ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন কৃষক। বাবা কৃষি কাজ করতেন, বাবার পেশাতাই তিনি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের স্বাদ।
বাবার রেখে যাওয়া দশ বিঘা কৃষি জমির আয় দিয়ে পঁয়ত্রিশ বিঘায় পরিণত করেছেন। শুধু নিজেই কৃষি কাজ করে সফল হননি, এলাকার শতাধিক কৃষকের নানা আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান নির্ভর চাষাবাদে উদ্বুদ্ধকরণ এবং পরামর্শ দিয়ে চাষিদের কাছ ‘বাবু ভাই’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
মানিকগঞ্জের বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের তালিফাবাদ গ্রামের আব্দুল খালেক বাবু। গত একযুগে এ অঞ্চলের চাষাবাদের আধুনিকায়নে চাষিদের এক অনুপ্রেরণার নাম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তালিফাবাদ দক্ষিণ চকে চলতি মৌসুমে বিঘার পর বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন আব্দুল খালেক বাবু। চাষাবাদ করেছেন বেগুন, টমেটো, মূলা, ফুলকপিসহ নানা ধরনের সবজি। নিজের জমি দেখভালের সাথে গ্রামের চাষিদেরও দিচ্ছেন নানা পরামর্শ।
অন্যদের সাথে নিজেও জমিতে কাজ করছেন ‘বাবু ভাই’ (কালো সোয়েটার পরা)
তালিফাবাদ গ্রামের চাষি আব্দুল করিম বলেন, “দক্ষিণ চক এলাকায় বাপ-দাদার আমল থেকে লাল বা মাঘী সরিষার আবাদ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বৃষ্টি হলে ওই সরিষা পড়ে যেত, ফলনও কম হত। কোন রকম আবাদ হলেও লোকসান গুনতে হত। বিঘা প্রতি সরিষা হত দুই থেকে তিন মণ। এ সমস্যা সমাধানে গত এক যুগ আগে আব্দুল খালেক বাবু ভাই বারী-১৭ জাতের সরিষা আবাদ শুরু করেন। এ সরিষা আবাদ করে তিনি সফল হন। পরে এলাকার প্রায় সকল চাষিকেই তিনি এ বীজ সরবরাহ করেন এবং পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে এ এলাকায় সরিষা চাষে আমূল পরিবর্তন ঘটে। চাষিরা লোকসানের হাত থেকে বেঁচে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “বাবু ভাই এলাকার চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের ভুট্টা, মূলা, গাজর ও আখের বীজ সরবরাহ করায় আগের চেয়ে ফলন বেড়েছে।”
চাষি আব্দুর রশিদ বলেন, “বাবু ভাইয়ের কাছ থ্যাইক্যা বীছন (বীজ) নিয়া সবজির ফলন ভালো অইছে। কয়েক বছর ধইরা ওনার পরামর্শ নিয়া চাষবাষ করায় লোকসানে পড়তে অইনাই। চাষবাষের বিষয়ে বাবু ভাই নানান পরামর্শ দেন। এইসব পরামর্শে ফলন বাড়ছে।”
দেলোয়ার হোসেন দুলাল নামের আরেক চাষি বলেন, “উন্নত আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফলন পাব কিনা তা নিয়ে আমরা সংশয়ে থাকতাম। বাবু ভাইয়ের পরামর্শে চাষাবাদে সে সংশয় দূর হয়েছে। তার কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ পেয়ে আমরা সুফল পাচ্ছি।”
অন্য কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন ‘বাবু ভাই’
আব্দুল খালেক বাবু বলেন, “শিক্ষিত হলেই যে সরকারি চাকরি করতে হবে এমনটা কখনো ভাবিনি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে মাঠে কৃষি কাজ করতাম। লেখাপড়া শেষ করে চাকরির সুযোগ থাকলেও বাবার পেশা কৃষিতে মনোনিবেশ করি। নিজে আধুনিক চাষাবাদ শুরু করি, চাষিদের আধুনিক কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করি। আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করায় আমার চাষাবাদে ফলন বাড়ে, লাভও বাড়ে। এতে এলাকার চাষিদের মাঝে উৎসাহ বাড়ে, তারাও নানা পরামর্শ নিয়ে আধুনিক কৃষিতে অভ্যস্ত হচ্ছেন।”
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সমন্বয়কারী মো.
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আলম বলেন, “মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিস থেকে নানা পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়। সমাজের অনেক কৃষক অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জোগান। এসব কৃষকদের আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। যেন তার মাধ্যমে আরো কৃষকরা সফল হতে পারেন।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ষকদ র এল ক র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইন রেলের টিকিট বিক্রির সংবাদে সহজের ব্যাখ্যা ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ১৩ মার্চ প্রকাশিত ‘অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের নাগাল পায় না বহু মানুষ, লাভ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের’ শিরোনামের সংবাদের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন (যৌথ)। প্রতিষ্ঠানটি রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত।
সহজ ডটকম বলেছে, রেলের টিকিট পুরোপুরি অনলাইন হয়নি। এখন রেলের টিকিট অনলাইন ও কাউন্টারে একযোগে বিক্রি করা হয়। অনলাইনে টিকিট বিক্রির কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলো অনলাইন ও কাউন্টারে সমান সুযোগ দিয়ে বিক্রি করা হয়।
একটি টিকিট বিক্রির বিনিময়ে ২৫ পয়সা নেওয়ার কথা বলে দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারের এখন সাড়ে ছয় টাকা পাচ্ছে—এই তথ্যের বিরোধিতা করেছে সহজ। তারা বলেছে, কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সহজের কমিশন ও ফি অপরিবর্তিত আছে, যা দরপত্রে উল্লেখিত সব শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সহজ তাদের বক্তব্যে বলেছে, তারা দায়িত্ব নেওয়ার আগে ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রির জন্য বরাদ্দ ছিল। এখন ৬৫-৭০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়।
এ ছাড়া চুক্তি অনুসারে, রেলের বিভিন্ন স্টেশনে ৬০টি মনিটর স্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সহজ। তবে জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন হয়নি। ফলে এই বিষয়ে রেলের সঙ্গে কার্যক্রম চলমান আছে। চুক্তি অনুসারে, টিকিট বিক্রির জন্য বহনযোগ্য যন্ত্র (পিওএস) সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সহজ।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
রেলের টিকিট অনলাইন ও কাউন্টারে একযোগে ছাড়ার বিষয়টি ঠিক আছে। কিন্তু অনলাইন ও কাউন্টারের কোনটিতে কতটি টিকিট বিক্রি হবে, তা উল্লেখ নেই। এখানেই রেল কর্তৃপক্ষ সহজকে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এখন টিকিট ছাড়ার প্রথম আধা ঘণ্টার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায়। কাউন্টারে থাকে কেবল মাঝপথের কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের টিকিট। এ ছাড়া কাউন্টারে টিকিট বিক্রির বেলায় মোবাইলে ওটিপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটা কাউন্টারে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ এবং নিরুৎসাহিত করছে। প্রকারান্তরে এটা সহজের সুবিধা করে দিয়েছে।
প্রতি টিকিট ২৫ পয়সায় বিক্রি করবে—এই প্রস্তাব করার কারণেই সহজ অন্যান্য ঠিকাদারের তুলনায় দর প্রস্তাবে অনেক দূর এগিয়ে যায়। কৌশলে তারা বলেছিল বিজ্ঞাপন প্রচার করে ২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করবে। আদতে ২০ কোটি টিকিট ৫ কোটিতে বিক্রি করার ঘোষণা না দিলে কাজটি পেত না সহজ। কিন্তু সহজকে নিয়োগ দেওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ অনলাইনে টিকিট বিক্রি বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে শতকরা ৭৫ শতাংশ টিকিট থেকে সহজ সাড়ে ৬ টাকা আয় করার সুযোগ পায়, যা নিয়োগের শর্ত ও এবং চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। রেলের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে সহজ।
রেলওয়ে নিশ্চিত করেছে, সহজ দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০ শতাংশের কম টিকিট অনলাইনে বিক্রি হতো। সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে ৭১ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়। ১৪ মার্চ থেকে ঈদযাত্রায় শতভাগ টিকিট অনলাইনে বেচা হচ্ছে। এর আগের ঈদগুলোতেও শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।
সহজের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ তিন বছর পেরিয়ে গেছে। মনিটরে গ্রাহককে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করছে না। জিপিএস ট্র্যাকারও স্থাপন করেনি, যা চুক্তির লঙ্ঘন।