ধামরাইয়ের আলাদীন্’স পার্কে সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার ৪
Published: 13th, February 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে ‘আলাদীন্’স পার্ক’ নামে একটি বিনোদন কেন্দ্রে ঢাকার মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে গতকাল রাতে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সীতি এলাকার আলাদীন্’স পার্কে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাতে কলেজের শিক্ষক মো.
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রাকিব (২৩), অন্তর (১৮), মো. সুমন (৩১), মো. রানা (২৩)। তারা সবাই ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের সীতি এলাকার বাসিন্দা।
এছাড়া মামলার আসামিরা হলেন, আলাদীন্’স পার্কের মালিকের ছেলে রিফাত মাহমুদ (৩৫), পার্কের ব্যবস্থাপক নকিবুল রনি (৪৮), মালিক আলাউদ্দিন (৫৭), পার্কে কর্মরত আবুল কালাম আজাদ (৩৫)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষক মো. আব্দুল হাই বলেন, “আলাদীন্’স পার্কের লোকজন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। তারা কাঠের লাঠি ও লোহার রড এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে তারা হামলা চালালে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হয়।”
তিনি আরো বলেন, “আহতদের ধামরাই ও সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এইচ এসসি পরীক্ষার্থী জাকারিয়া সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেলে এখনো ভর্তি রয়েছে। সে হাতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। একই শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাতকে আজকে এনাম মেডিকেল থেকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। সে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে।”
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “গতকাল রাতেই এক শিক্ষক চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরো ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ধামরাইয়ের উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সিতী পাল্লী এলাকায় আলাদীন্’স পার্কে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মুঠোফোন হারানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে পার্কের লোকজন ও ঢাকার মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষক, আলাদীন্’স পার্ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৬৫০ জন ১২টি বাসে করে বিনোদন কেন্দ্রটিতে যান। দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মোবাইল ফোনসহ মালামাল লকারে রেখে ওয়াটার পার্কে নামেন। তবে পানি থেকে উঠে কয়েকজন শিক্ষার্থী লকার খোলা দেখতে পান। সেখানে রাখা মোবাইল ফোনও খুঁজে পাননি। শিক্ষার্থীরা এজন্য পার্ক কর্মচারীদের দায়ী করলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় মীমাংসা হয়। তবে মোবাইল ফোন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে বিকেল ৫টার দিকে বিনোদন কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন না পাওয়া পর্যন্ত বিনোদন কেন্দ্র ছেড়ে যেতে আপত্তি জানান। এক পর্যায়ে তারা বিনোদন কেন্দ্রের স্থাপনায় ভাঙচুর করেন। এসময় বিনোদন কেন্দ্রের কর্মচারীরা তাদের ওপর চড়াও হন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পার্ক কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের পরিবহনের আটটি বাসে ভাঙচুর করে। সংঘর্ষে অন্তত ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী ও ১০-১৫ জন পার্ক কর্মচারী রক্তাক্ত জখমসহ আহত হন।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষক নাসির আফজাল বলেন, “সকাল ১০টার দিকে আমরা ৬৫০ জন এসেছিলাম ১২টি বাসে করে। বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ছোট থেকে শুরু। কয়েকটি মোবাইল খোয়া যায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি। তখন শিক্ষার্থীরা বলেছে, মোবাইল ছাড়া বাসায় গেলে সমস্যা, যেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তখন আমরা বললাম, তারা যদি না দেয় আমরা দেখব। এরইমধ্যে তারা (শিক্ষার্থীরা) ভাঙচুর করেছে। এটি দেখে হয়তো আশপাশের লোকজন ডেকেছে। তারাও ভাঙচুর করেছে। এতে আহত ৬ জনকে এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। অনেকে সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সবমিলিয়ে অন্তত ২০-২৫ জন আহত হয়েছে। আমরা মামলা করেছি। বাকিরা থানায় গিয়েছে। এটার ক্ষতিপূরণের বিষয় রয়েছে।”
এ বিষয়ে আলাদীন্’স পার্কের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নকিবুল হাসান রনি বলেন, “স্কুল থেকে সকালে পিকনিকে এসেছিল। ঘটনা দুইবার ঘটেছে, দুপুরে একবার, বিকেলে একবার। দুপুরে মীমাংসা হওয়ার পরে বিকেলে যাওয়ার সময় সব কিছু ভাঙচুর করে গেছে। মোবাইল হারানোর মতো কিছুই হয়নি। এইখানে লকার রাখছিল, লকার থেকে বের হওয়ার সময়, হয়তো বা আর একটা লকারে চাবি দিয়ে খুলেছে, সেখানে ১০০টি লকার আছে। এটা নিয়ে আমাদের স্টাফকে প্রথমে মারধর করছে, পরে ওনাদের শিক্ষকদের ডেকে এনে বিষয়টা মীমাংসা করেছি।”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষকরা বলছেন, যে ছেলেকে মারছে তাকে শান্তনা দিয়ে চলে গেছে। পরে বের হওয়ার সময় ওরা বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করছে এবং স্টাফদের মারধর করেছে। মারধরে স্টাফরা নিরুপায় হয়ে যায়। তখন এলাকার মানুষজনও ছিল, তারাও এসেছে। পরে ধাওয়া পাল্টা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ১৫-১৬ জন আহত হয়েছে, এর মধ্যে সবাই রক্তাক্ত জখম হয়েছে। আহত সবাই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে।”
ঢাকা/সাব্বির/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ র ঘটন জন শ ক ষ র থ কল জ র শ ক ষ প র ক কর র কর ছ আল দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মেট্রোরেল কর্মীদের কর্মবিরতি, ভাড়া আদায় ব্যবস্থা অকার্যকর
এমআরটি পুলিশ সদস্য দ্বারা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন কর্মী মৌখিকভাবে ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছে মেট্রোরেল কর্মীরা। ফলে আজ সোমবার সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচলে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যাত্রীদের ভাড়া আদায় করার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে আছে।
মেট্রোরেলে ফার্মগেট স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে আটটার দিকে কারওয়ান বাজারে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী তাপসী রায়। তিনি বলেন, ফার্মগেটে ঢোকার সময় কার্ড পাঞ্চ করার পর তিনি যেতে পেরেছেন। তবে কারওয়ান বাজারে নেমে পাঞ্চ মেশিন তিনি অচল দেখেন। পাঞ্চ না করেই চলে আসতে পেরেছেন। এ সময় সেখানে থাকা কয়েকজন তাঁকে চলে যেতে বলেন। পরে জরিমানা করা হবে কি না জানতে চাইলে তাঁরা বলেন আজকে কিছু করা হবে না। টিকিটের কাউন্টারগুলোও বন্ধ দেখেছেন তিনি। ফলে যাদের এমআরটি ও র্যাপিড পাস আছে শুধু তারাই যাতায়াত করতে পারছেন। কেউ টিকিট কাটতে পারছেন না।
ডিএমটিসিএলের জনসংযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কর্মীদের ধর্মঘটের কারণে মেট্রোরেল চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। চলাচল স্বাভাবিক আছে । তবে কোথাও কোথাও কোথাও রাজস্ব আয়ে সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ স্টেশনে স্টেশনে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সুরাহা হয়ে যাবে।
রাতে 'ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ‘সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ' ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনা তুলে ধরে ছয়টি দাবি জানানো হয়।
মেট্রোরেল কর্মীদের দাবিগুলো হচ্ছে, আগামী এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ওই পুলিশ সদস্যকে (এসআই মাসুদ) স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে ও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে (কনস্টেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) শাস্তি দিতে হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। মেট্রোরেল, মেট্রো স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে হবে, এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্য সব কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অফিশিয়াল পরিচয়পত্র ও অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আহত কর্মীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে বলা হয়, দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মেট্রোরেলের সব কর্মী কর্মবিরতি পালন করব এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং মেট্রো স্টেশনে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, ‘আনুমানিক বিকেল সোয়া ৫টায় দুজন নারী কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ব্যতীত সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। তবে, সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান।'
'পরবর্তীতে ঠিক একইভাবে দুজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান, উক্ত বিষয়ের কারণ তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএ এর সঙ্গে ইএফও'তে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএ এর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে এবং কর্মরত আরেকজন টিএমও এর শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীগণ বিষয়টি অনুধাবন করে উক্ত এমআরটি পুলিশ এর হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে পুলিশের কাছ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।’