কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে পদবঞ্চিত নেতাদের অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা বিএনপি  সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার। সংবাদ সম্মেলন থেকে জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালালে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘পদবঞ্চিত ব্যানারে জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তারা বলছে জেলা বিএন‌পির দায়িত্বশীল নেতারা কুষ্টিয়ায় চালকলমালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করার জন্য চালের দাম বেড়ে গেছে—এ কথা পাগল আর আহাম্মক ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না। এ ব্যাপারে আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, কোনো চালকলমালিক যদি বলতে পারেন আমরা তাঁদের কাছে চাঁদা চেয়েছি, তাহলে আমরা দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াব।’

জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘তাঁরা (পদবঞ্চিতরা) বলছেন স্থানীয় মদের দোকান থেকে জেলা বিএনপির নামে মাসে দুই লাখ করে টাকা নেওয়া হয়। এরপর বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে স্বৈরাচারের শাসনামলে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। সেখানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও আমি মালিকানা নিয়েছি।’ এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই উল্লেখ করে এই অপপ্রচারের সত্যতা অনুসন্ধানের জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসরদের সঙ্গে আঁতাত করে বিলাসী জীবন যাপন করা ব্যক্তিরা ৫ আগস্টের পর এখন জেলা বিএনপির নেতা সাজার চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্বৈরাচারের আমলে জেলার শত শত বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ায় কেউ কেউ কারাগারে আবার অনেকেই পলাতক থেকে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। স্বৈরাচারের দোসররা তাদের ওপর চালিয়েছে অকথ্য নির্যাতন। সেদিন তাদেরকে সাহায্য–সহযোগিতা করার কেউ ছিল না। আমরা সেদিন নিজেরা বিপদে থেকেও সাধ্যমতো বিপদগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আর তাই কর্মীদের মনের কষ্ট বুঝেই হয়তো কেন্দ্রীয় বিএনপি কুষ্টিয়াতে আমাদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, যখন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আস্থা বাড়ছে, তখন একসময়ের বিতর্কিত কতিপয় ব্যক্তি স্বৈরাচারের দোসরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাঁরা আজ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তাঁদের অতীত কর্ম আপনাদের জানা আছে। কারা অতীতে সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে, বালুমহল থেকে চাঁদাবাজি করতেন। কে বা কারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি লুটেপুটে খেতেন? কারা চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জিকে, জেলা পরিষদ, সিভিল সার্জন অফিস, জেনারেল হাসপাতাল ও জেলখানায় টেন্ডার–বাণিজ্য করে কোটি টাকার মানুষ বনে গেছেন? অতীতে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যাঁরা চাঁদাবাজি-লুটপাট করতেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে থেকে এখন বিএনপির নেতা সাজার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিএনপির পদ পেলে তাঁরা আবার হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে চাঁদাবাজি আর লুটপাট করতে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার, যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম আলমসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা বলেন, পদবঞ্চিত ব্যানারে কতিপয় চিহ্নিত ব্যক্তি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁদের অশালীন বক্তব্য ও  প্রচারণায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেমন মর্মাহত, তেমন ক্ষুব্ধ। এসব বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি নেতারা আরও বলেন, ‘অনেক ধৈর্য ধারণ করেছি, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অবিলম্বে তাদের অশালীন বক্তব্য ও মিথ্যাচার পরিহার করে দলের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ক র হ স ন সরক র ব এনপ র ন ত পদবঞ চ ত ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

লোহাগড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন ‘পদবঞ্চিত’ নেতা–কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা এসব কর্মসূচি পালন করেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত বছরের ২৬ অক্টোবর লোহাগড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন হয়েছিল। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি এই দুই কমিটির ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়; কিন্তু এসব কমিটিতে ১৭ বছর ধরে মাঠে থেকে নির্যাতন সহ্য করে দলের জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা স্থান পাননি। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, স্বৈরাচারী জাতীয় পার্টির সক্রিয় কর্মী ও দোসররা দলে টাকা ও উপঢৌকন দিয়ে পদ পেয়েছেন।

এই পরিস্তিতিতে পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার সিঅ্যান্ডবি চৌরাস্তা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে লোহাগড়া বাজার ও বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে এসে সমবেত হয়। সেখানে কিছু সময়ের জন্য যশোর-কালনা মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। পরে যানজট সৃষ্টি হলে সড়কের এক পাশ ছেড়ে দেন তাঁরা।

সমাবেশে নবগঠিত উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাচ্চু মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম শিকদার, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ সাইফুল্লাহ মামুন, সদ্য সাবেক জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব ইনামুল হক চন্দন, লোহাগড়া উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব মেজবাহ উদ্দিন পারভেজ, নড়াইল জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাইবুল হাসানসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
ছাত্রদল নেতা তাইবুল হাসান বলেন, টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে পৌর ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আর পদে বসেই দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছেন। কমিটিতে অযোগ্য, অদক্ষ ও আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট লোকদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতা সাচ্চু মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর যাঁরা আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন, তাঁরা কমিটিতে স্থান পাননি। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন এবং মাশরাফিকে ফুল দিয়ে বরণ করা থেকে শুরু করে অবৈধ জাতীয় নির্বাচনে তাঁর পক্ষে প্রচার চালানো সুবিধাবাদী লোকগুলোকে বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে আনা হয়েছে। অনতিবিলম্বে লোহাগড়া পৌর ও উপজেলা কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিক্ষোভকারীদের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আহাদুজ্জামান ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান। তাঁদের দাবি, অর্থের বিনিময়ে কোনো কমিটি করা হয়নি। কমিটি হয়েছে সবার মতামত নিয়ে।

পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান বলেন, নেতা-কর্মীদের মতামতের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনেক নেতা–কর্মী স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নাম দিয়েছিলেন, কিন্তু মাঠের নেতা–কর্মীদের স্থান দিতে তাঁদের সে নামগুলোকে কমিটিতে রাখা হয়নি।

মশিয়ার রহমান আরও বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার পর আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলাম, কমিটি নিয়ে কোনো সমস্যা মনে হলে প্রমাণ সাপেক্ষে আলোচনা ও যুক্তিতর্কের সুযোগ আছে। কিন্তু তাঁরা কেউ আসেনি। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে স্থানীয় রাজনীতির ষড়যন্ত্র হিসেবে তাঁরা আলোচনায় না বসে রাস্তায় মিছিল করছেন। এটা দল করা নয়, দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর বিক্ষোভে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিলেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আহাদুজ্জামান বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে উপজেলা বিএনপির কমিটি করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কমিটি নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ
  • লোহাগড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ