নিখোঁজ স্কুলছাত্রের বস্তাবন্দি লাশ মিলল পুকুরে
Published: 13th, February 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জে একটি পুকুর থেকে ২৩ দিন নিখোঁজ থাকা রোমান শেখ (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী ও র্যামবের উপস্থিতিতে শ্রীনগর উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের ছয়গাঁও গ্রামের একটি পুকুর থেকে সিমেন্টের খুঁটি বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দি রোমানের লাশ উদ্ধার করা হয়। রোমান গত ২১ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিল। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
রোমান সিরাজদীখান উপজেলার কোলা ইউনিয়নের থৈরগাঁও গ্রামের মিরাজ শেখের ছেলে এবং বেলতলী গঙ্গাপ্রসাদ জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে রোমান সবার ছোট। অভাবের কারণে সে পড়াশোনার পাশাপাশি অটোরিকশা চালাত।
২১ জানুয়ারি গ্রাম থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে রোমান নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় ২৫ জানুয়ারি সিরাজদীখান থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন রোমানের বাবা। আসামিরা হলো– রোমানের পূর্বপরিচিত মো.
ছয়গাঁও গ্রামের স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মামলার প্রধান আসামি জেলহাজতে থাকা মো. সিয়াম ওরফে জিহাদের বাড়ির পাশের পুকুরে বস্তাবন্দি একটি লাশ ভেসে ওঠে। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন লাশটি নিখোঁজ রোমানের বলে শনাক্ত করে। এর পরই গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা হামলা চালিয়ে প্রধান আসামি সিয়ামের বাড়িঘর ভাঙচুরের পর আগুন জ্বালিয়ে দেন। গ্রামবাসীর দাবি, সিয়ামসহ তার সহযোগীরা রোমানকে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে তাতে সিমেন্টের খুঁটি বেঁধে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়েছিল।
সিরাজদীখান সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আ ন ম ইমরান খান জানান, বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে সিয়ামের বাড়ির বসতঘরের পাশের পুকুরে সিমেন্টের খুঁটি বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ গেলে বিক্ষুব্ধ লোকজন আসামি সিয়ামের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় ও আগুন দেয়। স্থানীয়রা উত্তেজিত থাকায় লাশ উদ্ধারে বিলম্ব হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যদের উপস্থিতিতে পুলিশ পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চুন–সুরকির শতবর্ষী মসজিদ গরমের সময় ঠান্ডা আর শীতে উষ্ণ থাকে
কক্সবাজার শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার সড়কে দাঁড়িয়ে পূর্ব দিকে তাকালে নজরে পড়ে শতবর্ষী দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। এলাকায় মসজিদটি গায়েবি মসজিদ নামে পরিচিত। সম্পূর্ণ চুন-সুরকির এই মসজিদটি গরমের সময় ঠান্ডা আর শীতের সময় গরম থাকে।
সোনালি গম্বুজ ও সাদার মাঝে গোলাপি নকশায় অপরূপ এই মসজিদ দেখতে দূর থেকেও দর্শনার্থী আসেন। আয়তনে ছোট হলেও এর স্থাপত্যশৈলী ও গঠন দৃষ্টিনন্দন। মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে বিশাল এক দিঘি। মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ৩৪ ফুট, পূর্ব-পশ্চিমে ২৬ ফুট। চারটি পিলার বা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। মসজিদের দরজা একটি। এর উচ্চতা পাঁচ ফুট। দুটি জানালার উচ্চতা সাড়ে চার ফুট, প্রস্থ তিন ফুট। মসজিদের দেয়াল পাঁচ ফুট চওড়া। প্রাচীন মসজিদটি সম্পূর্ণ চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি। মসজিদের বিশালাকৃতির একটি গম্বুজ তৈরি হয়েছে লোহাবিহীন চুন-সুরকি দিয়ে।
মসজিদটির নির্মাণ কাল নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। এর মুঘল ধাঁচের নির্মাণ শৈলী দেখে অনেকের ধারণা এটি সুবেদার শাহ সুজার সময়কালে (১৬১৬ -১৬৬১) তৈরি হয়েছিল। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রবীণ শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রকৃত অর্থে গায়েবি মসজিদটি কে তৈরি করেছিলেন, তার সঠিক তথ্য-প্রমাণ কিংবা ইতিহাস কারও জানা নেই। তবে এটির বয়স ৪০০ বছর হতে পারে।
৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার কিছু মানুষ মনে করেন, মুঘল শৈলীর হলেও সাচী চৌধুরী নামে এলাকার একজন দানশীল মানুষ ১৮৬১ খিষ্টাব্দের দিকে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। এ কারণে মসজিদের নামকরণ হয়েছে সাচী চৌধুরী মসজিদ নামে। সাচী চৌধুরীর আদি নিবাস ছিল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়।
জানা যায়, ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে কক্সবাজার মহকুমায় উন্নীত হওয়ার পরেই সাচী চৌধুরী আনোয়ারা থেকে কক্সবাজারে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁর নামে গ্রামের নামকরণ হয়েছে চৌধুরী পাড়া। কয়েক বছর আগে মসজিদের সংস্কারকাজ করা হয়েছে। নামাজ পড়ার পরিসর বাড়ানো হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৬০ ও ১৯৯১ সালের দুটি বড় ঘূর্ণিঝড় ক্ষতি করতে পারেনি মসজিদটির। অথচ, ওই দুই ঝড়ে আশপাশের সবকিছু বিধ্বস্ত হয়েছিল। এ কারণে লোকমুখে মসজিদটি নাম হয়েছে গায়েবি মসজিদ।
মসজিদের দীর্ঘ কয়েক বছর ইমামতি করেন স্থানীয় মাওলানা আবুল হোছাইন। তাঁর ছেলে নুরুল হুদা (৫৫) বলেন, তাঁর বাবার মুখ থেকে মসজিদ নিয়ে অনেক জনশ্রুতি শুনেছেন তাঁরা। গভীর রাত পর্যন্ত মসজিদে মুসল্লিরা আসেন। ইবাদত করেন। এর থেকে অনেকে বিশ্বাস করেন, এখানে জিনেরা নামাজ পড়ে।
কক্সবাজারের ইতিহাস-ঐতিহ্যের জড়িত এই মসজিদের সংরক্ষণ জরুরি বলে উল্লেখ করেন মসজিদের খতিব মাওলানা আমান উল্লাহ। তিনি বলেন, ১৯৬০ ও ৯১ প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে বিশাল এলাকা লন্ডভন্ড হলেও গায়েবি মসজিদ অক্ষত অবস্থায় ছিল। এ সময় মসজিদের আশপাশের লোকজনের শত শত পাকা ঘরবাড়ি অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছিল। মসজিদটি রক্ষা পাওয়ায় লোকজনের কাছে মসজিদটি গায়েবি মসজিদ নামে পরিচিতি পায়। গায়েবি অর্থ অলৌকিক শক্তি। এ মসজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, প্রচণ্ড গরমেও ভেতরে পরিবেশ থাকে ঠান্ডা-শীতাতপ। আবার শীতকালে গরম অনুভূত হয়।