জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাসহ তাঁর সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। বাংলাদেশের বাইরে পালিয়ে থাকা অপরাধীদের ফেরাতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ করা যেতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক আইন ব্যবহার করবে কিনা– জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আলম সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার  ইঙ্গিত দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। 

প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে মো.

রফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ভারত সরকারকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কূটনৈতিক পত্রের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র আমরা পাঠিয়েছি।

কূটনৈতিক পত্রের জবাবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেছে কিনা– এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এখনও ভারত থেকে কোনো উত্তর পাইনি। তবে আমরা উত্তরের প্রত্যাশা করে যাব।’ 

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস মিশনের প্রতিবেদন প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে পাঠানো হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ এখন সারাবিশ্ব জানে। আলাদা করে ভারতকে এটি দেওয়ার প্রাসঙ্গিকতা এখানে নেই।

রফিকুল আলম বলেন, ‘প্রতিবেদনের যে অংশটুকু জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়েছে তা যে কোনো মানুষের মনে নাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপের পর সিদ্ধান্ত নেব।’

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে হাইকমিশন তার কর্মপরিধি শেষের পর ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা দিল্লিতে হাইকমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে ভারতের সম্মতি চেয়েছি। এতে সময় লাগতে পারে। সম্মত হওয়ার জন্য সুর্নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। আমরা উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি।’

বাংলাদেশের পাঠ্যবই ও জরিপ অধিদপ্তরে মানচিত্রে অরুণাচল ও আকসাই চীন এবং তাইওয়ান ও হংকং ইস্যুতে চীনের আপত্তি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় চীনের দূতাবাস গত ২৮ নভেম্বর এক কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে ব্যবহৃত মানচিত্র, তথ্যের অসংগতি এবং সার্ভে অব বাংলাদেশে উল্লিখিত একটি সীমারেখার বিষয়ে আপত্তি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে। ওই বিষয়ের অগ্রগতির ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক নিয়ে মুখপাত্র বলেন, ওমান ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে। সফরে ওমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা এবং সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতসহ অন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।  

মুখপাত্র জানান, কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী আহমেদ হুসেন গত ৯ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে আসেন। সফরকালে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকগুলোতে দু’দেশের বিদ্যমান অংশীদারিত্ব আরও সুদৃঢ় করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সক্ষমতা বাড়ানো, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়। কানাডার মন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কানাডার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পক্ষে কানাডার অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দেন। এ ছাড়া, শ্রম খাতের উন্নয়ন, আর্থিক খাতে অগ্রগতি এবং বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা আইনের  চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়; যা ভবিষ্যতে কানাডিয়ান বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে।

তিনি জানান, জুলাই বিপ্লবে আহতদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে গুরুতর আহত রোগীদের বিভিন্ন দেশে তাদের উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে পাঠাতে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো নিরলস পরিশ্রম করে এই প্রক্রিয়ায় দ্রুততার সঙ্গে ভিসা পাওয়া নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি মিশনগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। 

রফিকুল আলম বলেন, লিবিয়ার সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর জাওয়াইয়া থেকে অবৈধভাবে ইউরোপের উদ্দেশে গত সপ্তাহে ছেড়ে যাওয়া একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে দুর্ঘটনায় পড়ে। জীবিত উদ্ধার  ২ বাংলাদেশিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় বির আল গানাম জেলখানায় রাখা হয়েছে। ওই ঘটনায় এখনও ৭ বাংলাদেশি নিখোঁজ আছেন।

তিনি বলেন, ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার মারিয়া ত্রিপদি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আগামী ১৮-২০ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। সফরকালে প্রধান উপদেষ্টাসহ পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ইইউভুক্ত কোনো দেশ থেকে প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সফরও এটি। সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিবাসন-সংক্রান্ত জটিলতাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর সমাধান, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র র ব র ফ উপদ ষ ট সরক র র ক টন ত র জন য পর য য়

এছাড়াও পড়ুন:

স্ত্রী-সন্তান-জামাতাসহ পাপনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, স্ত্রী মিসেস রোকসানা হাসান, মেয়ে সুনেয়া রহমান ও রুশমিলা রহমান, ছেলে রাফসান হাসান এবং জামাই রাকীন আল-মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

রবিবার (১৬ মার্চ) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “বিসিবির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন এবং তার পরিবারের আরো ৫ সদস্যের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছেন।”

দুদকের পক্ষে উপ-পরিচালক সাইদুজ্জামান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছিলেন।

আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য, প্রাক্তন মন্ত্রী এবং  বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সরকারি অর্থ আত্মসাত করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নাজমুল হাসান পাপন ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে (কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকায়) এবং দেশের বাইরে-যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা  দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধানকাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।

ঢাকা/মামুন/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ