সম্পদের হিসাব গোপন রাখার দায়ে ডিবির সাবেক এসআইয়ের কারাদণ্ড
Published: 13th, February 2025 GMT
দেড় কোটি টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আকবর আলী শেখকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে তিন হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার খুলনার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো.
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালে পুলিশের উপপরিদর্শক আকবর আলীর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১০ লাখ ৪১ হাজার ৮৩৬ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য উল্লেখ করেন। কিন্তু তাঁর ১ কোটি ৮২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অফিস থেকে গৃহনির্মাণ বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি তাঁর বিবরণীতে ১ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার ২৫১ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করেছেন, যা তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি ওই সম্পদ অর্জন করে দখলে রাখায় অপরাধ করেছেন।
এ ঘটনায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাহাতাব উদ্দিন ২০১৬ সালের ২২ মার্চ বাদী হয়ে খুলনা থানায় একটি মামলা করেন। ২০১৭ সালের ২০ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক নাজমুল হুসাইন আদালতে আকবর আলী শেখকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলা চলাকালে ২০২২ সালে মো. আকবর আলীকে চাকরি থেকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মজিবর রহমান জানান, মামলায় নয়জনের মধ্যে আটজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও শুনানি শেষে আদালত এই রায় দেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেলুচিস্তানের বিএলএ কারা?
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার পেশোয়ারগামী ট্রেন জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাইকারী সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শেষ করেছে। এরই মাধ্যমে ৩৪৬ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। সামরিক বাহিনী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) ৩৩ জন হামলাকারীকে হত্যা করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএলএর কার্যক্রমের পরিধি ও দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কেবল গত বছরে তারা ১৫০টিরও বেশি আক্রমণ চালিয়েছে, যারই ধারাবাহিকতা এই ট্রেন ছিনতাই।
১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত থেকে দেশ ভাগের ছয় মাস পর, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান বেলুচিস্তানকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে। তখন থেকেই প্রদেশটি বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সাক্ষী। ২০২৩ সালের জনশুমারি অনুসারে, পাকিস্তানের আনুমানিক ২৪ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখের বাসস্থান বেলুচিস্তান। কয়লা, সোনা, তামা ও গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এটি দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল।
বেলুচিস্তানে সর্বশেষ আন্দোলন শুরু হয় ২০০০ সালের গোড়ায়। প্রাথমিক লক্ষ্য প্রদেশের জনগণের জন্য সম্পদের বৃহত্তর অংশ নিশ্চিত করা হলেও, শিগগিরই তারা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তোলে। বিএলএ ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর দশকের গোড়ায় আত্মপ্রকাশ করে। বিএলএর নেতৃত্বে ছিলেন প্রবীণ বালুচ জাতীয়তাবাদী নেতা নবাব খায়ের বখশ মারির ছেলে বালাচ মারি।
২০০৬ সালে সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের নেতৃত্বে সরকার বিশিষ্ট বালুচ জাতীয়তাবাদী নেতা নবাব আকবর বুগতিকে হত্যা করার পর বিদ্রোহ তীব্রতর হয়। বছরের পর বছর ধরে বিএলএ পাকিস্তান থেকে বেলুচিস্তানের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি দল হিসেবে নিজেদের আলাদা করে তুলেছে। মধ্যপন্থি বালুচ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে কথা বললেও বিএলএ কখনও মধ্যম পন্থা অনুসরণ করেনি।
২০১০ সালে এই গোষ্ঠী তাদের আত্মঘাতী দল মাজিদ ব্রিগেড চালু করে, যা কয়েক বছর ধরে সুপ্ত ছিল। ২০১৮ সালে দলটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, যখন আসলাম বালুচ তাঁর নিজের ছেলেকে বেলুচিস্তানের দালবান্দিন শহরে কর্মরত চীনা প্রকৌশলীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পাঠিয়েছিল। এতে তিন চীনা নাগরিকসহ পাঁচজন আহত হয়, তবে আসলামের ছেলে ছাড়া আর কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএলএর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তরুণ ও সুশিক্ষিত সৈন্যদের তালিকাভুক্ত করার ক্ষমতা। বিশেষজ্ঞ আকবরের মতে, ‘তরুণ, শিক্ষিত যোদ্ধাদের নিয়োগ করা এখন আর কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। কারণ, এই গোষ্ঠী বালুচ তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যদিও এর কার্যক্রম বিতর্কিত।’ যদিও বিএলএর তহবিলের উৎসগুলো অস্পষ্ট; বিশ্লেষকরা একাধিক রাজস্ব উৎসের কথা বলেছেন। তার মধ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি, চোরাচালান ও মাদক পাচারের মতো অবৈধ কার্যকলাপ।
পাকিস্তান সরকার দাবি করে, ভারত বিএলএকে অর্থায়ন করে। কিন্তু আকবরের মতে, আফগানিস্তানে বছরের পর বছর কাটিয়ে বেশির ভাগ বিএলএ নেতৃত্ব পাকিস্তানে আগমন করেন। তাঁর মতে, সরকারের এসব দাবি হুবহু গ্রহণ করা কঠিন। বিশেষজ্ঞ আকবরের মতে, ‘প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে ভারতকে দোষারোপ করার প্রবণতা পাকিস্তানের রয়েছে। এ কারণে দৃঢ় প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের দাবি গ্রহণ করা কঠিন।’ ‘যদি সরকার ভারতীয় সমর্থনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারে, তবেই কেবল তাদের অভিযোগের গুরুত্ব রয়েছে। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, বিএলএর একটি শক্তিশালী তহবিলদাতা রয়েছে এবং এর যোদ্ধারা বিদ্রোহের জন্য বিশেষভাবে তৈরি উচ্চ পেশাদার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।’
আকবর বলেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা ও প্রাদেশিক সরকারের প্রতি ‘অসন্তোষ’-এ হতাশ জনসাধারণের মধ্যে বিএলএ তার প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করে।
পর্যবেক্ষক আকবরের মতে, ‘অনেকে প্রাদেশিক সরকার বিশেষত বেলুচিস্তানের জনগণের চেয়ে ইসলামাবাদের প্রতি বেশি অনুগত বলে মনে করে। কারণ এটি জোরপূর্বক গুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শক্ত অবস্থান নিতে অস্বীকার করে।’
আবিদ হোসেন: পাকিস্তানের ইসলামাবাদে আলজাজিরার ইংরেজি ডিজিটাল সংবাদদাতা; আলজাজিরা থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম