পার্বতীপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাতেমা খাতুনের  অপসারণ ও তার অনিয়ম, দুর্নীতির বিচার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা আন্দোলনে নেমেছেন। ইউএনওকে পার্বতীপুর ছাড়তে দুই ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।

গতকাল বুধবার বিকেলে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় কার্যালয় ছেড়ে বাংলো বাড়িতে অবস্থান নেন। ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার বাসা থেকেই দাপ্তরিক কাজ করেন ইউএনও। এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। 

উপজেলা জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরা তাকে পার্বতীপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য দুই ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেই। পরে প্রশাসনের সহায়তায় তিনি কার্যালয় ত্যাগ করলে আন্দোলনকারীরা কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেয়।

স্থানীয় জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, ২০২৪ সালের ১২ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে ফাতেমা খাতুন পার্বতীপুর উপজেলায় যোগদান করেন। গত ৫ আগস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে হাসিনা সরকারের পতন হলে একই বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ইউএনও পদে বদলির আদেশ পান। কিন্তু সেখানে যোগদান করেননি। একইভাবে ২০২৫ সালে জানুয়ারি মাসে তাকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বদলি করা হলে সেখানেও ‘তদবির’ করে রহিত করেন।

পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা খাতুন বলেন, কিছু আন্দোলনকারী কার্যালয়ে এসে আন্দোলন করেছে। আমি বাকবিতণ্ডা এড়াতে কার্যালয় ত্যাগ করেছি। আজ বৃহস্পতিবার বাসায় বসেই অফিস করছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আমার কাছে সুবিধা নিতে পারেননি; তারাই আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনছেন। আমার বিরুদ্ধে যারা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউএনও উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি গাছ কাটায় নীরব প্রশাসন

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় সড়কের পাশে সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর ১৫ দিন পেরোলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মানাখান এলাকায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রিতা আক্তার নামে এক নারী সরকারি গাছ কাটেন। কিন্তু এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে উল্টো চারজন সাংবাদিক, পুলিশ ও বন বিভাগের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তিনি। ২ মার্চ শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার ও নড়িয়ার ইউএনওর কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে রিতা দাবি করেন, ওই ব্যক্তিরা তাঁর কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করেছেন।
রিতা তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর বাড়ির সামনে সরকারি রাস্তার পাশের একটি গাছ কাটছিলেন। সে সময় বন বিভাগের নৈশপ্রহরী জামাল মিয়া ও চার সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হন। সাংবাদিকরা হলেন– নড়িয়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বৈশাখী টেলিভিশনের শরীয়তপুর প্রতিনিধি আবদুল খালেক ইমন পেদা, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর ছৈয়াল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংবাদ দিগন্ত প্রতিনিধি নুরে আলম জিকু এবং আনন্দ টিভির প্রতিনিধি জামাল হোসেন।
অভিযোগে বলা হয়, ওই চার সাংবাদিক ও বন বিভাগের কর্মচারী তাঁকে মামলার ভয় দেখিয়ে ৩২ হাজার টাকা আদায় করেন এবং রাতের মধ্যে গাছ কেটে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। ঘটনার পরদিন ১ মার্চ গভীর রাতে নিয়মিত টহলের সময় নড়িয়া থানার এসআই রাজীব হোসেন সরকারি গাছ কাটার অভিযোগে তাঁকেসহ কয়েকজন শ্রমিককে আটক করেন। কিন্তু অভিযুক্ত সাংবাদিকদের মধ্যস্থতায় ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ২ মার্চ সকালে বন বিভাগের কর্মকর্তা জামাল মিয়া ও অভিযুক্ত সাংবাদিকরা আবারও তাঁর বাড়িতে গিয়ে আরও টাকা দাবি করেন এবং মামলা করার হুমকি দেন। পরে তিনি শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার ও নড়িয়ার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
নড়িয়ার ইউএনও আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ মার্চ এলজিইডির প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রভাবশালীরা প্রায়ই সরকারি গাছ কেটে নিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তামিম বলেন, প্রশাসনের নীরবতায় প্রভাবশালীরা নির্বিঘ্নে সরকারি গাছ কাটছে। অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।
ঘটনাটি নতুন মোড় নেয় গত বুধবার, যখন রিতা আবার একটি লিখিত দরখাস্ত দিয়ে তাঁর আগের অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর অভিযোগ মিথ্যা ছিল এবং পুলিশ বা সাংবাদিকরা তাঁর কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি।
এ বিষয়ে ইউএনও আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, প্রথমে অভিযোগ করার পর এখন তা প্রত্যাহার করায় বিষয়টি সন্দেহজনক। তিনি কোনো চাপে পড়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন কিনা, সেটি তদন্ত করা হবে।
গাছ কাটার ঘটনায় প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, গাছ যেহেতু এলজিইডির সম্পত্তি, তাই তাদের নিয়মিত মামলা করতে বলা হয়েছে। গত সপ্তাহে মামলা করা হয়নি। তবে এই সপ্তাহে মামলা করা হবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাংবাদিকরা দাবি করেছেন, তারা নির্দোষ এবং রিতা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। নড়িয়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুল খালেক ইমন পেদা বলেন, তারা সাংবাদিক হিসেবে সরকারি গাছ কাটার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিতা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন। তবে এখন তিনি নিজেই অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন। অথচ প্রশাসন গাছ কাটার ঘটনায় এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিতা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রথমে তিনি ব্যস্ত থাকার কথা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টিসিবির সাত হাজার স্মার্ট কার্ড বিতরণ হয়নি, পণ্য দেওয়া হচ্ছে ‘নেতাদের স্লিপে’
  • বিনা মূল্যে নৌকা না পেয়ে কর্মচারীকে মারধর করার অভিযোগ পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে
  • সরকারি গাছ কাটায় নীরব প্রশাসন
  • ডিসি–ইউএনও–এসি ল্যান্ডরা কি পারবে নদীর সুরক্ষা দিতে
  • ঠিকাদারের টাকা বাঁচাতে সর্বনাশ কৃষকের জমিতে