জার্মানির মিউনিখ শহরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাড়িচাপায় অন্তত ২৮ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গাড়ি নিয়ে হামলা চালানো সন্দেহভাজন ব্যক্তি আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীপ্রত্যাশী। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিলম্ব না করে জার্মানি থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামীকাল শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ বিশ্বের শীর্ষ রাজনীতিবিদেরা অংশ নেবেন। তা ছাড়া আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জার্মানির জাতীয় নির্বাচন। এ পরিস্থিতিতে আজকের ‘হামলাকে’ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

বাভারিয়া রাজ্যের রাজধানী শহর মিউনিখের এ ঘটনাকে ‘হামলা’ বলে মনে করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্কাস সোডার।

এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর ম্যাগডেবুর্গ শহরে ক্রিসমাস মার্কেটে গাড়িচাপার এক ঘটনায় এক শিশুসহ ছয়জন মারা যান।

আজ ঘটনার পরপরই পুলিশ গাড়িটির দিকে গুলি ছুড়ে হামলাকারীকে থামায় এবং গ্রেপ্তার করে। হামলাকারী আফগানিস্তান থেকে আসা ২৪ বছর বয়সের একজন শরণার্থীপ্রত্যাশী।

মিউনিখের পুলিশ জানিয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের কেন্দ্রস্থল ম্যাক্সভোরস্টাডট এলাকায় জার্মানির শ্রমিক সংগঠন ‘ভেরডি’ একটি মিছিল নিয়ে রাজপথ অতিক্রম করছিল। প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মিছিলটির পেছনে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের একটি গাড়ি ছিল। একপর্যায়ে আচমকা একটি গাড়ি পুলিশের গাড়িকে পাশ কাটিয়ে পেছন থেকে শ্রমিকদের মিছিলে ঢুকে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডের স্পিগেলের তথ্য অনুযায়ী, গাড়ি নিয়ে হামলাকারী ব্যক্তির নাম ফরহাদ। তাঁকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কাবুলে জন্মগ্রহণকারী ফরহাদ ২০১৬ সালের শেষের দিকে জার্মানিতে আসেন। ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি তাঁর শরণার্থীর আবেদন নাকচ করে। কিন্তু তাঁকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। তিনি সর্বশেষ মিউনিখ শহরে বসবাসের জন্য নিবন্ধিত ছিলেন। হামলার আগে তিনি তথাকথিত ইসলামপন্থী পোস্ট করেছিলেন।

গত বছরের ২০ ডিসেম্বর তালেব আল-আবদুল মোহসেন নামের একজন সৌদি নাগরিক ম্যাগডেবুর্গ শহরের ক্রিসমাস মার্কেটে দর্শনার্থীদের গাড়িচাপা দেন। সে ঘটনায় একটি ৯ বছরের শিশুসহ ছয়জন প্রাণ হারান। আহত হন ২০৫ জন।

আরও পড়ুনজার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে ‘হামলা’, দেশজুড়ে শোকের ছায়া২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ঘটনার পর ৫০ বছর বয়সী তালেব আল-আবদুল মোহসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ২০০৬ সালে শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে আসেন। পরে ২০১৬ সালে জার্মানিতে তাঁকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আজকের ঘটনায় বাভারিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্কাস সোডার এ হামলায় আহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন বলেন, ‘এটি শুধু ভয়াবহ ঘটনা নয়, এটি খুব বেদনাদায়ক।’

বাভারিয়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াোখিম হেরম্যান বলেন, ‘সন্দেহভাজন যে আফগান ব্যক্তি গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে, তাঁর উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শরণ র থ আফগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্কে আধিপত্য

বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের ভেতর দিয়ে একজন মানুষ বেড়ে ওঠে। প্রথমে সে আসে তার পরিবারের সান্নিধ্যে। ধীরে ধীরে সে তার আশপাশের পরিবেশ এবং চারপাশে আবর্তিত আপন মানুষগুলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে। তারপর শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব এবং নিজস্ব কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে সে বেড়ে উঠতে থাকে। তার মধ্যে বিরাজমান বৈশিষ্ট্য দিয়ে সে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় অনুশাসন ও হৃদয়ঘটিত সম্পর্কগুলো গড়ে তোলে। একসময় সে সম্পর্কগুলোতে আসে নানা ধরনের জটিলতা। আসতে পারে আধিপত্যের মতো নিচু মানসিকতারও প্রভাব। এতে সম্পর্কে নানা ধরনের তিক্ততা সৃষ্টি হয়।
সম্পর্কে আধিপত্যের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামালের সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, আধিপত্য শব্দটিকে প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে। এটি একটি ডমিনেটিং ক্যারেক্টার। কিছু ব্যক্তিত্ব থাকে এ ধরনের। এ ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সে নিজেরটা সবচেয়ে বেশি বুঝবে। নিজের দম্ভ, অহংকার, দক্ষতা এবং নিজে যা বলবে তাই ঠিক মনে করে। তারা নিজের দোষ দেখে না। 
সম্পর্ক বিষয় নিয়ে তিনি জানান, সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাডজাস্ট করা, অ্যাডাপটেশন করা, অ্যাকসেপ্ট করা। আধিপত্যবাদী বা কর্তৃত্ববাদ চরিত্রে এই বৈশিষ্ট্য থাকা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, আধিপত্য সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি করে। এটি হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে এবং নানা সামাজিক ব্যক্তির সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। একজন যদি কোনো সম্পর্কে আধিপত্য দেখাতে থাকে তাহলে অপর পক্ষের মানুষটি খুব আহত হন। তিনি বলেন, যে কোনো সম্পর্কে কোনো সমস্যা দেখা দিলে কথা বলতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসবে। অন্যের দোষ দেখা বন্ধ করে গুণাগুণগুলো দেখলে আধিপত্য অনেকটা কমে যাবে। সবকিছুতে একটা ডেমোক্রেটিভ ভিউ থাকতে হবে। ডা. মোহিত কামালের মতে, গণতান্ত্রিক মতামত বা অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে যদি আমরা কাজ করি তাহলে পারিবারিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ বিষয়টি আর জটিল আকার ধারণ করবে না। 
আধিপত্য বা কর্তৃতবাদ বিষয়টি যাতে চরিত্রে ডেভেলপ না করে সে জন্য কিছু বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন মোহিত কামাল। তিনি বলেন, পরিবারে একটি শিশু যখন বোধের পর্যায়ে আসে তখন থেকে তার মতামত নেওয়া জরুরি। যেমন মা-বাবা তাঁর সন্তানকে বলতে পারেন আমরা তোমার জন্য একজন শিক্ষক রাখব, তোমার কোনো চয়েজ আছে কি? এ ধরনের মতামতে অংশ নিতে পারলে তার আত্মবিশ্বাসের লেভেল অনেক বেড়ে যাবে। নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে ভালো ধারণা হবে। তার ভেতরে একটি আইডেনটিটি তৈরি হবে। বিশ্বাস বাড়বে। অন্যকে গুরুত্ব দিতে হয় সেটি সে পরিবার থেকে শিখবে। 
এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, কাউকে নিচু করে দেখছে বা বিশ্বাস করতে পারছে না বলে সম্পর্কে ধীরে ধীরে আধিপত্য ঢুকে যাচ্ছে। মা-বাবার ডমিনেটিং প্যারেন্টিং ভবিষ্যতে একজন তরুণ-তরুণীকে কর্তৃত্ববাদিতার দিকে ঠেলে দেয়। পরিবারে মা-বাবা বলেন আমি যা বলব তাই চূড়ান্ত। তাই তোমাকে মেনে নিতে হবে। আমি ঠিক। আমার চেয়ে তুমি কি ভালো বোঝ? এ ধরনের আচরণ একজন ব্যক্তিকে চারিত্রিকভাবে দুর্বল করে তোলে। 
ডা. মোহিত কামালের মতে, যখন একজন সন্তান বড় হচ্ছে তার যোগ্যতা কী? তার অদক্ষতা কী? তার ভুলগুলো কী? তাকে বুঝতে দিতে হবে। সে তখন থেকে অদক্ষ থাকলে দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবে। যোগ্যতাকে আরও শানিত করার চেষ্টা করবে। আইডেনটিটি নিজেই গড়ে তুলবে। তাহলে পরবর্তী সময়ে সে জীবন-সংগ্রামের চলার উপাদান পাবে। 
মনে রাখবেন, আধিপত্য চরিত্রটি ধারণ করলে বন্ধু পাওয়া যাবে না, নিজে ভালো বন্ধু হতে পারবেন না। এ সমস্যা থাকলে তা দাম্পত্য জীবনেও প্রভাব ফেলে। কর্তৃত্ববাদ মনোভাব অন্যদের দমিয়ে রাখতে পছন্দ করে। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ