সুন্দরবন রক্ষায় বাগেরহাটের রামপালে অবস্থিত ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র’ (রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র) বাতিলসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ওই দাবিতে খুলনা নগরে ‘নাগরিক পদযাত্রা’ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল কৃষি-শিল্প-পাট ও পরিবেশ রক্ষায় গঠিত নাগরিক কমিটি। পরে একই দাবিতে খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

নাগরিক কমিটির দাবিগুলো হচ্ছে সুন্দরবন ধ্বংসকারী ‘রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র’ অবিলম্বে বন্ধ করা; বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয় বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা; সুন্দরবন বাঁচাতে এখনই বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভারী শিল্প স্থাপনা নিষিদ্ধসহ পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) নীতিমালার বাস্তবায়ন; সুন্দরবনে যারা বিষ দিয়ে মাছ ধরছে, দ্রুত তদন্ত করে সেই সব অপরাধীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা ও খুলনায় একটি পরিবেশ আদালত স্থাপন করা; সুন্দরবন ও সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করতে পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করা; সুন্দরবন রক্ষায় যুগোপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক ‘সুন্দরবন রক্ষায় বিশেষ আইন’ তৈরি করা এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা।

১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’ উপলক্ষে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে নাগরিক পদযাত্রা শুরু হয় নগরের শহীদ হাদিস পার্ক থেকে। ওই পদযাত্রা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। ওই কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ওই কমিটি।

সমাবেশে বক্তব্য দেন নাগরিক কমিটির সভাপতি কুদরত-ই-খুদা ও সাধারণ সম্পাদক সুতপা বেদজ্ঞ। সমাবেশ শেষে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা এবং খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দোর মাধ্যমে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সুন্দরবনের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে প্রকৃতিবিধ্বংসী রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে আশপাশে গড়ে উঠেছে ভারী শিল্পকারখানা। নদীতে বিষ ঢেলে শিকার করা হচ্ছে মাছ। পর্যটকেরা প্লাস্টিকসহ নানা বর্জ্য বন ও বনসংলগ্ন নদীতে ফেলছে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নজরদারি যথেষ্ট নয়। এভাবে চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতেই সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে, সেই সঙ্গে তলিয়ে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন কৃষিজমি ও বসতভিটা।

ইতিমধ্যে এ ধরনের আলামত শুরু হয়েছে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বনের উপকূলবর্তী বেশ কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রতিটি জলোচ্ছাস ও ঘূর্ণিঝড়ের পর কিছু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শহরমুখী হতে বাধ্য হচ্ছে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বহুল আলোচিত পরিবেশবিধ্বংসী রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হওয়ার পর যান্ত্রিক ত্রুটি ও কয়লাসংকটে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ বার বন্ধ হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে মাছ থাকলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় নদীতে মাছ কমতে শুরু করেছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কারণে চারণভূমির পরিমাণ কমে গেছে, এতে গবাদিপশু পালন কঠিন হয়ে পড়েছে। জীবিকার একটি বড় ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে গেছে, বাধ্য হয়ে দূরদূরান্তে কাজে যেতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।

স্মারকলিপি পেশ করার সময় কৃষি-শিল্প-পাট ও পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক কমিটির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মহসীন, মনোজ দাশ, গাজী নওশের আলী, তসলিমা খাতুন, সহসভাপতি এস এ রশীদ, মুনীর চৌধুরী সোহেল, মো.

মোজাম্মেল হক খান, মাহফুজুর রহমান মুকুল, যুগ্ম সম্পাদক এস এম চন্দন, কোষাধ্যক্ষ এস এম সোহরাব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র স ম রকল প উপদ ষ ট পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

সাড়ে ২৫ লাখ টাকায় অপহৃত ৯ জেলে মুক্ত, ফেরেনি ৬ জন

বঙ্গোপসাগরের চিসখালী থেকে ট্রলারসহ ১৫ জেলেকে অপহরণের ১৭ দিন পর মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে নয়জনকে মুক্তি দিয়েছে বনদস্যু মজনু বাহিনীর সদস্যরা।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় তাদের জঙ্গল থেকে উপরে উঠিয়ে দিয়ে যায় বনদস্যু মজনু বাহিনীর সদস্যরা। জেলেরা বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বাড়িতে পৌঁছায়।

গত ২৭ জানুয়ারি ভোরে সুন্দরবনের ডাকাত আব্দুল আলমি ওরফে দয়াল বাহিনীর সদস্যরা সুন্দরবনের দুবলার চরে নিরীহ জেলেদের উপর আক্রমণ করে। এ সময় জেলেরা আত্মরক্ষার্থে ডাকাতদের প্রতিহতের চেষ্টা করে এবং একইসঙ্গে দুবলার চরের কোস্টগার্ড স্টেশনে সাহায্য চেয়ে ফোন করে। হাতাহাতির একপর্যায়ে জেলেরা একটি বন্দুক ও ৩৬ রাউন্ড গুলিসহ তিন বনদস্যুকে আটক করে। পরে অস্ত্র ও গুলিসহ তাদের সুন্দরবনের কোস্ট গার্ডের কাছে সোপর্দ করে। কিন্তু এ সময় ডাকাতরা সেখান থেকে ১৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়।

আরো পড়ুন:

সুন্দরবনে বাঘের মুখ থেকে জীবিত উদ্ধারের লোমহর্ষক ঘটনা

হরিণের মাংস জব্দ, শিকারি চক্রের ৩ সদস্য শনাক্ত

মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা জেলেদের মধ্যে সাত জনের বাড়ি আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নে। একজনের বাড়ি শ্যামনগরে ও আরেক একজনের বাড়ি খুলনায়। 

ফিরে আসা জেলেরা হলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আজাহারুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, হাফিজুর রহমান, শাহীনুর আলম, রাসেল, শাহাজান ঢালী, নুরে আলম এবং শ্যামনগর উপজেলার শাহ্ আলম। একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে, মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় ছয়জন জেলে বনদস্যু মজনু বাহিনীর কাছে আটক রয়েছে। তাদের মধ্যে আশাশুনির চাকলা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, একই গ্রামের অরাফাত হোসেন ও শাহাজান গাজী।

অপহৃত চাকলা গ্রামের শাহাজান গাজীর স্ত্রী নাজমা খাতুন জানান, স্বামী বাড়ি আসছে খবর পেয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে বেড়িবাঁধের উপর বসে ছিলেন। প্রতাপনগরের সাতজন আসলেও চাকলা গ্রামের তিনজন ফিরে আসেনি। এত টাকা তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বর গোলাম রসুল জানান, মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার অর্থাৎ মোট প্রায় ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে নয়জনকে মুক্তি দিয়েছে ডাকাতরা। বাকি ছয়জনের মধ্যে আমার গ্রামের তিনজন রয়েছে। মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় তাদের এখনো জিম্মি করে রেখেছে ডাকাতরা।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী তার ইউনিয়নের সাতজন জেলে ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বাকিদের কাছে নৌকা থাকায় এবং মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ না হওয়ায় ডাকাতরা তাদের ছাড়েনি।
 

ঢাকা/শাহীন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে অপহরণের শিকার ১৫ জেলের মধ্যে ১০ জেলের ২৮ লাখ টাকায় মুক্তি
  • সাড়ে ২৫ লাখ টাকায় অপহৃত ৯ জেলে মুক্ত, ফেরেনি ৬ জন
  • শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশন ডে উদ্‌যাপন