ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অপসারণে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা
Published: 13th, February 2025 GMT
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক নূরে আলমের প্রত্যাহার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছে ঢাকা আইনজীবী সমিতি।
গতকাল বুধবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকা বারের পক্ষে লিখিতভাবে এ আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সদস্য ৩১ হাজার ৩৫৯ জন। সম্প্রতি যোগদানরত ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক নূরে আলম প্রতিনিয়ত জুনিয়র আইনজীবীদের মামলার শুনানিতে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন, অবিচারিকসুলভ ও অযাচিত মন্তব্য করেন।
এ বিষয় সাধারণ আইনজীবীদের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিনিধি পাঠিয়ে ঢাকা বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওই বিচারকের সঙ্গে আলোচনার জন্য অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু বিচারক ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করেননি। ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশের ২ জন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে তিনি এজলাসে বসেন।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই দিন বিচারক ঢাকা বারের কর্মকর্তাদের পুলিশ দিয়ে এজলাস থেকে বের করে দেন। এসবের জন্য বিচারক নূরে আলমকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রত্যাহার করতে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চান ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
বিচারকের অপসারণ চেয়ে গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল বর্জন করে আসছেন সাধারণ আইনজীবীরা। ওই দিনই আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বার।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ স্থবির হয়ে পড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল সংগঠনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজাহারুল ইসলামের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ঘুষকে’ অফিসিয়ালি বৈধতা দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, সমালোচনা
ঘুষের পরিমাণ সহনীয় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি। তাদের দাবি, হয়রানি থেকে রক্ষা পেতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এ সংক্রান্ত সভার রেজুলেশনের অংশ বিশেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
আইন পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে জানান, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করা হয়েছে এই সিন্ধান্তের মাধ্যমে।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সভা গত ৬ মার্চ দুপুর ২টায় শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট সুলতান হোসেন মিয়া সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাহী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান। সভার শুরুতে এজেন্ডা ভিত্তিক আলোচনায় সব সদস্য অংশগ্রহণ করেন এবং নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ সর্ব-সম্মতিক্রমে গৃহিত হয়।
আরো পড়ুন:
বাহুবলে গাছে বেঁধে আগুন, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
যুবলীগ নেতার ১৩ বছরের কারাদণ্ড
সিদ্ধান্ত নং-২: পেশকার/পিয়নকে সি, আর ফাইলিং এ ১০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত নং-৩: যেকোন দরখাস্তে জি, আর/সি,আর ১০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত নং- ৪: জামিননামা দাখিলের খরচ মামলা প্রতি ১০০ টাকার নিচে না এবং ২০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত নং-৫: গারদখানায় ওকালতনামায় স্বাক্ষরে ১০০ টাকা, সিভিল ফাইলিং এ সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ও হলফনামায় ১০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির নিজের ফেসবুকে শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভায় পাশ হওয়া রেজুলেশনের অংশ বিশেষ পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লেখেন, “ঘুষের সার্টিফিকেট দিলো শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি।”
ইমরান আল নাজিরের করা পোস্টে মন্তব্য করে সাগর দেওয়ান নামে অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “তারা টাকা ছাড়া নরেও না।”
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম বলেন, “শরীয়তপুর কোর্ট কাচারিতে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ নেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। কোর্টের কর্মচারীরা ইচ্ছেমতো যার থেকে যা পারছেন আদায় করে নিচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, এটা বন্ধ হোক। যেহেতু, এটা একবারে হুট করে বন্ধ করা যাবে না, তাই সভায় ঘুষের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে নির্দিষ্ট আকারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যাতে আমরা কেউ হয়রানির শিকার না হই। ভবিষ্যতে আমরা এই অনৈতিক লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেব।”
শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন বলেন, “আইনজীবী সমিতি সভা ডেকে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করে এ ধরনের রেজ্যুলেশন ভাইরাল করায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। এটা নজিরবিহীন। ঘুষকে রেজ্যুলেশন আকারে বৈধতা দেওয়া হয় এটা কোনো ইতিহাসে নেই। এটা করে তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করেছে। তারা এই কাজটা ঠিক করেনি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করেন, তারা এই কাজটা কেন করলেন? গত বছরের ৫ আগস্টের পরে এ ধরনের লেনদেন টোটালি বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের জজ স্যার, চিফ স্যার এ ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছেন। কোনো ফাইল বা কোনো কাজ আটকে থাকছে না। সব কাজ যথা সময়ে হয়ে যাচ্ছে। তাহলে কেন আমাদের স্টাফদের ঘুষের আওতায় আনা হলো আমি জানতে চাই?”
শরীয়তপুর কোর্ট পরিদর্শক শিমুল সরকার বলেন, “আমি জানতে পেরছি, আইনজীবী সমিতি মিটিং করে ঘুষের রেট নির্ধারণ করেছে। এটা তাদের বিষয়। তারা এ বিষয়ে আমাকে এখনো কিছু জানায়নি। আমাদের এখানে ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি-না আমার জানা নেই। এ রকম যদি কেউ নিয়ে থাকেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, “এভাবে সভা ডেকে রেজুলেশন করে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করা বেআইনি। আমি এটা কখনোই সমর্থন করি না। আমি এর নিন্দা জানাই।”
গত ১২ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্যানেল ১৫টি পদের মধ্যে ১৫টি পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধার মুখে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সভাপতি ও জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান সাধারণ সম্পাদক হন।
ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ