‘পুলিশ বলেছে, স্বামীর সংসার কর, এখানে আসছোস ক্যান’
Published: 13th, February 2025 GMT
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করা চাকরিপ্রত্যাশীদের আজ বৃহস্পতিবারও ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন কয়েকজন। একজন নারী আন্দোলনকারী বলেছেন, ‘পুলিশ বলেছে, “স্বামীর সংসার কর, এখানে আসছোস ক্যান?”’
আজ বেলা একটার দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া কয়েক শ চাকরিপ্রত্যাশী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় চারদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাঁদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করে; কিন্তু তাঁরা কথা শোনেননি। একপর্যায়ে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছিটিয়ে ও ধাওয়া দিয়ে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
আজ শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দুই সন্তানকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন আন্দোলনকারী রাশেদা বেগম। সন্তানদের একজনের বয়স আট মাস, আরেকজনের ছয় বছর। রাশেদা বেগম বলেন, ‘আমি আমার দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। আমি কোনো অন্যায় করিনি।’
নারী এই আন্দোলনকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘লাঠিচার্জের সময় মহিলা পুলিশগুলো বলেছে, “একে ধর, একে ধর”। এক পুলিশ এসে আমাকে লাথি দেয়। পুলিশ আমার আপত্তিকর জায়গায় হাতও দিয়েছে। আরও অনেক নারীর সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটেছে।’
লক্ষ্মীপুর থেকে আসা আন্দোলনকারী সামিরা বেগম বলেন, ‘পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পাঁচজন নারী শিক্ষক আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজনকে আটক করে রাখা হয়েছে, যার একটি ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক নারী শিক্ষককে পুলিশ লাথি মেরেছে। লাথি দিয়ে পুলিশ তাদের বলেছে, “স্বামীর সংসার কর, এখানে আসছোস ক্যান?”’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
নিয়োগ পুনর্বহালের দাবিতে কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে এর আগেও তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। সে সময় পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গতকাল বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে আন্দোলন চলাকালে তাঁরা ঘোষণা দেন, আজ সকাল ৯টা থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ‘জাস্টিস ফর টিচার’, ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ শুরু হবে।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিবের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীরা বৈঠক করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
তিন ধাপে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ হন। নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন রিট করলে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাঁদের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে রায় দেন।
আরও পড়ুনশাহবাগে নিয়োগ বাতিল হওয়া শিক্ষকদের অবরোধ, ছত্রভঙ্গ করল পুলিশ৫ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ কর প র র ধ কর অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের দর–কষাকষির কৌশল কী হবে
কালো স্যুট ও গাঢ় রঙের টাই পরা পুতিন মাইক্রোফোনের দিকে ঝুঁকে একটি আঙুল তুলে ধরেন, তবে তাঁর মুখ বন্ধ। তিনি বসে আছেন রুশ লাল ও সবুজ পতাকার সামনে। ভ্লাদিমির পুতিন শুরুতেই নিজের বক্তব্য পরিষ্কার করতে চাইলেন। ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কোনো মন্তব্য করার আগেই তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। ১৩ মার্চ মস্কোতে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন সংকট নিয়ে এত মনোযোগ দেওয়ার জন্য আমি ট্রাম্পকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্তন বারবাশিন বলেন, ‘পুতিন চাচ্ছেন, ট্রাম্প যেন বিশ্বাস করেন যে তিনি (পুতিন) আলোচনায় আগ্রহী।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মতো ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করতে চান না পুতিন। বরং বারবাশিনের মতে, রুশ প্রেসিডেন্ট কৌশলগতভাবে এমন বার্তা দিতে চান যাতে ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী হন এবং কোনো সমঝোতায় আসেন।
ওভাল অফিসে হলুদ আসনে বসে আছেন জেলেনস্কি ও ট্রাম্প। জেলেনস্কি সম্পূর্ণ কালো পোশাকে। তিনি ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে আছেন। হাত দিয়ে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প নীল স্যুট ও লাল টাই পরে, তাঁর দিকে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলছেন। মুখে কপট বিরক্তির ছাপ।
তবে পুতিনের চাওয়া সমঝোতা ট্রাম্পের ভাবনার চেয়ে আলাদা হতে পারে। ট্রাম্প চান, অন্তত ৩০ দিনের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হোক। পুতিন এটিকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দিলেও বলেছেন, ‘কিছু বিষয় আছে, যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে’। এই ‘কিছু বিষয়’ কী? এইগুলো থেকে বোঝা যায়, রাশিয়া এখন কী পরিকল্পনা করছে!
পুতিন যে ‘কিছু প্রশ্ন’ উত্থাপন করেছেন, সেগুলো আসলে পরোক্ষ আপত্তি নয়, বরং স্পষ্ট দাবি। তিনি চান, রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে এখনো লড়াইরত ইউক্রেনের সেনারা আত্মসমর্পণ করুক। যুদ্ধবিরতির সময় ইউক্রেন যেন নতুন কোনো সেনা মোতায়েন করতে না পারে। একই সঙ্গে, পশ্চিমা দেশগুলো যেন কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
পুতিনের মতে, এই যুদ্ধবিরতি ‘দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সংঘাতের মূল কারণ দূর করবে’। তবে এই অস্পষ্ট বক্তব্যের উদ্দেশ্য হলো, আলোচনাকে মস্কোর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলোর দিকে নিয়ে যাওয়া।
কুর্স্ক শহরে দেয়াল চিত্রের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন নাগরিক