সীমান্তে শূন্যরেখায় মাকে শেষবিদায় জানালেন শরীফা
Published: 13th, February 2025 GMT
সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশনের শূন্যরেখা; গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা। বিজিবির উপস্থিতিতে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে থামল। ভেতরে আছিয়া বেগমের মরদেহ। মায়ের মরদেহ দেখার জন্য সীমান্তের ওপারে ভারতের ঘোঝাডাঙ্গা ইমিগ্রেশনে অপেক্ষা করছিলেন শরীফা বেগম। বিএসএফের সদস্যরা শরীফা বেগমকে অ্যাম্বুলেন্সের কাছে নিয়ে আসেন। মায়ের মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন শরীফা।
আছিয়া বেগম (৮০) দেবহাটা উপজেলা সদরের মৃত আহম্মদ আলীর স্ত্রী। গতকাল বুধবার ভোরে বার্ধক্যজনিত রোগে আছিয়া বেগমের মৃত্যু হয়। এ দম্পতির ছয় ছেলেমেয়ে। এর মধ্যে শরীফা বেগমের বিয়ে হয়েছে ভারতের বসিরহাট মহকুমার হরিপুর গ্রামে। তিনি এখন ওই দেশের নাগরিক। ভিসা না থাকায় মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেও শরীফা বাংলাদেশে আসতে পারছিলেন না। পরে শরীফা ও তাঁর স্বজনদের আবেদনে সাড়া দেয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখার সুযোগ পান শরীফা।
আছিয়া বেগমের নাতি মেহেদি হাসান বলেন, তাঁর দাদি বেগম কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। হঠাৎ মঙ্গলবার রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকাল সকাল ছয়টার দিকে তিনি মারা যান। তাঁর ফুফু (শরীফা) ভারতের নাগরিক। তিনি তাঁর মাকে দেখার জন্য ভিসার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ভিসা পাওয়ার আগেই দাদি মারা গেলেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে ফুফু কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একবারের জন্য তিনি মায়ের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি (মেহেদি) গতকাল সকাল নয়টার দিকে বিজিবির ভোমরা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আফজাল হোসেন খানের কাছে এ বিষয়ে আবেদন জানান।
মায়ের মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন শরীফা বেগম.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে ঢুকে জেলেদের হামলা করার অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে ঢুকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা জেলেদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, বিএসএফ জেলেদের মারধর করে তিনটি নৌকা নিয়ে গেছে।
বিজিবি বলছে, তারা জানতে পেরেছে, বাংলাদেশি জেলেরা ভারতের সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। বিএসএফ তাদের তিনটি নৌকা আটকে দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাতে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সীমান্ত নদী কালিন্দির বয়ারসিং সংলগ্ন উলোখালীর চর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
বগুড়ায় হামলায় ২ পুলিশ আহত
চট্টগ্রামের ডিসি হিলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান মঞ্চ ভাঙচুর, আটক ৬
হামলার শিকার জেলেরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের রমজান আলী, শাহাজান আলী, শাহাদাৎ হোসেন, মো. শাহাজান, আতাউর রহমান, মো. আব্দুল, মানিকপুর গ্রামের কেরামত ও কৈখালীর নুর মোহাম্মদ।
হামলার শিকার শাহাদাৎ হোসেন জানান, পশ্চিম সুন্দরবনের কৈখালী স্টেশন থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে চারদিন আগে তারা সুন্দরবনে যান। তিনটি নৌকার ১২ জন জেলে দুইদিন ধরে বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত উলোখালীর চরে পাটা জাল পেতে মাছ ধরছিলেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুইটি স্পিডবোট নিয়ে বিএসএফ সদস্যরা সেখানে যান ও তাদের মারধর শুরু করেন।
তিনি আরো জানান, তারা নদীতে পেতে রাখা জাল ও সেখানে থাকা নৌকা ফেলে বনের মধ্যে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। নৌকা নিয়ে পরে বিএসএফ সদস্যরা চলে যায়।
শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ লাল্টু জানান, বিএসএফের মারধরের শিকার আট জেলের মধ্যে ছয়জন তার এলাকার। বিএসএফ নৌকা নিয়ে উলোখালীর চর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় তারা পায়ে হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে লোকালয়ে ফিরছেন। সেখানে পেতে রাখা জাল উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মশিউর রহমান বলেন, “বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশী সীমানায় ঢুকে তিনটি নৌকা নিয়ে গেছে বলে শুনেছি।”
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সাতক্ষীরা ১৭ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রাজিব বলেন, “আমরা যতদূর খবর পেয়েছি, মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশি জেলেরা ভারতের সীমানায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। তখন বিএসএফ তাদের তিনটি নৌকা আটকে দিয়েছে। হামলা বা গুলির কোন ঘটনা সেখানে ঘটেনি।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ