আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের সব গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশদ তদন্ত প্রয়োজন। এসব ঘটনায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অভিযুক্ত রাজনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বর্তমান সরকার শুধু জুলাই-আগস্টের মানবতা লঙ্ঘনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তাদের কাজে সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত ‘জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ-বিচারপ্রক্রিয়া: আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন দাবি করেন বক্তারা। জহুর হোসেন হলে আয়োজিত সভার সঞ্চালনা করেন বিগত সময়ে গুম হওয়া পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’–এর অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম।

গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিনের বক্তব্যে উঠে আসে প্রতিটি গুমের রহস্য উদ্‌ঘাটনে আরও পরিপূর্ণ তদন্ত প্রয়োজনের গুরুত্বের কথা। তিনি বলেন, ‘শুধু জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়নি। এটা বিগত সরকারের শুরু থেকেই হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে “শহীদ” ও “ডেভিল হান্ট”–এর মতো শব্দগুলো ধর্মতান্ত্রিক, যা আইন ও ন্যায়বিচার থেকে আরও দূরে নিয়ে যায় আমাদের।’ এ সময় ডিজিএফআই ও র‍্যাবের মতো কয়েকটি সংস্থা, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরকারের হয়ে কাজ করেছে, সেসব সংস্থার বিলুপ্তির কথা বলেন তিনি।

রেজাউর রহমান লেনিনের বক্তব্যে আরও উঠে আসে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) কীভাবে বিভিন্ন অপারেটরের ইন্টারনেট বন্ধ করার নির্দেশ দেয় আর সে সময় শত শত মানুষকে খুন করা হয়, সেসব অভিযোগের তথ্য।

রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়, তাহলে দেশটিকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে আছে।’ শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে বন্দী বিনিময় চুক্তি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের কাজ নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার দুপুরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগী কয়েকজনকে নিয়ে আয়নাঘর নামে পরিচিত প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল এবং র‌্যাব-২ এর সিপিসি-৩ এর ভেতরের সেলগুলো পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল। তিনি বলেন, ‘অনেকেই গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল। এর মাধ্যমে অনেকে বিদেশে টাকাও পাচার করেছে। সরকারের উচিত এসব টাকা ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের সাহায্য চাওয়া। জনগণকে দাবি করতে হবে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়ার জন্য।’

তাসনিম খলিল বলেন, জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট স্বাগত জানালেও এই প্রতিবেদন আরও বিস্তৃত আকারে তৈরির দাবি জানাতে হবে। এ জন্য সাধারণ জনগণের কাছ থেকেই দাবি আসতে হবে।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন গুম হওয়া মানুষের স্বজনেরা। গুম হওয়া পিতার সন্তানেরা বলছিলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম এই সরকার আসার পর আমাদের বাবা হয়তো ফিরে আসবে। কিন্তু কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সরকার কেন ছয় মাস পর আয়নাঘর দেখতে যাবে, কেন দুই মাস পরই না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে সন্তুষ্ট নন বলে অভিযোগ করেন গুম অবস্থা থেকে ফিরে আসা বিল্লাল হোসেন। ২০১৩ সালে কুমিল্লা থেকে গুম হওয়া হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী বলেন, ‘গুম খুনের চেয়েও ভয়ংকর। লাশটাও থাকে না। এই ১১ বছর ধরে সেই কষ্ট বয়ে চলেছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ম হওয় তদন ত প সরক র র ম নবত

এছাড়াও পড়ুন:

মুহাম্মদ ইউনূস ও ইলন মাস্কের মধ্যে আলোচনা, ‘আসছে’ স্টারলিংক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্পেসএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং টেসলা ও এক্স-এর মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ভবিষ্যতে সহযোগিতার সমূহ দুয়ার খুলতে এবং বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করতে তাদের মধ্যে বিস্তারিত আপাল হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে অধ্যাপক ইউনসূ ও ইলন মাস্কের মধ্যে ভার্চুয়ালি এই আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই আলোচনার বিষয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন। 

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

সহিংসতা-হানাহানি যেন না হয়, সজাগ দৃষ্টি রাখুন: প্রধান ‍উপদেষ্টা

পোস্ট লেখা হয়েছে, ইলন মাস্কের সঙ্গে বৈঠকের সময় মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকার ইস্যুগুলোর জন্য বাংলাদেশের উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশের পক্ষে এসডিজির প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ। ইলন মাস্কের সঙ্গে ছিলেন স্পেস এক্স-এর পক্ষে গ্লোবাল এনগেজমেন্ট অ্যাডভাইজার লরেন ড্রেয়ার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড গ্রিফিথস।

ভিডিও লিংকে কথোপকথনের সময় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইলন মাস্ক স্টারলিংকের স্যাটেলাইট যোগাযোগের রূপান্তরমূলক প্রভাবের ওপর জোর দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোগী যুবক, গ্রামীণ ও দুর্বল নারী এবং প্রত্যন্ত সম্প্রদায়ের জন্য তার স্টারলিংক ইন্টারনেটের সুবিধাগুলো তুলে ধরেন ইলন মাস্ক।

তাদের আলোচনায় গুরুত্ব পায়- উচ্চগতির অথচ কম খরচের ইন্টারনেট সংযোগ বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরে কীভাবে সমন্বয় ঘটাতে পারে, সেই বিষয়টি। একই সঙ্গে তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন ঘটিয়ে অনুন্নত অঞ্চল এবং লাখ লাখ প্রান্তিক মানুষ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখতে পারে, সে বিষয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

আলোচনার সময় নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোতে স্টারলিংকের সংযোগ ঘটলে লাখো মানুষের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং বিশ্বব্যাপী দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সংহত করবে।

শফিকুল আলম লিখেছেন, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে প্রযুক্তি-চালিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মাস্কের সঙ্গে কাজ করার জন্য তার উৎসাহ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ইউনূস।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‍স্টারলিংক গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণ ফোনের একটি সম্প্রসারণ হবে, যা গ্রামের নারী ও যুবকদের বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করার পথপ্রদর্শক হবে। তারা বিশ্বব্যাপী নারী ও শিশু এবং বিশ্ব উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে।

এই আলোচনার সময় ইলন মাস্ক গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ মডেলের প্রশংসা করেন; দারিদ্র্য বিমোচনে এর বৈশ্বিক প্রভাব স্বীকার করে অধ্যাপক ইউনূসের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

টেসলা মোটরসের প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক বলেন, তিনি বহু বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণ ভিলেজ ফোনের কাজের সঙ্গে পরিচিত। 

মাস্ক বলেন, “স্টারলিংকের মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলো কাজে লাগান গেলে বাংলাদেশে উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরো এগিয়ে যাবে।”

জাতীয় উন্নয়নের জন্য অধ্যাপক ইউনূস স্টারলিংক পরিষেবার সম্ভাব্য যাত্রা শুরু করার জন্য ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন তিনি।

আমন্ত্রণের জবাবে মাস্ক বলেন, “আমি এটির জন্য অপেক্ষা করছি।"

শফিকুল আলম পোস্টে লিখেছেন, এই সম্পৃক্ততা বাংলাদেশে উন্নত স্যাটেলাইট সংযোগ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং সারা দেশে উদ্ভাবনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

উভয় পক্ষই এই উদ্যোগের দ্রুত অগ্রগতি ঘটাতে সম্মত হয়েছে এবং তারা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ এগিয়ে নিতে রাজি হয়েছেন, লিখেছেন প্রেস সচিব।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ