সালটা ২০২৩। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ দিবাগত রাতটা আর সব শিক্ষার্থীর জন্য একই ছিল। কিন্তু ফুলপরী খাতুন নামে এক শিক্ষার্থীর জন্য ছিল যেন ‘কালরাত’। ইবির ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে সেই রাতে অমানবিক নির্যাতন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা আবাসিক হলের গণরুমে আটকে রেখে ফুলপরীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। ফুলপরী তখন প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।  এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন এক আইনজীবী। অনুসন্ধানে নির্যাতনের প্রমাণ মিললে ছাত্রলীগের নেত্রীসহ পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।   

সেই ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। গণরুমে ডেকে নির্যাতনের সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি মনে করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট লিখেছেন ফুলপরী। গতকাল বুধবার রাতে দেওয়া সেই পোস্ট তুলে ধরা হলো-

‘২০২৩ সালের ১১, ১২, ১৩, ১৪ ফেব্রুয়ারির সময়টায় আমি যে কত অসহায় ছিলাম! জীবনটা যে একান্তই নিজের, তাই নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে না পারা বোকামি। রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলো শুধু উপদেশ ছাড়া কিছুই দিতে পারে না। তারা ছোটবেলায় খাওয়ায়ে, পড়ায়ে, উপদেশ, ন্যায়-নীতি শিক্ষা দিয়ে হাত ধরে সামনে এগিয়ে দিয়ে সুন্দর করে হাতটা ছেড়ে দিয়ে উপদেশ দিতে শুরু করে- এখন একা বাঁচাতে শেখো।

যখন একাই সামনের দিকে এক পা দু’পা করে হাঁটতে শুরু করি; তখন কিছু কিছু রক্তের সম্পর্কের মানুষদের শিরায় শিরায় হিংসা, বিদ্বেষ জমতে থাকে। তারা সুযোগে সদ্ব্যবহার করতে দ্বিধা-বোধ করে না। অথচ তারা ইচ্ছে করলেই পারে সুন্দর কোনো বই উপহার দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে। কিন্তু তারা দিবে না, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার সুযোগে থাকে।

লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমরা অপরিচিত, অজানা মানুষদের সাথে চলতে, পরিচিত হতে শুরু করি। একটা মানুষ যাকে চিনি না, জানি না তার মুখের ওপর বারবার কেন আঙ্গুল তুলবো! মানুষের সাথে কেনোই বা খারাপ ব্যবহার করবো! সেই ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ভাবতেছিলাম, আমি কি এমন করলাম; যার জন্য এত বড় তুচ্ছতাচ্ছিল্য অপমানের শিকার হলাম! তাহলে কি তিনতলায় উঠায় আমার পাপ ছিল?

ঝামেলা থেকে মুক্তির জন্য নিজেই ছোট হয়েছি, ক্ষমা চেয়েছি, শান্তি চেয়েছি। আর যাই হোক এটা কোনো অপরাধ নয়। রাতে আপামণি ইবি ছাত্রলীগের আরাফাত (সভাপতি), জয় (সাধারণ সম্পাদক)-এর সাথে পরিকল্পনা করে ১১টায় আমার রুমে এসে এত ভালো ব্যবহার করতেছিল, রুমের আপুদের বলেছিল মাত্র টি-শার্ট বিক্রি করে আসলাম এখনই ফুলপরীকে গণরুমে সবকিছু নিয়ে যেয়ে থাকতে হবে। সন্ধ্যায় মামুন ভাই বলছিল- ওই আপু তোমায় গণরুমে নিয়ে যাবে। মানুষের প্রতি অগাধ ইতিবাচক ধারণার কারণে আর বেশি বোকা হওয়ার কারণে আমি তাদের সাথে চলে গেলাম। সেই চলে যাওয়াটা চিরদিনের জন্য চলে যাইনি যে, এটা আমার ভাগ্য!

জীবনে ফেলা আসা রাতগুলোর মধ্যে ওটায় জঘন্যতম রাত। মনে হচ্ছিল কোনো মার্ডার করা আসামির রিমান্ড চলছে, সাথে সুইসাইড নোট। আর শ্বাসকষ্টের জন্য আমারই ইনহেলার চেয়েও পাইনি। চলছে তো চলছেই। রাত শেষ হয়ে যায় তাও প্রতিহিংসা বিন্দু মাত্র কমে না। তারা বলতেছিল- আমাদের এমপি-মন্ত্রী আছে, ডাকেক এখন তোর স্যারকে, কে বাঁচাবে এখন?

আমার মনটা পাথরের মতো শান্ত, শ্বাস-প্রশ্বাসগুলো ছোট হয়ে আসতেছিল। তিনদিন হলো ঠিকঠাক মতো খাওয়া নাই, ঘুমও নাই। মনে হচ্ছিল, কখন যেন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাব। শীতে কাঁপতেছিলাম; মুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিল মুখে আঙ্গুলের দাগ, ঘুষির দাগ মুছে যাওয়ার জন্য। আমার কাছে মনে হয়েছিল এই অত্যাচারের ধরণগুলো কোনো কাপুরুষের শিখিয়ে দেওয়া।

কত মেয়ে ছিল ওই রুমে কেউ কিছুই বলছিল না। কেউ একটাবারের জন্যও বলল না- থাক আর মারিস না। আর যে যা পারতেছিল এটা-সেটা বলে তাদের মারের পরিমাণটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। আমি একবারের জন্যও বলিনি কেন মারছেন? জানি, মনুষ্যত্ববোধহীন প্রাণের মাঝে ন্যায়বোধ থাকে না।

তারা যা করছে তা লোকসমাজের সামনে বলা মানে নিজের মুখে ভাষা আর ব্যক্তিত্বকে ছোট করা তাই সেই রাতে কী কী হয়েছিল কেউ জিজ্ঞেস করলেও বলিনি। এখনও কিছুই বলিনি বললেই চলে। তারা যা করছে, এটা কি কোনো নির্দিষ্ট সংগঠনের ক্ষমতার অপব্যবহার নয়?

তবুও মানুষ আমার চোখ মুখের সামনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আঙ্গুল তুলছে যে, আমাকে কেউ উস্কানি দিচ্ছে এগুলোর প্রতিবাদ করার জন্য। নিজের সম্মান, নিজের অধিকার কীভাবে আদায় করে নিতে হয়, তা আমি ছোট থেকেই খুব ভালো করে জানি। পৃথিবীর কোনো প্রাণীকে ভয় পাওয়ার জন্য জন্ম হয় নাই আমার। তারা ভয় দেখায় যে, মাঝরাতে হল থেকে বের করে দিব শেয়াল কুকুর ছিঁড়ে খাবে। বোকা চন্দ্রবিন্দুরা জানে না- আমি ছোট থেকে শিয়াল-কুকুরের সাথেই অন্ধকারে থেকে বড় হয়েছি, ভয় দেখায়ে লাভ নাই বিন্দুমাত্র।

যাদের চিনি না, যাদের সাথে কোনো শত্রুতা নেই, তারা শুধুমাত্র ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করার জন্য সাধারণ একটা নিরুপায় মনকে দুমড়েমুচড়ে পঙ্গু করে দেয়। মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকারটা হরণ করে নিতে চায়। নিষ্পাপ মনগুলোর হাহাকার, আত্মচিৎকার আপনা-আপনিই অভিশাপে রূপ নেয়। তাদের কর্মফল নিশ্চয়ই বেটার হয়েছে।

সুশীল সমাজের সুশীল নাগরিক যারা তখন ছিলেন, পাঁচটা মেয়ের জন্য তখন খুব মায়া লাগছে, তাও আবার আপনাদের সংগঠনেরই! একটা মেয়েকে জিম্মি করে রাখতে যা যা দরকার তার কোনোটাই বাদ দেয় নাই, যা সদ্য একবছর ক্যাম্পাসে আসা মেয়ের মাথায়ও আসবে না সে যতই উশৃঙ্খল হোক না কেন।

ওইতো একটু সুযোগ পেলেই মানুষ সদ্ব্যবহার করতে শুরু করে। কত মানুষের কত কথা নিঃশব্দে হজম করেছি, এলাকার মানুষ কত বাজে কথা বলেছে; এখনও বলে। শিক্ষিত চশমা আটা মানুষও আমার মুখে উপরই আঙ্গুল তুলেছে। আর মূর্খ এলাকার মানুষদের কী বলবো!

আমি আগেও কোনো অরাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম না। এখন ও নাই। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বোঝার মতো ক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে এত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে লাভ কি!

এলাকার রাজনৈতিক নেতারা বলত- আমার জন্য তাদের পাঁচটি মেয়ের জীবন নষ্ট। এতো মায়া! কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে যে শাস্তিটা দিতে পারতাম তা ইচ্ছাকৃতভাবেই দেয়নি!

পুলিশের অফিসার এসে বলে- আমার স্কুল কোনটা? মানে মাদ্রাসাতে পড়ছি কিনা এটা জানতে চায়। নিজেকে সামলাতে অনেক সময় লেগেছে, যা আমি কখনোই প্রত্যাশা করি নি। এ সমাজ একটা মানুষকে সুন্দরভাবে বাঁচতে দিতে চায় না। পিছন থেকে হাত-পা ধরে টানতে থাকে। 

আমাদের মতো পরিবারের মেয়েদের কথা আর না বলি। তাই বলে ভালো মানুষ নাই নাকি পৃথিবীতে! আছে, অনেক আছে। সুন্দর মনের মানুষ, সুশিক্ষিত, মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন মানুষ আছে বলেই তো আমরা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ সময় বেঁচে থাকতে চাই।

জীবন থেকে, চারপাশের পরিবেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সুন্দর করে বাঁচতে চাই। তাই তেমন কাউকে ভক্তি করি না, মানুষের থেকে দূরে-দূরে থাকি। সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। নিজের সৎ লক্ষ্য পূরণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

আমি বরাবরই চুপচাপ স্বভাবের, এখনও চুপচাপ থাকি। কে কী বলল- এসব কানে নেই না। মানুষ হাজার কথা শুনিয়ে দিলেও কিছুই মনে করি না। কেউ আমার ওপর রাগ দেখিয়ে যদি শান্তি পায়, পেয়ে বড় হোক। কিন্তু বিপদে পড়লে পরিবার ছাড়া কেউ পাশে থাকে না। এজন্য এখন বন্ধু-বান্ধবী নেই বললেই চলে। যারা সামনে প্রশংসা করবে, আড়ালে সমালোচনার এমন মানুষ না থাকায় ভাল।

এখানে (ইবি) পড়তে এসেছি পড়া শেষ হলে চলে যাব, ন্যূনতম যেটুকু পরিচিত হওয়া দরকার ওইটুকুই যথেষ্ট। তবু ও ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এর রাত মস্তিষ্ক যতদিন সুস্থ থাকবে ততো দিন স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র জন য র র জন স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

হিজড়া খাদ্য নিরাপত্তাহীন জনগোষ্ঠী

‘হিজড়া’ বাংলাদেশে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের একটি জনগোষ্ঠী। এখনও পর্যন্ত সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা না থাকলেও, শারীরিক ও মানসিক গঠনে যারা চিরাচরিত নারী বা পুরুষের সবটুকু বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারেন না, এই ধরনের মিশ্র এবং দ্বৈত বৈশিষ্ট্যের অধিকারীরাই সমাজে ‘হিজড়া’ নামে পরিচিত। ভিন্নধর্মী আচরণের কারণে অধিকাংশ হিজড়া ব্যক্তিই পরিবারচ্যুত হওয়ার ফলে সামাজিক বন্ধনের বাইরে এসে সমগোত্রীয়দের সঙ্গে ভাসমান জীবনযাপনে বাধ্য হন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, দেশে হিজড়ার সংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন। কিন্তু লিঙ্গ বৈচিত্র্যের জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণাগত অস্পষ্টতা, পরিচয় প্রকাশের ফলে সামাজিক কলুষতায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়সহ নানা কারণে তাদের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।
সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে এবং ২৮ অনুচ্ছেদে লিঙ্গ বা অন্য কোনো পার্থক্যের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও বাস্তবতায় হিজড়া জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার। রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় তাদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু থাকলেও, তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবকাঠামোগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ব্যক্তির বৈচিত্র্য বা সীমাবদ্ধতা এখানে প্রধান বাধা নয়; বরং সামাজিক এবং প্রশাসনিক অন্তর্ভুক্তির ঘাটতিই তাদের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। ‘কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না’– এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারণ করা হলেও, হিজড়া জনগোষ্ঠী এখনও পিছিয়ে রয়ে গেছে।
মূলধারার শিক্ষার অভাব, কর্মসংস্থানের সংকীর্ণ পরিসর, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার অভাব, পারিবারিক সম্পদ থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং নানাভাবে পারিবারিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বাজার, যানবাহন, ট্রাফিক সিগন্যালে চাঁদা তোলার মতো ঐতিহ্যগত অনিশ্চিত পেশার ওপর নির্ভরশীল। ফলে তারা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আবদ্ধ থেকে যান এবং খাদ্যনিরাপত্তাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয় তাদের।
দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে এ সংকট আরও প্রকট হয়। গত বছর আগস্টের শেষ দিকে দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় সরকারি-বেসরকারি সহায়তা কার্যক্রমে হিজড়ারা প্রায় উপেক্ষিত ছিলেন। নোয়াখালীর মাইজদীর বাসিন্দা মিথিলা হিজড়া জানান, শুধু হিজড়া পরিচয়ের কারণে একই বিল্ডিংয়ের একই মানের বাসায় থেকেও অন্যদের চেয়ে তাদের বেশি ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। বন্যায় তাদের ডেরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের অনেক সমগোত্রীয় এখানে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলে পাড়াপ্রতিবেশীদের কাছ থেকে নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। ত্রাণ বিতরণের সময় লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে তারা উপেক্ষিত হয়েছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে ত্রাণ গ্রহণ করতে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় চাইতে গিয়েও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের কাছ থেকে চেয়ে চাঁদা তুলে জীবন চালাই, খাবারের সংস্থান করি। কিন্তু বন্যায় যখন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আমাদের আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনের কথা বাদ দিলেও, প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করাই আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’
প্রাপ্যতা, প্রবেশগম্যতা, ব্যবহার ও স্থিতিশীলতা– আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত খাদ্যনিরাপত্তার এই চার স্তম্ভ অনুযায়ী হিজড়া জনগোষ্ঠীর অবস্থা বিশ্লেষণ করলে প্রতিটি পর্যায়ে বৈষম্যই চোখে পড়ে। বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্যসহায়তা যেমন– ভিজিএফ, ভিজিডি, ১০ টাকার চাল, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট উপাত্ত অনুপস্থিত। অধিকাংশ হিজড়া ব্যক্তি মূলধারার অর্থনীতির বাইরে থাকায় কৃষি বা খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না এবং একইসঙ্গে অনানুষ্ঠানিক ও অনিশ্চিত পেশার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় দুর্যোগ বা অর্থনৈতিক মন্দার সময় খাদ্য কেনার সামর্থ্য কমে যায়। অনেক হিজড়া ব্যক্তি ভাসমান জীবনযাপন করেন এবং অনেকে ভাড়া বাসায় থেকেও বেশি ভাড়া দিতে বাধ্য হন, যা তাদের দৈনন্দিন খাদ্য কেনার বরাদ্দ কমাতে বাধ্য করে। ফলে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। যেহেতু তাদের আয়ের উৎস অনিশ্চিত, তাই দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত নয়।
২০১৪ সালে সরকারি চাকরিতে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা আসার পর কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিলেও তা খুবই সীমিত। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু থাকলেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে টেকসই কর্মসংস্থানে রূপ নেয়নি। ফলে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত না হওয়ায় খাদ্যনিরাপত্তার সংকট থেকেই যাচ্ছে। v
লেখক: উন্নয়ন কর্মী
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন চা-ওয়ালার স্বপ্ন 
  • ইউরোপে পড়ালেখার এই জনপ্রিয় বৃত্তির সুযোগ কি আপনিও নিতে চান
  • প্রচারের নামে ২২ কোটি টাকা তছরুপ, কম্বলের টাকাও হাওয়া
  • হিজড়া খাদ্য নিরাপত্তাহীন জনগোষ্ঠী
  • ২০২৩ সালের অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল মাস্টার্সে পড়েত চাইলে আবেদন করুন দ্রুত
  • ব্রাজিলের হয়ে এবারও খেলা হচ্ছে না নেইমারের
  • ফেইথের ‘ফাঁদে’ ফতুর প্রবাসী চান পরিত্রাণ
  • যেভাবে পরিকল্পনা করে ছিনতাই করা হয় ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা
  • ৪৪১ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে লাফার্জহোলসিম