প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তাঁর সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করবে। এটা এ বছরের ডিসেম্বরেও হতে পারে। বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে এক অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।

বাসস জানায়, সিএনএনের সাংবাদিক বেকি অ্যান্ডারসনের সঞ্চালনায় এই অধিবেশন হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ড.

ইউনূস বলেন, সরকার ১৫টি বিভিন্ন খাতের জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ, সংবিধান, নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার কমিশনগুলো প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তারা বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ করছে। এখন ঐকমত্য গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। যেসব সুপারিশের বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করবে, সেগুলো নিয়ে একটি ‘সনদ’ তৈরি করা হবে। সেগুলো বাস্তবায়ন করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া হবে। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমরা একটু একটু করে সব গুছিয়ে নিচ্ছি। অর্থনীতি, সমাজ, প্রশাসন সবকিছু ভেঙে পড়েছিল। আমাদের কাজ এই সবকিছু পুনর্গঠন। যেমন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুরোপুরি ধসে গিয়েছিল। ব্যাংকগুলো থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। আমাদের রিজার্ভ তলানিতে চলে গেছে। প্রথমত অর্থনীতি, দ্বিতীয়ত আইনশৃঙ্খলা, এর পর প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করতে হবে।

নির্বাচন শেষে আরও কিছু সময় নেতৃত্বে থাকার ইচ্ছা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, এটা আগেও স্পষ্ট করে বলেছি, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আমি যে কাজে ছিলাম, সেখানেই ফিরে যাব। কারণ, আমি সে কাজেই আনন্দ পাই।
এই সম্মেলনে অংশ নিতে বুধবার রাতে অধ্যাপক ইউনূস দুবাই পৌঁছেছেন।

আমিরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবদুল রহমান বিন মোহাম্মদ আল ওয়াইস সাক্ষাৎ করেছেন। বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটের ফাঁকে তিনি সাক্ষাৎ করেন। বার্ষিক এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার উপস্থিতি এই সমাবেশকে আরও উজ্জ্বল করেছে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ায় সে দেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান। বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম র ত র ইউন স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুহাম্মদ ইউনূস ও ইলন মাস্কের মধ্যে আলোচনা, ‘আসছে’ স্টারলিংক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্পেসএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং টেসলা ও এক্স-এর মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ভবিষ্যতে সহযোগিতার সমূহ দুয়ার খুলতে এবং বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করতে তাদের মধ্যে বিস্তারিত আপাল হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে অধ্যাপক ইউনসূ ও ইলন মাস্কের মধ্যে ভার্চুয়ালি এই আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই আলোচনার বিষয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন। 

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

সহিংসতা-হানাহানি যেন না হয়, সজাগ দৃষ্টি রাখুন: প্রধান ‍উপদেষ্টা

পোস্ট লেখা হয়েছে, ইলন মাস্কের সঙ্গে বৈঠকের সময় মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকার ইস্যুগুলোর জন্য বাংলাদেশের উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশের পক্ষে এসডিজির প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ। ইলন মাস্কের সঙ্গে ছিলেন স্পেস এক্স-এর পক্ষে গ্লোবাল এনগেজমেন্ট অ্যাডভাইজার লরেন ড্রেয়ার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড গ্রিফিথস।

ভিডিও লিংকে কথোপকথনের সময় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইলন মাস্ক স্টারলিংকের স্যাটেলাইট যোগাযোগের রূপান্তরমূলক প্রভাবের ওপর জোর দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোগী যুবক, গ্রামীণ ও দুর্বল নারী এবং প্রত্যন্ত সম্প্রদায়ের জন্য তার স্টারলিংক ইন্টারনেটের সুবিধাগুলো তুলে ধরেন ইলন মাস্ক।

তাদের আলোচনায় গুরুত্ব পায়- উচ্চগতির অথচ কম খরচের ইন্টারনেট সংযোগ বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরে কীভাবে সমন্বয় ঘটাতে পারে, সেই বিষয়টি। একই সঙ্গে তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন ঘটিয়ে অনুন্নত অঞ্চল এবং লাখ লাখ প্রান্তিক মানুষ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখতে পারে, সে বিষয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

আলোচনার সময় নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোতে স্টারলিংকের সংযোগ ঘটলে লাখো মানুষের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং বিশ্বব্যাপী দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সংহত করবে।

শফিকুল আলম লিখেছেন, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে প্রযুক্তি-চালিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মাস্কের সঙ্গে কাজ করার জন্য তার উৎসাহ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ইউনূস।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‍স্টারলিংক গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণ ফোনের একটি সম্প্রসারণ হবে, যা গ্রামের নারী ও যুবকদের বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করার পথপ্রদর্শক হবে। তারা বিশ্বব্যাপী নারী ও শিশু এবং বিশ্ব উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে।

এই আলোচনার সময় ইলন মাস্ক গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ মডেলের প্রশংসা করেন; দারিদ্র্য বিমোচনে এর বৈশ্বিক প্রভাব স্বীকার করে অধ্যাপক ইউনূসের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

টেসলা মোটরসের প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক বলেন, তিনি বহু বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণ ভিলেজ ফোনের কাজের সঙ্গে পরিচিত। 

মাস্ক বলেন, “স্টারলিংকের মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলো কাজে লাগান গেলে বাংলাদেশে উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরো এগিয়ে যাবে।”

জাতীয় উন্নয়নের জন্য অধ্যাপক ইউনূস স্টারলিংক পরিষেবার সম্ভাব্য যাত্রা শুরু করার জন্য ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন তিনি।

আমন্ত্রণের জবাবে মাস্ক বলেন, “আমি এটির জন্য অপেক্ষা করছি।"

শফিকুল আলম পোস্টে লিখেছেন, এই সম্পৃক্ততা বাংলাদেশে উন্নত স্যাটেলাইট সংযোগ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং সারা দেশে উদ্ভাবনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

উভয় পক্ষই এই উদ্যোগের দ্রুত অগ্রগতি ঘটাতে সম্মত হয়েছে এবং তারা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ এগিয়ে নিতে রাজি হয়েছেন, লিখেছেন প্রেস সচিব।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ