‘সড়কপথে গতিসীমা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত’
Published: 13th, February 2025 GMT
সরকার ২০২৪ সালে মোটরযানের গতিসীমা নির্দেশিকা জারি করেছে। তবে এই গতিসীমা নির্দেশিকা বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের নির্দেশনা না থাকায় সুফল মিলছে না। তাই সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে গতিসীমা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করা। একইসঙ্গে মোটরসাইকেল চালকদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড (মানসম্মত) হেলমেট নির্দেশিকা তৈরি করা উচিৎ সরকারের।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘৪র্থ বিশ্ব সড়ক নিরাপত্তা সন্মেলন: অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের নিকট প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ। মারাকেশ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ব্রাক রোড সেফটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘‘দেশের তরুণ কিশোরসহ আপামর জনসাধারণের একটি সমন্বিত দাবি হচ্ছে সড়ক নিরাপত্তা আইনের বাস্তবায়ন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এই দাবি আরো জোরালো হয়েছে। এরপর সরকার ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করে। আইন পাস করা হলেও তাতে সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ের ঘাটতি ছিল যার সিংহভাগ ছিল পরিবহন বা যানবাহন কেন্দ্রিক। ফলশ্রুতিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের এবং প্রাণহানির ঘটনা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আসন্ন সম্মেলনে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্তমানে দেশে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা বিধি নেই। তাই সরকারের উচিত একটি সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা। পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিকল্পনায় সুপারিশ করা পাঁচটি ক্ষেত্রকেও (বহুমুখী পরিবহন ব্যবস্থা ও যথাযথ ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী, দুর্ঘটনা-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা) এর আওতাভুক্ত করতে হবে।’’
মূলত, আগামী ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি মরক্কোতে ৪র্থ বিশ্ব সড়ক নিরাপত্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। সেই সম্মেলনে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের বিষয়ে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েই রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বতী সরকারের নিকট ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার জন্য মরক্কোর মারাকেশে ৪র্থ মিনিস্ট্রিয়াল সম্মেলনে অঙ্গীকার করার দাবি জানানো হয়। সেইসাথে পৃথক একটি সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।
সড়ক নিরাপত্তা আইনের খসড়া প্রণয়নে সরকার ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। সেইসাথে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চালকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কোয়ালিশন সদস্য বিএনএনআরসি’র সিইও এ এইচ এম বজলুর রহমান, স্টেপসের সিইও রঞ্জন কর্মকার, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান, সিআইপিআরবি’র রোড সেফটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার কাজী বোরহান উদ্দিন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের অ্যাডভোকেসি অফিসার তরিকুল ইসলাম, ব্রাকের কমিউনিকেশন অফিসার তামান্না রহমান, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির রোড সেফটি প্রকল্প কর্মকর্তা শরাফত ই আলম প্রমুখ।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র দ র ঘটন প রণয়ন ন র পদ গত স ম আইন প
এছাড়াও পড়ুন:
আর্থিকখাতের শৃংখলা ফেরাতে নতুন দুটি আইন হচ্ছে, সংশোধন হচ্ছে ছয় আই
আর্থিকখাতের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে দুটি নতুন আইন প্রণয়নসহ ৬ আইন সংশোধন হচ্ছে। আইন দুটির একটি হচ্ছে ‘ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫’ (বাস্তবায়নকাল: ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল) এবং অপরটি হচ্ছে ‘ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ (২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৬ সালের জুন সময় কালের জন্য)।
জানা গেছে, এই দুটি নতুন আইন তৈরির পাশাপাশি ৬টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সব কটি আইনেরই খসড়া প্রণয়নের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনোটির খসড়া চূড়ান্ত করে এর ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য খসড়া আইনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন আইন প্রণয়ন এবং পুরনো আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আইনগুলো তৈরি ও সংশোধনের কাজ শেষ হলে তা আর্থিকখাতের ভিত্তিকে মজবুত ও শৃংখলায় আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ‘ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫’ এর চূড়ান্ত খসড়া ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য তা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যদিকে ‘ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পাওয়া গেছে। মতামতের ভিত্তিতে একটি সভা হয়েছে, আরেকটি সভা দ্রুতই করা হবে।
এছাড়া ৬টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে- ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন; বীমা আইন ২০১০। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা কর্পোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন; প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ এবং গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন।
ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন (২০২৪ সালের ডিসেম্বর – ২০২৫ সালের এপ্রিল): ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট এর কিছু কিছু ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইনটি অধিকতর যাচাইপূর্বক অধ্যাদেশ আকারে খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৫৮ থেকে ১০০ ধারা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): আইনের খসড়াটি বিএসইসি পুনরায় পর্যালোচনা করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাবে বলে জানা গেছে।
বীমা আইন ২০১০, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা কর্পোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): এ দুটি আইন সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৬): সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত ডিসেম্বরে অংশীজনদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ আলোচনা শেষে তা বোর্ডসভায় উপস্থাপন কর হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): আইনটির খসড়া প্রণয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): ইতোমধ্যে আইনটির সংশোধিত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে ও অংশীজনদের নিয়ে গত ডিসেম্বরে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এছাড়া রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারী (অনূর্ধ্ব ডিজিএম) নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন/সংস্কার (রূপালী-জনতা-বেসিক-রাকাব) এর কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- মার্চ ২০২৫- জুন ২৫): গত বছর ৯ এপ্রিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পর বিশ্বব্যাংক কর্তৃক গত বছর ১৬ এপ্রিল পুনরায় কতিপয় পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-অর্থ বিভাগ-বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সম্মিলিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারী (অনূর্ধ্ব ডিজিএম) নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন (অক্টোবর ২০২৪- সেপ্টেম্বর ২০২৫): অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাছ থেকে খসড়া পাওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এছাড়াও রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন/সংস্কার (রূপালী-জনতা-বেসিক-রাকাব)- (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): ইতোমধ্যে রূপালী ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন করে গত ডিসেম্বরে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। জনতা-বেসিক-রাকাব এর সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
ঢাকা/হাসনাত/টিপু