দুদকের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকের কারাদণ্ড, ৮৭ কোটি টাকা জরিমানা
Published: 13th, February 2025 GMT
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সিলেটে থাকা তাঁর স্ত্রী, শ্যালক ও মামাকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সিলেটের বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদাৎ হোসেন প্রামানিক এ রায় ঘোষণা করেন। দুদক সিলেটের আদালত পরিদর্শক মো.
দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হচ্ছেন সিলেটের শাহজালাল উপশহর এলাকার স্প্রিং গার্ডেনের বাসিন্দা মিসবাহ উদ্দিন ওরফে রবিন চৌধুরী। অন্য তিনজন হলেন তাঁর স্ত্রী শাহিদা বেগম, বিয়ানীবাজার উপজেলার ছোটদেশ গ্রামের বাসিন্দা মিসবাহর মামা আবদুল খালেক ওরফে মাখন উদ্দিন এবং মিসবাহর শ্যালক ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার উত্তর রায়গড় গ্রামের রিপন সিরাজ। রায় ঘোষণা শেষে মিসবাহ উদ্দিনসহ তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শাহিদা পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৬ জুন যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের এক চিঠির ভিত্তিতে মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরীর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, মিসবাহ লন্ডনে একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক থাকাকালে ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে নিজ নামে মোট ১৩টি জাল মর্টগেজ আবেদনের মাধ্যমে তিনি এবং অন্যরা মিলে ৫০ লাখ পাউন্ডেরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেন, যার বড় একটি অংশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
চুরি, মিথ্যাচার ও নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা প্রাপ্তি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ২০১১ সালের আগস্ট মাসে মিসবাহ লন্ডন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন বলেও দুদক জানিয়েছে। সংস্থাটি আরও জানায়, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মিসবাহ নিজের নাম পরিবর্তন করে রবিন চৌধুরী নাম ধারণ করেন এবং এ নামে যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সও সংগ্রহ করেন।
২০০৮ সালে রবিন চৌধুরী ইংল্যান্ড থেকে ১৬ কোটি টাকার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠান। এসব টাকা তিনি তাঁর বাবা আবদুর রহিম, স্ত্রী শাহিদা বেগম, শ্যালক রিপন সিরাজ ও মামা মাখন উদ্দিনের নামে পাঠান। এর বাইরেও রবিন আরও টাকা বাংলাদেশে পাঠান। সব মিলিয়ে ৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা তিনি যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আনেন।
দুদক জানিয়েছে, মিসবাহ উদ্দিন মর্টগেজ ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে পাওয়া টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে এনে বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় তাঁর নিজের, স্ত্রী ও বাবার নামে টাকা স্থানান্তর করে এফডিআর বিনিয়োগ, এসওডি ঋণ গ্রহণ করে শেয়ার ক্রয়, ফ্ল্যাট ক্রয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে হস্তান্তর করে মানি লন্ডারিং করেছেন। এ অবস্থায় তাঁদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র দাখিলের পর আসামি আবদুর রহিম মৃত্যুবরণ করায় ২০১৭ সালের ১৪ মে এক আদেশে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।
দুদক সিলেটের কোর্ট পরিদর্শক মো. জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চার আসামিকে আদালত সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া অর্থদণ্ড পরিশোধের জন্য ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে দণ্ডিত অর্থ পরিশোধ না করলে আসামিদের প্রত্যেককে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আদালত। এ ছাড়া আসামিদের ব্যাংকে অবরুদ্ধ টাকাসহ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আনা টাকা ও কেনা সম্পত্তি আদালত রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেছেন।
মো. জাহিদুল ইসলাম আরও জানান, দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে শাহিদা পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করেছেন আদালত। এ ছাড়া অন্য তিন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মিফতাহ সিদ্দিকীর ইফতার মাহফিলে সিলেটে সুধীজনদের মিলনমেলা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা কামনায় এতিম, রাজনীতিবীদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে দোয়া ও ইফতার মাহফিল করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী।
রোববার সিলেট নগরীর একটি অভিজাত কনভেনশন হলে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইফতার মাহফিলটি বিভাগের চার জেলার বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খছরুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যরিষ্টার এম.এ সালাম, ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সহ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, নগর বিএনপির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ এম সারওয়ার উদ্দিন চৌধুরী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক সাজেদুল করিম, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি আশরাফুল আলম, সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সচিব চৌধুরী মামুন আকবর, সম্মিলিত পোশাজীবী পরিষদ, সিলেটের আহ্বায়ক ডা. শামীমুর রহমান, সদস্য সচিব ডা. শাহনেওয়াজ আহমদ, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল করিম ময়ুন, সদস্য সচিব আব্দুর রহমান রিপন, হবিগঞ্জের জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সেলিম, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল হক, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, সাবেক আইজিপি (প্রিজনস) বিগরেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইফতেখারুজ্জামান, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আজমল হোসেন কুনু, জাতীয় নাগরিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল হাসান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহানগর সভাপতি মাওলানা গাজী রহমত উল্লাহ, মহানগর খেলাফত মজলিসের সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান তাপাদার, মহানগর এবিপার্টির আহবায়ক ওমর ফারুক, সদস্য সচিব রেজাউল করিম সোয়েব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল্লা আল গালিব প্রমুখ।
ইফতারপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রতীক্ষায় রয়েছে। এসময় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে জরুরী সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনের জোর দাবি জানান তারা।