ডিসেম্বরে নির্বাচন দিয়ে নিজের কাজে ফিরে যাওয়ার কথা বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা এ যাবতকালে যত নির্বাচন করেছে, তা ছিল ভুয়া।’’

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গোটা বিশ্বকে ধন্যবাদ জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সামাজিক শৃঙ্খলা ও ভঙ্গুর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাও চ্যালেঞ্জ। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার করতে আমরা কাজ করছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার পুরো অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। তারা বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছে। এসব টাকা ফিরিয়ে আনা এই মুহূর্তে আমাদের অন্যতম কাজ।’’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছি। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে শিগগিরই সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে যাব। সেটা ডিসেম্বরে হতে পারে। জাতিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে আমি আমার পুরনো কাজে ফিরে যেতে চাই।’’

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা- সবই উন্নতি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

এর আগে সকালে আমিরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আব্দুল রহমাল বিন মুহাম্মদ আল ওয়াইসের সাথে বৈঠক করেন অধ্যাপক ইউনূস। বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ করায় ড.

মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানান আমিরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

এ সময় আমিরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ-আমিরাতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে।’’ 

ড. ইউনূস আমিরাতকে ধন্যবাদ জানান, ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশিকে দেশটিতে কাজের সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমিরাতের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে তিনি শুভেচ্ছা জানান। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমদ।

এর আগে বুধবার ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্থানীয় সময় রাত ১১টায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র ত র স ব স থ য উপদ ষ ট সরক র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত

সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কতটা শক্ত অবস্থান তারা নিতে পেরেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। সাম্প্রতিক কালে নারী নিগ্রহের ঘটনা এতটাই বেড়েছে যে অন্যান্য অপরাধ নিয়ে আলোচনা কম হচ্ছে। এ ছাড়া একশ্রেণির দুর্বৃত্ত দোকান-বাড়ি-অফিস দখলের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।

ব্যবসায়ীরা ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য রোজা-ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তাঁরা ভাবেন, বছরের অন্যান্য সময় ব্যবসা মন্দা হলেও ঈদের সময় বেচাকেনা ভালো হবে। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করছে। আবার এসব হামলার ঘটনায় ব্যবসায়ীকেও জীবন দিতে হচ্ছে। 

প্রথম আলোর খবরে জানা যায়, ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলায় নয়ারহাট বাজারে ডাকাতেরা ৬ মার্চ রাতে ‘দিলীপ স্বর্ণালয়ে’ গচ্ছিত স্বর্ণালংকার লুটে নেয় এবং দোকানের মালিক দিলীপ দাসকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই বাজারে ৩৫টি সোনার দোকান আছে।

ঘটনার পর সেখানকার ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁদের অভিযোগ, ২০২১ সালে বাজারের ১৭টি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়। এরপর প্রিয়াংকা জুয়েলার্সে ৯ মাস আগে ডাকাতি হয়েছিল। দিলীপ দাসের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দাবিতে বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন ব্যবসায়ীরা। তথ্য–আলামত দেখে মনে হয়, দিলীপ হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত। তিনি ওই দিন সন্ধ্যার পর দোকান থেকে চলে গিয়েছিলেন, এরপর দুই নারী ক্রেতা তাঁকে ডেকে দোকানে নিয়ে আসেন। ঘটনার সময় আতশবাজি-জাতীয় কিছু ফাটানো হয়েছিল। পুলিশ ওই দুই নারীসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে বরিশালের উজিরপুরে বিএনপির দলীয় নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার টানিয়ে প্রয়াত এক বীর মুক্তিযোদ্ধার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যুবদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

গত শুক্রবার রাজধানীর কলাবাগান থানার রাসেল স্কয়ার এলাকায় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও চাঁদাবাজির দায়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তারুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সালমানসহ বিভিন্ন পদের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকায় পাঁচ দিনের ব্যবধানে ইটভাটাসহ দুই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও একাধিক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে।

ডেইলি স্টার–এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালকেন্দ্রিক প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। দেশের পরিবহন খাতে মাফিয়ারা চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে দুদকের তদন্তেও উঠে এসেছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, পরিবহন সাম্রাজ্য থেকে চাঁদাবাজির অবৈধ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদেশে পলাতক মাফিয়াদের কাছে। বিদেশে পলাতক কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে এ ধরনের তথ্য পেয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে তারা।

এসব অপরাধের সঙ্গে কখনো রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী, কখনো পেশাদার অপরাধীদের জড়িত থাকতে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে বলে যে আওয়াজ দেওয়া হয়েছে, তা কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটাই দেখার বিষয়। ঈদ সামনে রেখে ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিও বাড়াতে হবে। ঢাকার বাসিন্দাদের প্রতি ঈদে বাড়িতে গেলে মালামাল নিজের হেফাজতে রেখে যাবেন, এই সদুপদেশ দিলেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেনীতে সাত মাসে ১৯ খুন, ২৭ ধর্ষণ
  • মুচলেকা দিয়ে জামিন পেলেন এলজিইডির সেই নির্বাহী প্রকৌশলী
  • সিপিবির কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ, বিকেলে শোকমিছিল
  • সিপিবি কার্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচি, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা জব্দ: গাইবান্ধার সেই প্রকৌশলী ছাড়া পেলেন মুচলেকায়
  • ন্যায়বিচারই এই নিষ্ঠুরতার একমাত্র জবাব
  • নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ–সমাবেশ
  • বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের মন্তব্য অযাথিত
  • রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ১৯৭
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত