ঢাকার দোহারে স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধের জেরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান শামীম হোসেন (২৫) নামের এক প্রবাসী। ঘটনার চার দিন পর বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে রোববার রাতে দোহারের নারিশা এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। দগ্ধ অবস্থায় চার দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি মারা যান। শামীম হোসেন উপজেলার নারিশা খালপাড় এলাকার ইয়ানুছ ব্যাপারীর ছেলে।

পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ফারজানা আক্তার (২০) নামের তরুণীকে পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করেন শামীম হোসেন। বিয়ের পর তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। মেয়ের পরিবারও এই বিয়ে মেনে নিতে চায়নি। এর মধ্যে সৌদি আরবে চলে যান শামীম। প্রবাসে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। দুই মাস আগে হঠাৎ ফারজানা তাঁকে তালাকের নোটিশ দেন। ঘটনা জানতে পেরে শামীম ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শ্বশুরবাড়িতে যান। কিন্তু স্ত্রী তাঁর সঙ্গে কথা বলায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে স্ত্রী তাঁকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু শামীম সেখানেই থেকে যান। হঠাৎ ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে শামীম শ্বশুরবাড়িতে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

খবর পেয়ে শামীমের স্বজনেরা এসে তাঁকে উদ্ধার দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বিকেলে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়।

শামীমের বড় ভাই শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেন, তাঁর ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ফারজানা তাঁর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করে শামীমকে ছাড়াছাড়ির ভান ধরে। মৃত্যুর আগে শামীম একটি ভিডিও বার্তায় তাঁর মৃত্যুর কারণ জানিয়ে গেছে। ভিডিওসহ মুঠোফোনটি দোহার থানা-পুলিশ জব্দ করেছে বলে জানান তিনি।

শামীমের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ফারজানা ও তাঁর পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে ফারজানাদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায়। প্রতিবেশীরা জানান, শামীমের মৃত্যুর পর তাঁরা সপরিবার বাড়ি ছেড়েছেন।

জানতে চাইলে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, শামীমের পরিবারের লোকজন থানায় এলে মামলা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ য় পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

এত বড় লোকসানের বোঝা সইবেন কী করে

ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে সাড়ে সতেরো কোটি মানুষের খাবারের জোগান নিশ্চিত করা যেকোনো সরকারের জন্যই বিশাল চ্যালেঞ্জের কাজ। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, মূল্যস্ফীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি—এ সবকিছু ছাপিয়ে বড় কোনো বিপর্যয় ছাড়াই এ দেশের মানুষ এখনো টিকে আছে, তার সবচেয়ে বড় অবদান কৃষকের। অথচ দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে সবচেয়ে অবহেলার শিকার হন তাঁরা। এবার আলুচাষিরা তাঁদের উৎপাদিত আলু নিয়ে যে সীমাহীন দুর্ভোগ ও লোকসানের মুখে পড়েছেন, তাতে মনে হতেই পারে, আলু উৎপাদন করে তাঁরা কি অপরাধ করে ফেলেছেন?

আমনের মৌসুমে দফায় দফায় বন্যা হওয়ায় চালের উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় বাজারে চালের দাম এখন গত বছরের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি। এ অবস্থাতেও শীতের সবজির ওপর ভর করে প্রায় দুই বছর পর গত মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০-এর নিচে নেমেছে। এ ক্ষেত্রেও প্রধান অবদান কৃষকের। কিন্তু শীতের সবজি চাষে এ বছর তাঁরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন। এবার পেঁয়াজ উৎপাদনেও কৃষকেরা চমক দেখিয়েছেন, ফলে ভোক্তারা তুলনামূলক কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। কিন্তু পেঁয়াজেও কৃষকেরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি। আলুর ক্ষেত্রেও কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।

এবার যে আলুর উৎপাদনও বেশি হবে, সেই পূর্বাভাস আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। আগাম বুঝতে পেরে হিমাগারের মালিকেরা সিন্ডিকেট করে হিমাগারের ভাড়া বাড়িয়ে দেন। কৃষকেরা মানববন্ধন করে, রাস্তায় আলু ফেলে প্রতিবাদ করে হিমাগারের ভাড়া কমানোর দাবি জানান। সরকার কিছুটা ভাড়াও কমান। কিন্তু প্রথম আলোসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে হিমাগারের মালিকেরা কৃষকদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আলু সংরক্ষণের অনুমতিপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত কতটা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অধিকাংশ আলুচাষি।

হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি এবং হিমাগারে সংরক্ষণের অনুমতিপত্র না পাওয়ায় কৃষকদের মাঠ থেকেই তাঁদের আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। ১ কেজি আলু উৎপাদনে যেখানে কৃষকদের খরচ হয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা, সেখানে মাঠ থেকে মাত্র ১৪ টাকায় বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এত বড় লোকসানের বোঝা তাঁরা সইবেন কী করে!

শীতের সবজি, পেঁয়াজ ও আলুর দাম এতটা পড়ে যাওয়ার পেছনে হঠাৎ করেই হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি উঠেছে। সরকার যদি একের পর এক ফসলে কৃষকের এই ক্রমাগত লোকসানের দিকে নজর না দেয়, তাহলে স্বল্প মেয়াদে বাজারে স্বস্তির দেখা মিললেও দীর্ঘ মেয়াদে বড় সংকট তৈরি করবে। হিমাগারের মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে কেন হাজার হাজার কৃষক লোকসানের মুখে পড়বেন? সরকারকে অবশ্যই কৃষকদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ