নগদের প্রশাসক দিদারের ওপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিক্ষোভ
Published: 13th, February 2025 GMT
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তিনি মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভের আয়োজন করেন। এতে বদিউজ্জামান দিদারের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার ও তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রোকনুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পরিচালক আনিসুর রহমান, কর্মকর্তাদের সংগঠন সবুজ দলের সভাপতি মিজানুর রহমান আকন, হামলায় আহত পরিচালক বদিউজ্জামান দিদার, অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী, জিয়া পরিষদের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ও যুগ্ম পরিচালক সাহেদুল ইসলাম।
সমাবেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় নগদে দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক কঠোর পরিশ্রম করে সেই দুর্নীতির মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর এ কারণেই তাঁর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। যাঁরা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা ব্যাংকের ভেতরের বা বাইরের যে–ই হোন, তাঁদের বিচার চাই।’
কর্মকর্তাদের সংগঠন সবুজ দলের সভাপতি মিজানুর রহমান আকন বলেন, নগদের দুর্নীতি তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনা কোনো ব্যক্তিবিশেষের ওপর হামলা নয়; বরং এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ।
জিয়া পরিষদের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, যেসব কর্মকর্তা ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের জন্য ঝুঁকির ভাতা চালু করতে হবে এবং দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুক্তভোগী পরিচালক বদিউজ্জামান দিদার বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছিলাম। বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও শুধু সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগকে জানালে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে আমি হামলার শিকার হয়েছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
এদিকে আজ দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল মতিঝিল শাপলা চত্বরে মানববন্ধন করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। সরকারের পক্ষ থেকে অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানায় সংগঠনটি। পাশাপাশি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কার–সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানানো হয়।
নগদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারের ওপর গতকাল বুধবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বনানী–১২ নম্বর সড়কে তাঁর ওপর হামলা হয়। এতে তিনি আহত হন। হামলাকারীরা হাতুড়ি দিয়ে তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করে। হামলায় তাঁর গাড়িচালক গুরুতর আহত হন।
এর আগে গতকাল সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক রুহুল হক ও তানজির আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল নগদে অভিযান পরিচালনা করে। তখন নগদের প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে নগদের ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পাচার ও ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি তৈরিসংক্রান্ত অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদক টিম এ-সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। তারা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখবে।
৩ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকার ইলেকট্রনিক মানি (ই-মানি) তৈরির অভিযোগে নগদের সঙ্গে যুক্ত ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ মামলায় সরকারের ডাক বিভাগের আট সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি), নগদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানভীর আহমেদ মিশুককে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক সরকার আমির খসরু বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন (নম্বর ২)। মামলায় অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক মানি বা ই-মানি তৈরি ও নথিপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে ৬৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ দ র র ওপর র রহম ন নগদ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে সেনাসদস্যকে মারধরের অভিযোগে রেলের গার্ডসহ তিনজন গ্রেপ্তার
রাজশাহীতে সেনাবাহিনীর এক সদস্যকে মারধরের অভিযোগে রেলের একজন গার্ড ও দুজন অ্যাটেনডেন্টকে আটক করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগী সেনাসদস্যের দায়ের করা মামলায় তাঁদের তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়।
ওই তিনজন হলেন ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের গার্ড আল আমিন, অ্যাটেনডেন্ট মনছেহার আলী ও আলী আজম। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তাঁদের রেলওয়ে থানায় রাখা হয়েছিল।
সেনাবাহিনীর ভুক্তভোগী সদস্যের নাম ইসমাইল হোসেন। গতকাল বুধবার রাতে রাজশাহী রেলস্টেশনে তিনি মারধরের শিকার হন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন। মামলায় ওই তিনজনের পাশাপাশি একই ট্রেনের ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্ট মো. সাব্বির হোসেন ওরফে ঝলক, মো. মোস্তাফিজুর, মো. মনির হোসেন, মো. ইসতিয়াক আহম্মেদ এবং অজ্ঞাতনামা সাত থেকে আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
রাজশাহী রেলওয়ে থানা–পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ছুটি শেষে বুধবার সেনাসদস্য ইসমাইল হোসেন জয়দেবপুর থেকে রাজশাহীতে আসার জন্য সিল্কসিটি ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনের সিটিং টিকিট না পাওয়ায় স্ট্যাডিং টিকিট কাটেন তিনি। যাত্রাকালীন ট্রেনে কর্মরত টিটিই তাঁর টিকিট যাচাই করেন। আবদুলপুর রেলস্টেশনে পৌঁছালে কর্মরত কয়েকজন আবার টিকিট দেখতে চান। তাঁরা খারাপ আচরণ করেন। তখন তিনি তাঁদের জানান তিনি টিটিইকে টিকিট দেখিয়েছেন। তখন টিটিই আবার টিকিট চেক করে দেখেন। তখন ওই সেনাসদস্য টিটিইকে জানান, তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে। তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবেন। তখন তাঁরা তাঁর ওপর চড়াও হন এবং কথা-কাটাকাটি হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ট্রেনটি রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেন থেকে নামলে তাঁরা আরও বেশ কয়েকজন এসে ইসমাইল হোসেনকে এলোপাতাড়ি কিল–ঘুষি মারতে শুরু করেন। হত্যার হুমকিও দেন। এলোপাতাড়ি লাথিতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ।