পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১৪৭ কোটি টাকা, ৭ মাসে খরচ ৪৭ লাখ টাকা
Published: 13th, February 2025 GMT
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন সবচেয়ে পিছিয়ে আছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ের সাতটি প্রকল্পে ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। পাকিস্তান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনেই ও সৌদি আরবে সাতটি চ্যান্সারি কমপ্লেক্স তৈরির জন্য আলাদাভাবে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে মাত্র ৪৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাস্তবায়নের হার মাত্র দশমিক ৩৩ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এডিপি বাস্তবায়নের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আইএমইডি। জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসের হিসাবে এডিপিতে গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে।
শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গত সাত মাসে তাদের বরাদ্দের মাত্র ১০ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ; প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়; জননিরাপত্তা বিভাগ; মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়; সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়; অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; ভূমি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম টাকা খরচ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এর মানে আগের বার প্রকল্পের মাধ্যমে যত টাকা খরচ করা হয়েছে, এবার তা-ও ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে এবার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন; ক্ষমতার পটপরিবর্তন এবং ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়া—এসব কিছুর প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী গত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপির মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এই সময়ে ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গতবার একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।
এর আগে জুলাই-জানুয়ারি হিসাবে কোভিডের বছরে (২০২০-২১ অর্থবছর) ৬১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। পরের দুই বছরে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা করে খরচ হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প সবচ য় বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
মসজিদের আংশিক কাজ করে তুলে নিয়েছে ৩ কোটি টাকা
ঢাকার ধামরাইয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নিলেও আংশিক কাজ করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। ঢাকা জেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে সাত দফায় প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও ৫০ শতাংশ কাজও হয়নি। কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ঠিকাদার টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্টের পর কাজ বন্ধ থাকায় এবং অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠায় নির্মাণ শেষ হওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সামাদ, ছানোয়ার হোসেন ও লোকমান হোসেনের ভাষ্য, চার বছর আগে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু শেষ হচ্ছে না। তাদের প্রশ্ন, বরাদ্দকৃত এত টাকা গেল কোথায়? মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘শুনেছি মসজিদের নামে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এক থেকে দেড় কোটি টাকার কাজ হয়েছে।’
জেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে চারটি অর্থবছরে ১০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ধামরাইয়ের সাবেক এমপি বেনজীর আহমদের নিজ গ্রাম বৈন্যায় ৩ কোটি ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে গ্রামের জামে মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পে ২ কোটি ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৭৫, পশ্চিমপাড়া পুকুরের ঘাটলা নির্মাণ প্রকল্পে ১৩ লাখ, মসজিদ থেকে নাট মন্দির পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়নে ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ও স্ট্রিট লাইটের উন্নয়নে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল।
মসজিদ উন্নয়নের জন্য সাতটি প্রকল্পে সাতবার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। একটি প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। বাকি ছয়টির আংশিক কাজ করে কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ঠিকাদার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মসজিদ উন্নয়নের নামে দরপত্রের মাধ্যমে জেলা পরিষদ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫০ লাখ ও ২৫ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৯ লাখ ও ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৫, ২২-২৩ অর্থবছরে ৪৮ লাখ ৯০ হাজার ও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সাতটি প্রকল্পে মোট ২ কোটি ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকা দিয়ে মসজিদের ভবন নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করার কথা রয়েছে। কিন্তু চার বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। এর আগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ লাখ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লাখসহ ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এরপরও নির্মাণ শেষ হয়নি। ছয়টি প্রকল্পের ঠিকাদার টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন জানা গেছে, ৯৫ ফুট দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট প্রস্থের মসজিদের তিনতলা ভবনের ফাউন্ডেশন দেওয়া হয়েছে। একতলার ছাদ ঢালাই এবং সীমানাপ্রাচীর ও লোহার গ্রিল দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি বেনজীর আহমদ এবং জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান।
মসজিদ নির্মাণের সাতটি প্রকল্পের ঠিকাদারদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল তামিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর জেলা পরিষদের অনেক কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে বিধায় কাজ নাও করতে পারি।’ বাকি ছয় প্রকল্পের ঠিকাদারেরা বলেছেন, মসজিদের কাজ করেই বিল উত্তোলন করেছেন।
জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী শেখ মাসুদ পারভেজের ভাষ্য, ‘আমি এ কার্যালয়ে যোগদানের আগেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন ঠিকাদারেরা।’ স্ট্রিট লাইটের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। সরেজমিন দেখা যায়, শুধু সাবেক এমপি বেনজীর আহমদ ও তাঁর তিন ভাইয়ের বাড়ির সড়কে স্ট্রিট লাইট লাগানো হয়েছে।
জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী (ধামরাইয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে তদারকি করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। বিল উত্তোলনের বিষয়ে আমার কোনো যোগসাজশ নেই।’
প্রকল্পগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীক। তাঁর ভাষ্য, ‘বরাদ্দকৃত টাকার তুলনায় তেমন কোনো কাজই হয়নি।’ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন বলেন, ‘আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা চক্রের মাধ্যমে প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব প্রকল্প তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’