সিলেটে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্ব বেতার দিবস-২০২৫ উদযাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার সিলেটের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকালে বেতার প্রাঙ্গণে নানা আয়োজনে বিশ্ব বেতার দিবস উদযাপন করা হয়। দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে মিরের ময়দানে বাংলাদেশ বেতার সিলেট প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রার পর সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং পরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। 

শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো.

রেজা-উন-নবী বলেন, বাংলাদেশ বেতার বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশিদের জন্য। এটি বিশেষ কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য নয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, অতীতে বাংলাদেশ বেতারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে এবং সেখানে শুধু সরকারের গুণকীর্তন করা হয়েছে। শুধু গুণকীর্তন করে কোনো সরকার কিংবা মত-দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। মানুষের আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করলেই তা কেবল সফলতা লাভ করে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ বেতার সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তারিক বলেন, বাংলাদেশ বেতার প্রচার কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সংযোজন করেছে। বিদ্যমান গতানুগতিক মাধ্যমের পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও আমাদের সকল আয়োজন প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সকল আয়োজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ফলে বেতারের শ্রোতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণকে বেতারের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত করতে আমরা এই ধারা অব্যাহত রাখব।

অনুষ্ঠানে মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি, কবি ও বাচিক শিল্পী সালেহ আহমেদ খসরু, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সাধারণ সম্পাদক সেলিম আওয়াল, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার সম্পাদক মুকতাবিস উন নূর, দৈনিক সিলেটের ডাকের ক্রীড়া সম্পাদক বদরুদ্দোজা বদর, বিশিষ্ট নাট্য শিল্পী শামসুল বাসিত শেরো, আঞ্চলিক প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও উপ-বার্তা নিয়ন্ত্রক সঞ্জয় সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা শেষে শোভাযাত্রাটি বেতার প্রাঙ্গণ থেকে যাত্রা শুরু করে পুলিশ লাইন মোড় হয়ে ফের বেতার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র ঙ গণ

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের ফুটবলে প্রবাসী ফাইভস্টার

শুরুটা হয়েছিল জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে আবির্ভাব ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া জামালের। দীর্ঘ ছয় বছর পর দ্বিতীয় প্রবাসী হিসেবে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ান তারিক রায়হান কাজী। গত বছর কানাডা প্রবাসী সৈয়দ শাহ কাজেমের সঙ্গে বড় নাম ইংলিশ লিগে খেলা হামজা চৌধুরী। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজার সঙ্গে পঞ্চম প্রবাসী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ইতালিতে বেড়ে ওঠা ফাহমিদুল ইসলাম। আজ ইংল্যান্ড থেকে সিলেটে আসছেন হামজা। বাংলাদেশের ফুটবলে একসঙ্গে পাঁচ প্রবাসী। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপনই বলা চলে। সেই পাঁচ প্রবাসী নিয়ে সমকালের আয়োজন…

ইংলিশ লিগ থেকে হামজা দেওয়ান চৌধুরী: বাবা: মোর্শেদ দেওয়ান চৌধুরী, মা: রাফিয়া চৌধুরী। চার-পাঁচ বছর ধরে প্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরীকে নিয়ে কাজ করে আসছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ইংলিশ ক্লাব লিস্টার সিটিতে খেলার সময় এ ডিফেন্ডার জড়িয়েছিলেন ইংল্যান্ড যুব দলের জার্সি। বড় ক্লাবে খেলার সঙ্গে ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে মাঠ মাতানো হামজাকে পেতে সব চেষ্টায়ই করে আসছিল বাফুফে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে লিস্টার সিটি, ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন থেকে ছাড়পত্র মেলে তাঁর। কিন্তু মূল ছাড়পত্র বাকি ছিল ফিফার। অনেক চিঠি চালাচালির পর গত বছর বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও হামজাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি দেয়। সবকিছু ঠিক থাকলে হামজা চৌধুরীর মতো একজন গ্লোবাল স্টারের ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হবে। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এ ডিফেন্ডারের আজ সিলেটে আসার কথা। হামজার মা রাফিয়া চৌধুরী বাংলাদেশি। তাঁর নানার বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নে। হামজা একজন ক্যারিবিয়ানের সন্তান। মা রাফিয়া চৌধুরীর বিয়ে হয়েছিল একজন্য ক্যারিবিয়ানের সঙ্গে। কিন্তু সেখানে তার সংসার করা হয়নি রাফিয়া চৌধুরীর। পরে দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে হামজার মায়ের বিয়ে হয়। তাই তিনি হামজার বায়োলজিক্যাল সন্তান নয়। হামজা ছাড়াও দেওয়ান মোরশেদের ঘরে আরো তিন সন্তান রয়েছে।

শিকড়ের টানে জামাল ভূঁইয়া: বাবা: ইনসান ভূঁইয়া, মা: রাজিয়া আক্তার। ২০১৩ সালের আগে অনেক প্রবাসী বাফুফেতে ট্রায়াল দিয়েও পাস করতে পারেননি। তাদের মধ্যে ছিলেন ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়াও। ডেনমার্কে থাকা অবস্থায় লাল-সবুজের জার্সি গাঁয়ে জড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। ২০১১ সালে বাংলাদেশে ট্রায়াল দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ডেনমার্কে। কারণ মানিয়ে নিতে পারেননি বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে। ২০১৩ সালে আবার এসে ট্রায়ালে সবার মন জয় করে নেন। প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে লাল-সবুজের জার্সিতে খেলেছিলেন ওই বছরের ৩১ আগস্ট নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে। সেই যে শুরু, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এ মিডফিল্ডারকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেছেন বাংলাদেশের ফুটবলের পোস্টারবয়। জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গোল করে এবং করিয়ে আলোচনায় এসেছেন জামাল।

ইতালি থেকে ফাহমিদুল ইসলাম: প্রবাসী হামজা চৌধুরীকে নিয়ে যখন আলোচনায় পুরো দেশ, তখন বড় চমক হয়ে আসে ইতালি প্রবাসী ফাহমিদুল ইসলামের নাম। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার প্রাথমিক দলে প্রবাসী ফাহমিদুলের অন্তর্ভুক্তিতে নতুন আলোচনা শুরু হয়। তাঁর ব্যাপারে তথ্য দিতে বাফুফে গোপনীয়তা অবলম্বন করে। ফাহমিদুলের বেড়ে ওঠা ফেনীতে। তিনি ইতালির সিরি’এ ডি লিগের ক্লাব ওলবিযা ক্যালসিওর হয়ে লেফট ব্যাক এবং লেফট উইং ব্যাক পজিশনে খেলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সৌদি আরবের ক্যাম্পে আছেন ফাহমিদুল। ইতোমধ্যে দলের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরেছেন।

ক্রিকেটার বাবার ছেলে সৈয়দ শাহ কাজেম: বাবা: হালিম শাহ। নব্বই দশকে ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ হালিম শাহ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভালো করলেও কখনোই জাতীয় দলে খেলা হয়নি তাঁর। তবে ক্রিকেটার বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন সৈয়দ শাহ কাজেম। তিনি ক্রিকেটার হননি, হয়েছেন ফুটবলার। এরই ধারাবাহিকতায় কানাডা প্রবাসী এই ফুটবলার বাংলাদেশের জার্সি গায়েও জড়িয়েছেন। ২০০৫ সালে কানাডায় পাড়ি জমান হালিম শাহ। সেই সময় কাজেমের বয়স ছিল ৭। প্রথমে ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন ছিল হালিম শাহর। কিন্তু কানাডার টরন্টোতে ফুটবলই ছিল প্রথম দর্শন। ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন কাজেম। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলে বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০২১ সালে ঢাকায় ফিরে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে ক্যারিয়ার শুরু করতে চেয়েছিলেন। পাসপোর্টসহ অন্যান্য জটিলতায় তখন খেলা হয়নি। পরের মৌসুমে পুলিশ এফসির হয়ে খেলা শুরু কাজেম শাহর। ঘরোয়া লিগে পারফরম্যান্স করার পুরস্কার হিসেবে কাজেম এখন জাতীয় দলেরও গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ