নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের করাধ্যক্ষ (জেলার) আক্তার হোসেন শেখকে তাঁর কার্যালয়ের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন কারারক্ষীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার ও জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো.

শাহিন মিয়া ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান মারুফ কারারক্ষীদের অভিযোগ শোনার পর জেলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

কারারক্ষী নাছির উদ্দীন ও আবদুস সালাম অভিযোগ করে বলেন, ‘খাগড়াছড়ির কারাগারের কারধ্যক্ষ আক্তার হোসেন শেখ সাধারণ কারারক্ষী এবং বন্দী আসামিদেরকে নানাভাবে মানসিক অত্যাচার করতেন। যেকোনো কাজের জন্য কারারক্ষীদের টাকা দিতে হতো কারাধ্যক্ষকে। এসব বিষয় নিয়ে একবার আসামিরা কারাধ্যক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তখন আমরা কারাধ্যক্ষকে নিরাপত্তা দিই। ইতিমধ্যে তাঁকে ওএসডি করে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। আজ তাঁর খাগড়াছড়ি ত্যাগ করার কথা। কিন্তু আজ হঠাৎ আমাদের কয়েকজনকে রাজশাহী বদলি করে দেন তিনি। মূলত তিনি নিজে ওএসডি হওয়ায় আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে এ কাজ করেছেন।’

খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক বাপ্পি দাশ অভিযোগ করে বলেন, ‘কারাধ্যক্ষ আক্তার হোসেন শেখের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। গত জুলাই আন্দোলনে আমি গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারে পাঠানো হলে তিনি আমাকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করেছেন। পরে দেড় ফুট থাকার জায়গা বাবদ তিনি আমার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ৪৬ হাজার টাকা আদায় করেছেন।’

খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার ও জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার কমিশনার মো. শাহিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারারক্ষীদের অভিযোগ শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করেছি।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অসুস্থ হওয়ার পরও খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের কাছে মাথা নত করেননি: শামা ওবায়েদ

কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগ সরকার বিষ প্রয়োগ করেছিল বলে শুনতে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন ওনাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলেও আমরা শুনতে পেয়েছি। সেই অবস্থায় উনি আরও অসুস্থ হয়েছেন। সেই অসুস্থ হওয়ার পরেও উনি স্বৈরাচারের কাছে মাথা নত করেননি।’

ফরিদপুরে ইফতার পার্টি–পূর্ব এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন শামা ওবায়েদ। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে আজ রোববার ফরিদপুর শহরের অম্বিকা ময়দানে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আফজল হোসেন প্রমুখ।
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আমাদের ১৫ বছর, ১৭ বছরের যে যুদ্ধ, যে কষ্ট, যে অত্যাচার, যে অনাচার, যে ত্যাগ, যে তিতিক্ষা সবচেয়ে বেশি ত্যাগ যাঁরা করেছেন, আমি বলব গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। ওনাকে একটি মিথ্যা মামলায় সম্পূর্ণ বিনা দোষে ছয় বছর জেল খাটতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওনাকে (খালেদা জিয়া) ও ওনার পরিবারকে বারবার বলা হয়েছিল যে উনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চান, তাহলে ওনাকে জামিন দেওয়া হবে। কিন্তু তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি।’

শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি বলে উল্লেখ করে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের মধ্যে ১৫ বছর যাঁরা ছিলেন না, যাঁদের আমরা দেখিনি, যাঁরা কখনো কোনো আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন না, তাঁদের ঘাড়ের ওপর সওয়ার হয়ে আওয়ামী লীগ ফিরে আসতে চাচ্ছে। আমাদের সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। সব রকম ষড়যন্ত্রের ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ এখন ‘সবচেয়ে বড় বিপদ অতিক্রম করছে’ মন্তব্য করে বিএনপির নেত্রী শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সবচেয়ে ক্রান্তিকাল আমরা পার করছি। এখনো আমরা ভোটাধিকার পাইনি। আমরা এখনো একটা ভোট দিতে পারিনি। নির্বাচন ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের এই দাবি থাকুক, হাসিনামুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে আর কোনো নারী নির্যাতন চাই না। আর কোনো অত্যাচার ও অনাচার চাই না। আর কোনো ডাকাতি চাই না। আর কোনো খুন–গুম দেখতে চাই না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ