ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ এজাজ। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ডিএনসিসির প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন তিনি।

ডিএনসিসি প্রশাসক গুলশান নগরভবনে তার কার্যালয়ে মহাখালী কড়াইল বস্তিতে বসবাসকারী নিম্ন আয়ের ও হরিজন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে সভা করেন। সভায় ডিএনসিসির আওতাধীন বস্তিতে বসবাসকারী নিম্ন আয়ের ও হরিজন সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।

আরো পড়ুন:

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমাধানে ৩ উপদেষ্টা ও মেয়রের খাল পরিদর্শন

খুলনায় জনদুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার প্রতিবাদ বিএনপির

সভায় ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অকুতোভয় ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমাদের বৈষম্যহীন নগর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে হবে। আমি একটি ন্যায্য শহর বা নগর কল্পনা করি। জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট হচ্ছে বৈষম্য দূর করার স্পিরিট।ঢাকার বাসিন্দাদের মাঝে নাগরিক জীবনের বৈষম্য দূর করার কাজ হবে আমার অগ্রাধিকার। আমি সবাইকে নিয়ে এই পরিবর্তনের কাজ করতে চাই।”

তিনি আরো বলেন, “সব অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে একটি ন্যায্য নগর গড়তে চাই। আমি নিশ্চিত করতে চাই নগরের সবচেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষটিও তার নাগরিক সেবা পাবে। আমি বিশ্বাস করি নগরের সবার জন্য প্রাপ্য নাগরিক সেবা নিশ্চিত করাই জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট।”

এর আগে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দুপুরে রায়েরবাজার বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের গণকবর জিয়ারত করেন।

কবর জিয়ারত শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বিকেলে গুলশান নগর ভবনে ডিএনসিসির সব বিভাগীয় প্রধান এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডিএনসিসির সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ে সভা করেন। সভায় ডিএনসিসির প্রশাসক ডিএনসিসির কবরাস্থানগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার এবং কবরাস্থানে লাইটগুলো সচল করার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।

এ সময় রায়েরবাজার কবরাস্থানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের কবরগুলো নির্দিষ্ট করতে নামফলক স্থাপনের নির্দেশনা দেন তিনি।

ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা শেষে তার কার্যালয়ে মহাখালী কড়াইল বস্তিতে বসবাসকারী নিম্ন আয়ের ও হরিজন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে সভা করেন ডিএনসিসির প্রশাসক।

সভায় অন্যান্যের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.

মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলম এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ঢাকা/এএএম/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এসস স ন ম ন আয় র

এছাড়াও পড়ুন:

সেচ নিয়ে দ্বন্দ্বে চাষি-নলকূপ মালিক

সাদুল্লাপুরে বোরো জমিতে সেচের মূল্য নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন কৃষক ও নলকূপ মালিকরা। একপক্ষ বলছেন সেচ বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। অন্যপক্ষের দাবি পাঁচ বছর আগের মূল্য তালিকা মেনে সেচ সুবিধা দিলে লোকসান গুনতে হবে তাদের। তারা তালিকা হালনাগাদের দাবি জানিয়েছেন। দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ফসল আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার জন্য সরকারিভাবে ২০২০ সালে সর্বশেষ সেচ চার্জ নির্ধারণ হয়। সেচ কমিটি ৩৩ শতাংশে (এক বিঘা) জমি ধরে  মূল্য তালিকা নির্ধারণ করেন। রসুলপুর, নলডাঙ্গা, দামোদরপুর, কামারপাড়া, জামালপুর, বনগ্রাম, ভাতগ্রাম, ফরিদপুর ও ক্ষোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নে প্রতি বিঘায় সেচ চার্জ ১ হাজার ২০০ টাকা। লাল মাটির খিয়েরি এলাকার হওয়ায় ধাপেরহাট ও ইদিলপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৮০০ টাকা সেচমূল্য নির্ধারণ করা হয়। জয়েনপুর গ্রামের কৃষক মোজাফ্‌ফর হোসেন এবার নলকূপ মালিককে বিঘাপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছেন। প্রতি বিঘায় সেচ মূল্য ১ হাজার ৮০০ টাকা হলেও ইসলামপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বিঘাপ্রতি ৪ হাজার ৩০০ টাকায় চুক্তি করেছেন নলকূপ মালিকের সঙ্গে।
কৃষকদের অভিযোগ, জমিতে সেচ নিতে নলকূপ মালিকদের কাছে জিম্মি তারা। নলকূপ মালিকদের চাহিদামতো অর্থ না দিলে সেচ মেলে না সময়মতো। বাধ্য হয়ে তাদের সরকার নির্ধারণ করা মূল্যের দ্বিগুণের বেশি টাকা দিতে হয়। এতে ফসল উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এ সসম্যা নিরসনে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় সেচ নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে বলছেন তারা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও স্থানীয় ফিলিং স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে ইরি-বোরো সেচ পাম্পের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ছিল ৪ টাকা ১৬ পয়সা ও প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ছিল ৬৫ টাকা ২০ পয়সা। বর্তমানে বিদ্যুতের মূল্য বেড়ে ৫ টাকা ২৫ পয়সায় ও ডিজেলের মূল্য ১০৫ টাকা ৩০ পয়সা বেড়েছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রতি লিটার ডিজেলে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা ১ পয়সা। 
কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের নলকূপ মালিক মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার সেচের বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করেনি। পাঁচ বছর আগের মূল্য তালিকায় সেচ দিলে, নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে। তাই হিসাবনিকাশ করেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একই কথা বলেছেন জয়েনপুর গ্রামের সেচ পাম্পের ম্যানেজার মোস্তাফিজার রহমান।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। এসব মাঠে সেচ কাজে ব্যবহার হবে ৬ হাজার ৭৩৬টি নলকূপ। এর মধ্যে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ ১১৬টি, অগভীর নলকূপ ১ হাজার ৩০৫টি ও এলএলপি নলকূপ ২৫০টি। সৌরবিদ্যুৎচালিত নলকূপ ১৪টি। ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপ ৫ হাজার ৫১টি। বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় মালিকরা এসব নলকূপ দেখভাল করে।
নলকূপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘সেচ কমিটি’ হালনাগাদ সেচ চার্জ নির্ধারণ না করলে কৃষকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়তেই থাকবে নলকূপ মালিকদের। তাই বিষয়টি নিয়ে সেচ কমিটিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 
এদিকে সেচের ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব এড়াতে নিজেই বৈদ্যুতিক মোটর কিনেছেন বলে জানান কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান। তবে একই গ্রামের বর্গাচাষি আসাদুল হক সরকারের সেচ চার্জ নির্ধারণের বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তাই নলকূপ মালিক যেভাবে ভাড়া চান, সেভাবেই পরিশোধ করেন। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, নলকূপ মালিকরা কৃষকদের সঙ্গে বসে বাড়তি অর্থ নিলেই সমস্যা নেই। কিন্তু তারা সরকারি মূল্য তালিকার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি চার্জ নিচ্ছেন। প্রতি বিঘায় সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে এলাকাভেদে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এভাবে টাকা নিলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 
উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, জরিপ কার্যক্রম চালানোর পর সেচের হালনাগাদ মূল্য তালিকা নির্ধারণ করা হবে। আগামী সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে সেচ মালিকদের। 
সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে না থাকায় এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় সেচ মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। কৃষকরা দেশের প্রাণ। তাদের সুবিধা আগে দেখতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ