সৌদি বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ অ্যালকোহল
Published: 13th, February 2025 GMT
২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে সৌদি আরবে, এটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সমর্থকদের সমাগম, উৎসবমুখর পরিবেশ, আর অনেকের কাছেই এর সঙ্গে অ্যালকোহল পান জড়িয়ে থাকে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ বিশ্বকাপের অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে, দেশটিতে মদ্যপানের কোনো সুযোগ থাকবে না।
বুধবার যুক্তরাজ্যে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সৌদ নিশ্চিত করেছেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া দর্শকরা সৌদি আরবে মদ পান করতে পারবেন না। এমনকি হোটেলেও অ্যালকোহল বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, 'আমাদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।'
যুক্তরাজ্যের এলবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত বলেন, 'এই মুহূর্তে আমরা মদ অনুমোদন করি না। মদ ছাড়া আনন্দ করা সম্ভব- এটি মোটেও অপরিহার্য নয়। কেউ চাইলে সৌদি ছাড়ার পর পান করতে পারেন, তবে আমাদের দেশে এই সুযোগ নেই। আমাদের আবহাওয়ার মতোই, এটি একটি শুষ্ক দেশ।'
এর আগে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও মদ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। আয়োজক দেশ প্রথমে স্টেডিয়ামে মদ বিক্রির অনুমতি দিলেও উদ্বোধনের দুই দিন আগে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে। তবে নির্দিষ্ট কিছু হোটেল ও ফ্যান পার্কে মদ পান করার সুযোগ রেখেছিল কাতার।
বিশ্বকাপে আসা সমর্থকদের জন্য অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করাকে কতটা আতিথেয়তাপূর্ণ মনে করা যায়—এই প্রশ্নের জবাবে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, 'প্রত্যেকেরই নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতিতে সবাইকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত, তবে অন্যদের জন্য নিজেদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করব না। এ সময় তিনি আরও বলেন, "একবার ভেবে দেখুন, সত্যিই কি আপনি এক গ্লাস পানীয় ছাড়া থাকতে পারবেন না?'
সৌদি আরবে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগে থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আশঙ্কা করছে, অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণের শিকার হতে হবে এবং নির্মাণকাজে প্রাণহানি ঘটতে পারে।
এছাড়া সৌদিতে সমকামিতা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হওয়ায়, সমকামী সমর্থকরা সেখানে নিরাপদে থাকতে পারবেন কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। তবে রাষ্ট্রদূত আশ্বস্ত করেছেন, 'আমরা সৌদি আরবে সবাইকে স্বাগত জানাব। এটি শুধু সৌদি আরবের নয়, এটি একটি বিশ্ব ইভেন্ট। যে কেউ আসতে চাইলে তাকে যথাসম্ভব স্বাগত জানানো হবে।'
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ১৭৬ ইটভাটা
দিনাজপুরে লোকালয়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনসহ কোনো দপ্তরেরই ছাড়পত্র নেননি মালিকরা। ভাটাগুলো বছরের পর বছর ধরে পরিবেশ দূষিত করে চলছে। এর প্রভাবে আশপাশের কৃষিজমির ফলনও কমছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের পূর্ব রামনগর এলাকার এমবি ব্রিকসের চারপাশে বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও লিচু বাগান। আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ইটভাটাটি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শেখপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের। তিনি আত্মগোপনে থাকলেও তাঁর বাহিনী রয়ে গেছে। তাদের দাপট কমেনি। এ কারণে কৃষকের ক্ষতি হলেও মুখ খোলার সাহস নেই কারও।
শুধু এই ইটভাটা নয়, দিনাজপুরের ২৪২টি ইটভাটার মধ্যে ১৭৬টিই অবৈধ। এসব ইটভাটায় নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এর মধ্যে সদর উপজেলাতে ১১টি, পার্বতীপুরে ৩২টি, কাহারোলে ৫টি, বীরগঞ্জে ২১টি, চিরিরবন্দরে ২৯টি, খানসামায় ৭টি, বোচাগঞ্জে ১৩টি, বিরামপুরে ৬টি, ঘোড়াঘাটে ৬টি, ফুলবাড়ীতে ১১টি, বিরলে ১৩টি, নবাবগঞ্জে ২১টি, হাকিমপুরে ১টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।
এদিকে দেরিতে হলেও দিনাজপুরে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গত চার মাসে ১৬টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৮ এপ্রিল এক দিনেই সদর উপজেলার এসআরবি ব্রিকস, চিরিরবন্দরের এবি ব্রিকস, আরএস ব্রিকস, নিউ আরএস ব্রিকস, এসকে ব্রিকস, পার্বতীপুরের এসএইচবি ব্রিকস, এসআরবি-২ ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকসে অভিযান চালিয়ে ৪৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পরের দিন নবাবগঞ্জের হরিপুর এলাকায় এমএস ব্রিকসকে ১ লাখ ও এসএনএম ব্রিকসকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে গত ১০ মার্চ হাকিমপুরের মেসার্স আইপি ব্রিকসকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে ইটভাটার আগুন নিভিয়ে ও চুল্লিসহ চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়। ৯ মার্চ চিরিরবন্দরের মেসার্স আরএ ব্রিকসের এবং ৭ মার্চ নবাবগঞ্জের মেসার্স ডব্লিউআরএস ব্রিকসের চুল্লি ও চিমনি ভেঙে উৎপাদন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চিরিরবন্দরের আরকে ব্রিকস ও এমআর ব্রিকসে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি বিরলে এইচআরবি ব্রিকসকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জরিমানার পাশাপাশি এসব ইটভাটার আগুন নিভিয়ে চুল্লি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। সহযোগিতা করেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মলিন মিয়া জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কেউ ইট উৎপাদন করতে পারেন না। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটায় পর্যায়ক্রমে অভিযান চালানো হয়েছে।