দীপু মনির ১৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, নুরুজ্জামানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
Published: 13th, February 2025 GMT
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ১৬টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা বেগমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.
দীপু মনির ১৬টি ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য আদালতের কাছে তুলে ধরে দুদক। একই সঙ্গে দীপু মনির এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ চেয়ে আবেদন করে সংস্থাটি। শুনানি নিয়ে আদালত দীপু মনির এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, দীপু মনির ১৬টি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ৩১ কোটি ৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে এসব ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বর্তমানে এসব ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা জমা রয়েছে।
দুদক আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, দীপু মনির ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছে বলে দুদক জানতে পেরেছে। এ জন্য এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। শুনানি নিয়ে আদালত দীপু মনির নামে থাকা এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ আগস্ট গ্রেপ্তার হন দীপু মনি। এর পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
নুরুজ্জামানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাসাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করে দুদক। আদালতকে লিখিতভাবে দুদক জানিয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে দুদক। নুরুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন নুরুজ্জামান।
শিবলী রুবাইয়াতের স্ত্রী-সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের স্ত্রী শেনীন রুবাইয়াত, তাঁর দুই সন্তান জুহায়ের শারার ইসলাম ও শাহদান ইসলামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আজ বৃহস্পতিবার আবেদন করে দুদক।
শিবলী রুবাইয়াতের স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আবেদনে দুদক আদালতকে জানিয়েছে, শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। রুবাইয়াত ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ অন্যরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে দুদক জানতে পেরেছে। শুনানি নিয়ে আদালত রুবাইয়াতের স্ত্রী, দুই সন্তানসহ ১১ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন। উল্লেখ্য, ৪ ফেব্রুয়ারি শিবলী রুবাইয়াত গ্রেপ্তার হন।
সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাসিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম হোসেন আলী ও তাঁর স্ত্রী বেগম গোলে নূরের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মেয়ে হাসনা হেনা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাক (ডিজিএম) আবদুস সালামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এই চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. আবু সাইদ। তাতে বলা হয়, কে এম হোসেন আলী, তাঁর স্ত্রীসহ অন্যরা ঘুষ গ্রহণ করে দলীয় পদ-বাণিজ্য, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি-বাণিজ্য, জমি দখল ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আওয়ামী লীগ নেতা কে এম হোসেন আলীসহ চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘পুঁজিবাজার আবেগ নয়, মৌলভিত্তি দেখে বিনিয়োগ করতে হয়’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেছেন, “পুঁজিবাজার আবেগের স্থান নয়। এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ করে কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল (মৌলভিত্তি) দেখে বিনিয়োগ করতে হয়। ঝুঁকি এড়িয়ে পুঁজিবাজার থেকে ভালো মুনাফা করার জন্য বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির সার্বিক আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবগত হওয়া জরুরি। আর এ বিষয়ে জানার মাধ্যম হলো কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ।”
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর ট্রেনিং একাডেমি আয়োজিত চার দিনব্যাপী "ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস, ইনভেস্টমেন্ট টেকনিক অ্যান্ড টুলস’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী দিনে সার্টিফিকেট বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ডিএসইর মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (ইন-চার্জ) ছামিউল ইসলাম এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক ও ট্রেনিং একাডেমি’র প্রধান আল আমিন রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
তিন ব্রোকারেজ হাউজকে ফিক্স সার্টিফিকেশন দিল ডিএসই
যুক্তরাজ্যের বাজারে রেনাটার ওষুধ
মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, “এই মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্য ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসই গুরুত্বপূর্ণ। ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস এর পাশাপাশি বিনিয়োগ কৌশল ও সরঞ্জামও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো একে অপরের সাথে পারস্পরিকভাবে সম্পর্কিত। এগুলো একটি সিগন্যাল দেয় বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। ডিএসই পক্ষ থেকে আমরা সব সময়ই বলে থাকি ফান্ডামেন্টাল জেনে বুঝে বিনিয়োগ করুন। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীগণ লাভবান হতে পারে। কোম্পানির ইপিএস, এনএভি, পিই রেশিও, উদ্যোক্তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি যাচাই করে বিনিয়োগ করুন। কোম্পানির সার্বিক বিষয়াদির পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণই বিনিয়োগের মূলমন্ত্র হতে হবে। আমরা মনে করি, একটি সচেতন বিনিয়োগকারী বাজারের উন্নয়নের পূর্বশর্ত।”
তিনি বলেন, “দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নতি করতে হলে শক্তিশালী পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই। আর শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষিত-সচেতন বিনিয়োগকারীর গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষিত সচেতন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, বাজার তত বেশি স্থিতিশীল হবে। কারণ শিক্ষিত বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেখে শুনে ভালো মৌলভিত্তি (ফান্ডামেন্টাল) শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। অনেক বিনিয়োগকারীরা না বুঝেই হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। যা বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজারের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
তিনি আরো বলেন, “কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হলে নিজের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।”
চার দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মাইক্রো এনালাইসিস, মাইক্রো-ইকোনোমিক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এনালাইসিস, কোম্পানি এনালাইসিস, ভ্যালুয়েশন ফান্ডামেন্টালস-মেথড বিষয়ে আলোচনা করেন যথাক্রমে এনবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুবায়ের আল-মামুন, শান্তা সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং এস এম গালিবুর রহমান, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর হেড অব ইক্যুইটি রিসার্চ তনয় কুমার রয় এবং সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড এর হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এ. কে. এম. ফজলে রাব্বি।
ঢাকা/এনটি/এসবি