তাসনিম খলিল বলেন, জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট স্বাগত জানালেও এই প্রতিবেদন আরও বিস্তৃত আকারে তৈরির দাবি জানাতে হবে। এ জন্য সাধারণ জনগণের কাছ থেকেই দাবি আসতে হবে।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন গুম হওয়া মানুষের স্বজনেরা। গুম হওয়া পিতার সন্তানেরা বলছিলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম এই সরকার আসার পর আমাদের বাবা হয়তো ফিরে আসবে। কিন্তু কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সরকার কেন ছয় মাস পর আয়নাঘর দেখতে যাবে, কেন দুই মাস পরই না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে সন্তুষ্ট নন বলে অভিযোগ করেন গুম অবস্থা থেকে ফিরে আসা বিল্লাল হোসেন। ২০১৩ সালে কুমিল্লা থেকে গুম হওয়া হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী বলেন, ‘গুম খুনের চেয়েও ভয়ংকর। লাশটাও থাকে না। এই ১১ বছর ধরে সেই কষ্ট বয়ে চলেছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ম হওয় তদন ত প সরক র র ম নবত
এছাড়াও পড়ুন:
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় আজ
বহুল আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর রায় ঘোষণা করা হবে আজ রোববার।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় এ মামলাটি রায়ের জন্য রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মামলা সংশ্লিষ্ট রোববারের কার্যতালিকায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে শুনানি শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী ও রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ। আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী, শিশির মনির।
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আবরার থাকতেন শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। রাত ৩টার দিকে হলের সিঁড়ির করিডোর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন হয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। একই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার বিচারিক আদালত।
রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তিন আসামি হলেন– এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মাহমুদুল জিসান ও মুজতবা রাফিদ। রায়ের পরপরই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা এবং রাষ্ট্রপক্ষে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) আবেদন করা হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত অক্টোবরে এই মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শুরু হয়।
২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সেস, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন— বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।