২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে সৌদি আরবে, এটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সমর্থকদের সমাগম, উৎসবমুখর পরিবেশ, আর অনেকের কাছেই এর সঙ্গে অ্যালকোহল পান জড়িয়ে থাকে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ বিশ্বকাপের অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে, দেশটিতে মদ্যপানের কোনো সুযোগ থাকবে না।

বুধবার যুক্তরাজ্যে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সৌদ নিশ্চিত করেছেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া দর্শকরা সৌদি আরবে মদ পান করতে পারবেন না। এমনকি হোটেলেও অ্যালকোহল বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, 'আমাদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।'

যুক্তরাজ্যের এলবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত বলেন, 'এই মুহূর্তে আমরা মদ অনুমোদন করি না। মদ ছাড়া আনন্দ করা সম্ভব- এটি মোটেও অপরিহার্য নয়। কেউ চাইলে সৌদি ছাড়ার পর পান করতে পারেন, তবে আমাদের দেশে এই সুযোগ নেই। আমাদের আবহাওয়ার মতোই, এটি একটি শুষ্ক দেশ।'

এর আগে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও মদ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। আয়োজক দেশ প্রথমে স্টেডিয়ামে মদ বিক্রির অনুমতি দিলেও উদ্বোধনের দুই দিন আগে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে। তবে নির্দিষ্ট কিছু হোটেল ও ফ্যান পার্কে মদ পান করার সুযোগ রেখেছিল কাতার।

বিশ্বকাপে আসা সমর্থকদের জন্য অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করাকে কতটা আতিথেয়তাপূর্ণ মনে করা যায়—এই প্রশ্নের জবাবে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, 'প্রত্যেকেরই নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতিতে সবাইকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত, তবে অন্যদের জন্য নিজেদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করব না। এ সময় তিনি আরও বলেন, "একবার ভেবে দেখুন, সত্যিই কি আপনি এক গ্লাস পানীয় ছাড়া থাকতে পারবেন না?'

সৌদি আরবে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগে থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আশঙ্কা করছে, অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণের শিকার হতে হবে এবং নির্মাণকাজে প্রাণহানি ঘটতে পারে।

এছাড়া সৌদিতে সমকামিতা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হওয়ায়, সমকামী সমর্থকরা সেখানে নিরাপদে থাকতে পারবেন কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। তবে রাষ্ট্রদূত আশ্বস্ত করেছেন, 'আমরা সৌদি আরবে সবাইকে স্বাগত জানাব। এটি শুধু সৌদি আরবের নয়, এটি একটি বিশ্ব ইভেন্ট। যে কেউ আসতে চাইলে তাকে যথাসম্ভব স্বাগত জানানো হবে।'

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স দ আরব আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

দ্রুত সত্যায়ন জটিলতা দূর করুন

আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বড় গন্তব্যস্থল সৌদি আরব। দেশটিতে আরও বেশি শ্রমিক পাঠানোর বড় সুযোগ এখন। কারণ, ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক ঘোষণার পর দেশটিতে কর্মীর চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সত্যায়ন জটিলতার কারণে সৌদি আরবে অভিবাসী কর্মী পাঠানোর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশে বেকারত্বের সংকট কাটাতে প্রবাসে কর্মসংস্থানের যে সুযোগ, সেটিই এখানে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি আসলে কোনোভাবে মানা যায় না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

বর্তমান বিশ্বে বহুমুখী শ্রমবাজার ধরতে আমরা বরাবরই ব্যর্থ। দক্ষ, প্রশিক্ষিত, ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন জনবল গড়ে না তোলার কারণে এ দেশের মানুষ প্রবাসী কর্মী হিসেবে চাহিদামাফিক উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে না। এটি আমাদের নীতিনির্ধারকদের চরম ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়। ফলে এ দেশের শ্রমবাজার ঘুরেফিরে মধ্যপ্রাচ্য এবং এর বাইরে মাত্র কয়েকটি দেশকেন্দ্রিক। বিদেশে আমাদের এই ছোট শ্রমবাজারের পরিসর আরও বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও করা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সদিচ্ছার অভাবে। এর মধ্যে যখন সংবাদ শিরোনাম হয় সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো কমে এসেছে, তা কোনো অর্থেই সুখকর নয়।

২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক হওয়ায় সৌদি আরবে আরও বেশি কর্মী পাঠানোর বড় সুযোগ এখন আমাদের। দেশটিতে কর্মীর চাহিদা ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। গত অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৮০ হাজারের বেশি কর্মী গেছেন দেশটিতে। কিন্তু গত মাসে এ সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সংগঠন বায়রার সদস্যরা বলছেন, কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়ন জটিলতায় সৌদিতে কর্মী পাঠানো কমছে।

সৌদি আরব থেকে আসা কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র যাচাই-বাছাই করে তা সত্যায়ন করে পাঠায় দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস। একজন কর্মীর চাহিদাপত্র এলে দূতাবাসের সত্যায়ন প্রয়োজন হয় না, একের অধিক হলেই তা সত্যায়ন করাতে হয়। এতে দীর্ঘসূত্রতা বেড়েছে। সময়মতো কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না। আগে ২৪টি পর্যন্ত নিয়োগপত্রের সত্যায়ন প্রয়োজন ছিল না। গত ২২ ডিসেম্বর থেকে নতুন নিয়ম চালু করে সরকার। বায়রা সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ কর্মী যান ছোট ছোট চাহিদাপত্রের মাধ্যমে। মানে ১ থেকে ২৪টি পর্যন্ত চাহিদার মাধ্যমে। তাই দূতাবাসের সত্যায়ন জটিলতায় এখন ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করা যাচ্ছে না। তাঁদের দাবি, আগের নিয়মে সত্যায়ন চালু করা হোক।

আমরা আশা করব, বায়রার এ অভিযোগ ও দাবি আমলে নেবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এখানে আরও কী কী সংকট ও জটিলতা আছে, তা চিহ্নিত করতে হবে। বিগত সরকারের আমলের মতো প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর জন্য কোনো মাফিয়া চক্রকে সচল হতে দেওয়া যাবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্রুত সত্যায়ন জটিলতা দূর করুন