আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে ক’জন অভিনয়শিল্পী মঞ্চ-টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় ছিলেন, হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন তাদের শীর্ষে। মঞ্চ, ক্যামেরা, এমনকি দৈনন্দিন জীবনে যার সাবলীলতা মুগ্ধ করেছে ভক্তদের। নায়ক কিংবা খলনায়ক— সব চরিত্রেই সমান পারদর্শিতা দেখানো এই গুণী শিল্পী কাটিয়েছেন অভিনয় ক্যারিয়ারে বর্ণাঢ্য জীবন। মানুষটি আর আমাদের মাঝে নেই। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফাগুনের রঙে বিষাদ ছড়িয়ে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন হুমায়ুন ফরীদি। অসংখ্য ভক্তদের পাশাপাশি তাকে মনে রেখেছেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে এই কিংবদন্তিকে।

১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নাট্যেৎসবে তারুণ্যেই মানুষের দৃষ্টি কেড়েছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। পরবর্তী সময়ে তিনি সবার হৃদয়ের অভিনেতা হন। এখনো আছেন সবার হৃদয়ে। তিন দশকেরও বেশি সময় মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রং ছড়িয়ে গেছেন নন্দিত ও বরেণ্য এই অভিনেতা। যেখানেই গিয়েছেন সাফল্যের বরপুত্র হয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই যোগ করেছেন বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা।

আরো পড়ুন:

দেখা গেল সিয়াম-দীঘির রোমান্স!

কিস ডে: অভিনেত্রী ঋর চুমু বৃত্তান্ত

হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায়। তার বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন স্নাতক করতে। কিন্তু পরের বছরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় খাতা-কলম বাক্সবন্দি করে কাঁধে তুলে নেন রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দামাল ছেলের মতো লড়াই করেন ফরীদি।

স্বাধীনতার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক জীবন শুরু করেন হুমায়ুন ফরীদি। এখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিকাশ হয়েছিল। অর্থনীতির ছাত্র হয়ে সেলিম আল দীনের কাছে নাট্যতত্ত্বে দীক্ষা নেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই সদস্যপদ পান ঢাকা থিয়েটারের। এই নাট্যদল থেকেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার অভিনয়ের রঙগুলো। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক।

নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ— সবখানেই ছিল হুমায়ুন ফরীদির অবাধ বিচরণ। মঞ্চ দিয়েই শুরু। ঢাকা থিয়েটারের ‘শকুন্তলা’, ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘কীর্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’-এর মতো মঞ্চনাটকে অভিনয় করে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। আদায় করে নেন দর্শকের ভালোবাসা। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে শুধু রাজধানীতে নয়, বিভিন্ন জেলার মঞ্চেও অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন।

মঞ্চের গণ্ডি পেরিয়ে টিভি নাটক আর চলচ্চিত্রেও স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে নেন হুমায়ুন ফরীদি। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘নীল নকশার সন্ধ্যায়’ ও ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ নাটকে অভিনয় করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন। তার অভিনীত ধারবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ আজও দর্শকের স্মৃতির পাতায় ভাস্বর। এতে কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি।

অন্য নাটকগুলোর মধ্যে আছে ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘একটি লাল শাড়ি’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘প্রিয়জন নিবাস’ প্রভৃতি। সর্বশেষ তিনি ‘তখন হেমন্ত’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করেন এবং ‘পূর্ণ চাঁদের অপূর্ণতায়’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেন।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

জাবির ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে স্কুলের শিক্ষক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে কলতান বিদ্যানিকেতনের শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ স্কুলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা ক্লাব দ্বারা পরিচালিত হয় বলে জানা গেছে।

গত রবিবার (৯ ফ্রেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম এসব শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। বিগত বছরগুলোতে ভর্তি অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পরিদর্শক থাকার নজির নেই।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা ক্লাব দ্বারা পরিচালিত হয় কলতান বিদ্যানিকেতন। কলতান বিদ্যানিকেতনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সম্পর্ক নেই। এর নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বেতন-ভাতা কোনোকিছুর সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত নয়। এটা পুরোপুরি  মহিলা ক্লাব নিয়ন্ত্রিত। পদাধিকারবলে এর প্রধান হন উপাচার্যের স্ত্রী।

অভিযোগে জানা গেছে, কলতান বিদ্যানিকেতনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীর সুপারিশে তাদের  স্ত্রীরা চাকরি করে থাকেন। তাদের ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রীক আয়ের বিশেষ সুবিধা দিতে এ ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ মোহাম্মদ আলি রেজা বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শিফট কমানো।  সেজন্য তাদের একদিনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ দায়িত্বের উপযোগী করা হয়।

নিকটস্থ কলেজ থেকে শিক্ষক নেওয়ার সুযোগ থাকলেও না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু কলতান আমাদের নিজস্ব ও বিশ্বস্ত, সেহেতু তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

আরো পরিদর্শক নিয়োগের প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস কর্মচারীদের পরিদর্শক করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে উপাচার্য মহোদয় সিদ্ধান্ত নেবেন।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হুমায়ুন ফরীদির জীবনে কত গল্প...
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৭২ জনের বিরুদ্ধে মামলা জাবি ছাত্রদলের 
  • জাহাঙ্গীরনগরে সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু, আসনপ্রতি পরীক্ষার্থী ১২১
  • পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গেস্টরুম’ সংস্কৃতির অবসান, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ই’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, দেখুন
  • জাবির ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে স্কুলের শিক্ষক
  • অপূর্ণাঙ্গ প্রশ্নে জাবির ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা
  • জাহাঙ্গীরনগরে দোকানে চাঁদা দাবির অভিযোগে নেতাকে অব্যাহতি দিল ছাত্রদল
  • জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রদলের টাঙানো ব্যানার খুলে ফেলার ঘটনায় বিক্ষোভ