গণভোটে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে হতে পারে: আলী রীয়াজ
Published: 13th, February 2025 GMT
গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচিত সংসদ ছাড়াই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী গণভোটে সংবিধান সংশোধন সম্ভব কি না, জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা (কমিশন) সংস্কারগুলো কী কী করতে হবে, সেটা বলেছি। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে করবেন, সেটা ঠিক করবেন। সম্ভব কি না—এই মতামত সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা দেব না। এটা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে।’
গণভোটের যৌক্তিকতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আলী রীয়াজ বলেন, দেশে একাধিকবার সংবিধান সংশোধন হয়েছে দুই–তৃতীয়াংশের মাধ্যমে। অর্থাৎ যে দল ক্ষমতায় থাকেন, তারাই সংবিধান সংশোধন করেছেন। অনেক সময় তারা দেশের ৫০ শতাংশ জনগণেরও প্রতিনিধিত্ব করেন না। এর অপব্যবহারের মোকাবিলা করতেই গণভোটের সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে কোনো দল ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। অতীতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে জনগণের মত নেয়নি।
অভ্যুত্থান–পরবর্তী ছয় মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের যে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, বিভিন্ন মতপার্থক্য সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের ক্ষেত্রে একধরনের ঐকমত্য আছে। এ ছাড়া বহুদিন ধরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র সংস্কারের আলোচনা করে আসছে। দলগুলো তাদের সংস্কার প্রস্তাবও পেশ করেছে। সংস্কারের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা রয়েছে বলেই বিশ্বাস ও আস্থা আছে। বিশেষভাবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসের বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে।
সংবিধান সংস্কারের সুপারিশে কোটা ও বৈষম্যের ছাপ রয়েছে বলে আলোচনা হচ্ছে উল্লেখ করে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ১০ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনোনয়ন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বয়স ২১ বছর করার সুপারিশ নিয়ে আলোচনা ছিল। এখন আন্দোলনকারী ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। তাদের সুবিধা দিতেই এ সুপারিশগুলো করা হয়েছে কি না?
এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ১০ শতাংশ মনোনয়ন বাধ্যতামূলক নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যেন তরুণ-তরুণীদের মনোনয়ন দেয়, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তরুণদের অংশগ্রহণের মাত্রা বাড়তে পারে, নতুন নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়; আর ২১ বছরের কথা রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নিলেও, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলেও, তাতে যে এই শিক্ষার্থীরাই মনোনীত হবেন, এ নিশ্চয়তা কে কাকে দিচ্ছে? তিনি বলেন, বিশেষভাবে কোনো একটি রাজনৈতিক দল তৈরি হবে, এই বিবেচনা করে সুপারিশ করা হয়নি।
বহুত্ববাদের সুপারিশ ও প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানের পরেও ভিন্নমতের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। এমন বাস্তবতায় বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, ভাষা, সংস্কৃতি, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, ধর্ম—সবকিছুর মধ্যেই যে পার্থক্য আছে, সেগুলোকে শুধু স্বীকার বা স্বীকৃতি দেওয়া নয়, সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্যই বহুত্ববাদিতার কথা বলা হয়েছে। বহুত্ববাদের সঙ্গে ধর্মের ব্যাখ্যা যেভাবে করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এটা সঠিক ব্যাখ্যা নয়। ধর্মের একত্ববাদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কার্যত এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা সেখান থেকে বেরোতে চেষ্টা করেছি। এনসিসির ধারণা মূলত ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মোকাবিলা করা।
নির্বাচনের জন্য কী কী সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ—জানতে চাইলে রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে যেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো শনাক্ত করে সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে যে নির্বাচনের কথা হচ্ছে, এর জন্য নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে জালিয়াতির নির্বাচন বন্ধ সম্ভব হবে।
এর আগে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে তিনি বলেন, শক্তিশালী গণতন্ত্র তৈরি এবং এটাকে স্থায়ী করতে হলে ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদী শাসনের আশঙ্কা মোকাবিলার উপায় হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির জন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি, সেগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে শাসনব্যবস্থার সর্বস্তরে নাগরিকদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধান এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব কার্যকর করে তোলা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কমিশনের সদস্য সুমাইয়া খায়ের, মুহাম্মদ ইকরামুল হক, ইমরান সিদ্দিকী, শরীফ ভূঁইয়া, এম মঈন আলম ফিরোজী, ফিরোজ আহমেদ ও মুস্তাইন বিল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র য় জ বল ন র জন য ক ষমত গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
মডেল মেঘনার সঙ্গে এ আইন প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে না: খোদা বখস চৌধুরী
‘মডেল মেঘনা আলমের সঙ্গে এ আইন প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে, বিষয়টা তা নয়। তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি আদালতে গেছে। বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।’
মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী বলেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে মেঘনা আলমের গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে খোদা বখস চৌধুরী বলেন, আপনার প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছে সরকার একটা বেআইনি কাজ করে ফেলেছে। এই আইন যে ব্যবহৃত হচ্ছে না, তা নয়। তারা আদালতে গেছেন। আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। আমরা আদালতকে জবাব দেব।
মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াটা সঠিক হয়নি বলে আইন উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, আরেক সাংবাদিক এমন প্রসঙ্গ তুলে ধরে খোদা বখস চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন- আইন উপদেষ্টা কোনও প্রেক্ষিতে এই কথা বলেছেন, তা আমরা জানি না। তিনি আমাদের কাছে এ বিষয়ে কিছু জানতেও চাননি। এখন বিষয়টি আদালতে চলে গেছে।
১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে আপনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জনগণ এই সরকারকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়, কোন পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেছিলেন- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি তো বলিনি সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়। এটা জনগণ বলেছে। সরকার তো বলে দিয়েছে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমি রাজনীতিবিদ নই। আমার এই কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না।
ডিবির প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পুলিশের পদগুলোতে যাবে, আসবে এটাই নিয়ম। মেঘনা আলমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে সরানো হয়নি। উনি হয়তো অসুস্থ আছেন, সে জন্য তাকে সরানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আট মাস পেরিয়ে গেল, পুলিশ এখনো দায়িত্ব পালন করছে না, জনগণের অভিযোগ নিচ্ছে না এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খোদা বখস চৌধুরী বলেন, পুলিশ অভিযোগ নেয় না, এটা আজকের অভিযোগ নয়। বহু পুরোনো। অন্তর্বর্তী সরকার দুটি বিষয় অনলাইনে করতে যাচ্ছে। এক, জেনারেল ডায়েরি (জিডি), দুই, এফআইআর বা অভিযোগপত্র। প্রথমে দুটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে জিডি নেওয়া শুরু হবে। পরে এফআইআর নেওয়া শুরু হবে। ধীরে ধীরে একটা স্থায়ী সমাধান হবে।
জুলাই আন্দোলনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে ধরছেন চুনোপুঁটিদের, রাঘববোয়ালদের ধরছেন না, এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, রাঘববোয়ালদের কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তাদের জালে আসতে হবে। রাঘববোয়ালরা জালে আসার পর যদি ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন আপনারা অভিযোগ করতে পারেন।