ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার তাওরা গ্রামের মিলন হোসেন ৮০০টি লালগোলাপ নিয়ে ভোর সোয়া ৬টায় গদখালী পাইকারি ফুলের মোকামে আসেন। বাইসাইকেলের ওপরে রেখে হাক ডাকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত একটি গোলাপও তিনি বিক্রি করতে পারেননি। কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না বলে তিনি বিক্রি করতে পারছেন না।

মিলন হোসেন বলেন, এ বছর গোলাপের বাজার ভালো না। প্রতিটি গোলাপের দাম ৭ থেকে ৮ টাকার বেশি দাম কেউ বলছে না। ব্যাপারীরা যে দাম বলছে, তাতে উৎপাদন খরচ উঠছে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্ধেকের কম দাম বলছে।

বুধবার ভোরে ঘন কুয়াশা। শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে ফুলচাষীরা গোলাপ, গাদা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, মল্লিকা, জিপসী ফুল ও কামিনী পাতা নিয়ে গদখালী পাইকারি মোকামে আসেন। দুই হাজারের বেশি চাষী এই মোকামে ফুল বিক্রি করতে পসরা সাজিয়ে বসেন। সেই ফুল কিনতে সারাদেশ থেকে পাইকারি ফুলের ক্রেতারাও বাজারে জড়ো হন। ভোর থেকে জমজমাট কেনাবেচা শুরু হয়। যা চলতে থাকে বেলা ১১টা পর্যন্ত।

ফুলচাষীরা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের দাম কমেছে। পটুয়াপাড়া গ্রামের গেলাপ চাষী মনিরুল ইসলাম বাবু বলেন, ৩৬ শতক জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করেছি। সকালে তিন হাজার গোলাপ নিয়ে বাজারে এসেছি। এরমধ্যে এক হাজার ২০০টি লালগোলাপ ও এক হাজার ৮০০টি ক্যাপ পরানো গোলাপ রয়েছে। ক্যাপ পরানো পোলাপ ৫ টাকা ও ক্যাপ বাদে লালগোলাপ সাড়ে ১১ টাকা করে প্রতিটি বিক্রি করেছি।

ফুলচাষীরা জানান, ৩৩ শতকের এক বিঘা গোলাপ চাষ করতে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। রোপণের তিন মাস পর থেকে ফুল কাটা যায়। একবার রোপণ করলে ১০ থেকে ১২ বছর ফুল কাটা যায়। পরিচর্যার জন্যে প্রতি মাসে সার কীটনাশক ছিটাতে শ্রমিক খরচ হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা। বছরে শীতের তিন মাস ফুলের ভরা মৌসুম। এই তিন মাস ফুল বিক্রির জন্যে সারাবছর খেত পরিচর্যা করতে হয়। কিন্তু এ বছর ফুলের দাম পড়ে গেছে।

ফুলচাষী জালাল উদ্দীন বলেন, এ বছর ৩৮ শতক জমিতে চাষ করেছি। সকালে তিন হাজার গোলাপ হাটে এনেছি। সাড়ে তিন টাকা দরে প্রতিটা গোলাপ বিক্রি হয়েছে। এক লাখ ২০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ। এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ হাজার টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা ও গাদা ফুলের সরবরাহ অনেক বেশি। ঢাকা, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ফুল কিনে বাসের ছাদ, মাইক্রোবাস, পিকআপে তুলে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, মানভেদে প্রতিটা গোলাপ সাড়ে ৩ টাকা থেকে ১৪ টাকা, গ্লাডিওলাস ৬ থেকে ১২, রজনীগন্ধা ৩ থেকে ৬, জারবেরা ১০ থেকে ১৮, গাদা প্রতি হাজার ৫০০ টাকা, জিপসী ফুল প্রতি মুঠো ২০ ও কামিনী পাতা প্রতিমুঠো ৫০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে।

বরিশাল থেকে ফুল কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী তওসিফ রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর গোলাপ ও গ্লাডিওলাস কম দামে কিনেছি। গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, গাদা সব ধরনের ফুল কিনে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।

পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে যশোরের গদখালী এলাকার চাষীদের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকে। প্রতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি গদখালী বাজারে সবচেয়ে জমজমাট হাট বসে। চাষীরা এই দিনটির অপেক্ষায় সারাবছর বসে থাকেন। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভালোবাসা দিবসের দিনেই পবিত্র শবে বরাত পড়ায় ফুল ব্যবসায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ফলে শেষমুহুর্তেও দাম বাড়েনি ফুলের। আর দাম পড়ে যাওয়ায় ফুল চাষীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে।

গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুলের দাম কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে গদখালী ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, এ বছর হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল বেশি ফুটেছে। গ্লাডিওলাসের উৎপাদন তুলনামূলক এবার বেশি। যে কারণে গেলাপের চাহিদা একটু কমেছে। এতে গোলাপ ও গ্লাডিওলাসের দাম কমেছে। এছাড়া এ বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই মুসলিম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শবে বরাত পড়ছে। যে কারণে ফুলের খুচরা ব্যবসায়িরা ঝুঁকি নিচ্ছেন না।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আবু তালহা বলেন, যশোর জেলায় ৬৩৭ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ রয়েছে। প্রায় তিন হাজার চাষী ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এখন ফুল চাষের ভরা মৌসুম। ফলে উৎপাদন বেশি। পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ফুলের উৎপাদন বাড়ে। এখন বাজারে চাহিদার তুলনায় ফুলের যোগান বেশি। যে কারণে দাম কিছুটা কমেছে। দুই একদিন পরে দাম আবার একটু বাড়বে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ য ল ন ট ইন স ড ব যবস য় গদখ ল এ বছর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

রিসোর্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ, ২৬ ঘণ্টা পর মিললো মরদেহ

গাজীপুরের শ্রীপুরে রিসোর্টের লেকে গোসল করতে নেমে আরিয়ান স্বপ্নীল (১৪) নামের এক কিশোর নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ২৬ ঘণ্টা পর তার মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। 

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলের দিকে প্রহলাদপুর ইউনিয়নের গজারিতলা গ্ৰামে ফ্যামিলি মার্টের মালিকানাধীন রিসোর্টের লেক থেকে স্বপ্নীলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরআগে সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ১টায় লেকে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় স্বপ্নীল।

নিহত আরিয়ান স্বপ্নীল গাজীপুর সদর উপজেলার হারিনাল গ্ৰামের মো. রাসেলের ছেলে। সে তার বাড়ির স্থানীয় একটি স্কুলের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শ্রীপুরের প্রহলাদপুর এলাকায় খালার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল সে। পাশের ফ্যামিলি মার্ট রিসোর্টের লেকে সাঁতার কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হয়।

আরিয়ান স্বপ্নীলের বাবা মো. রাসেল বলেন, “তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে প্রহলাদপুর ইউনিয়নের গজারিতলা গ্ৰামে ফ্যামিলি মার্টের মালিকানাধীন লেকের পানিতে সাঁতার কাটতে নেমেছিল। ছোট ছেলেকে নিয়ে সাঁতার কাটার সময় বড় ছেলে আরিয়ান স্বপ্নীল ফুটবল নিয়ে লেকে নেমে পড়ে। এক পর্যায়ে সে পানিতে তলিয়ে যায়।”

স্বপ্নীলের চাচি ফারজানা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, “রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ এখানে অবহেলা করেছেন। তাদের উচিত ছিল তদারকি করা। এর দায় তারা এড়াতে পারেন না।”

অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে ফ্যামিলি মার্টের প্রতিষ্ঠাতা মো. খোকন বলেন, “পার্কটি এখনো নির্মাণাধীন থাকায় সেখান কোনো তদারকির ব্যবস্থা করা হয়নি। আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না। লোকজন ইচ্ছেমতো নেমে সাঁতার কাটে।”

গাজীপুরের টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের দলনেতা মো. ইদ্রিস বলেন, “খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে বিকেল ৪টার দিকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।”

ঢাকা/রফিক/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ