রোজায় ডিমের দাম আরও কমবে, ধারণা পোলট্রি খাতের ব্যবসায়ীদের
Published: 13th, February 2025 GMT
পবিত্র রমজানে ডিমের দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, সরকার ডিমের খুচরা মূল্য ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করেছে, তবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১০ টাকায়। রমজানে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এ লোকসান সামাল দেওয়া তৃণমূল খামারিদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাঁদের সহায়তায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বিল্ডিং আ রেজিলিয়েন্ট পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ: ইভল্যুশন, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন বিএবি সভাপতি মাহাবুবুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভ স্টক জার্নালিস্ট ফোরাম (এফএলজেএফ) সেমিনারটির আয়োজন করে।
সেমিনারে ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) প্রতিনিধিরা জানান, ঢাকার একটি হোটেলে ১৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোলট্রি সেমিনার। আর ২০ ফেব্রুয়ারি পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ১৩তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো শুরু হবে। এই মেলা সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
অতিবৃষ্টি, খরা, রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ এবং বাজারদরের অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের কারণে ২০২৪ সাল ছিল পোলট্রি–শিল্পের জন্য একটি দুর্যোগপূর্ণ বছর। অসংখ্য খামারি নিঃস্ব হয়েছেন। কয়েকটি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানও তাদের ব্যবসা সংকুচিত করতে বাধ্য হয়েছে। এমন তথ্য দিয়ে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, স্বল্প সময়ে মানসম্মত প্রোটিন উৎপাদন করতে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। খামার ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের পাশাপাশি গবেষণা বাড়াতে হবে। এ জন্য সরকারকে এ খাতে বিশেষ নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মসিউর রহমান বলেন, আসন্ন রমজান মাসে ডিম-মুরগির দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবারও রোজায় ঢাকায় খামারের দামে ডিম-মুরগি বিক্রি করবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের পর পোলট্রি খাদ্যের উৎপাদন বেশ কিছুটা কমে গিয়েছিল। গত বছর উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। আশা করা যায়, চলতি বছরে আরও বাড়বে। অর্থাৎ ডিম-মুরগির উৎপাদনও বাড়বে।’
ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে খামারি ও উদ্যোক্তাদের ঝরে পড়া ঠেকাতে হবে।
এফএলজেএফ সভাপতি মুন্না রায়হানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম, আরটিভির হেড অব নিউজ ইলিয়াস হোসেন এবং এফএলজেএফের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র র রহম ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
'দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই'
‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'
নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গ্যালো। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’
লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'
শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে।