দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে অমর একুশে বইমেলা পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতাদের নিয়ে তিনি বইমেলা ঘুরে দেখেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর এই প্রথম জামায়াতের কোনো শীর্ষ নেতা দলীয়ভাবে কর্মসূচি নিয়ে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা পরিদর্শন করলেন।

আরো পড়ুন:

বইমেলায় হট্টগোল, উপদেষ্টা ফারুকীর কড়া বার্তা

বইমেলায় হট্টগোল: ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি

এর আগে দলটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শফিকুর রহমানের বইমেলায় যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।

সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন দেশের সরকার প্রধান বইমেলার উদ্বোধন করে থাকেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ছাড়াও রাজনীতিবিদরা উপস্থিত থাকেন।

এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কিংবা বড় বড় রাজনীতিবিদদের বইমেলায় যেতে দেখা গেছে। কিন্তু সেটি ব্যক্তিগতভাবে। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে বা দলীয়ভাবে কর্মসূচি নিয়ে একুশের বইমেলা পরিদর্শনের রেওয়াজ বা নজির নেই বললেই চলে।

তবে সেই প্রথার বাইরে গিয়ে এবারই প্রথম জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দলীয় নেতাদের নিয়ে একুশে বইমেলায় বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করলেন।

স্টল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন জামায়াত আমির। ৫২, ৭১ ও ২৪ এর আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, “এখানে প্রত্যেকটি স্টলেই পাঠকদের উপচেপড়া ভিড়। আজকে এখানে শিশুরাও চলে এসেছে যদিও আজকে শিশুদের জন্য আলাদা দিন নয়।”

তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত যে আমেজ শুরু হয় তা থেকে আমরা আমাদের অতীতকে স্মরণ করি। যে জাতি তাদের অতীত ঐতিহ্য কে ধারণ করে সে জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।”

এ সময় তিনি বইমেলার বাকি সময়টুকু যেন সুষ্ঠুভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয় সেই আশা ব্যক্ত করেন।

ঢাকা/সৌরভ/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল এক ড ম বইম ল বইম ল য়

এছাড়াও পড়ুন:

'দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গ্যালো। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ