সম্প্রতি সরকার ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে সারাদেশে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এ অবস্থায় গ্রেপ্তার এড়াতে নতুন কৌশল অবলম্বন করেছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরী। তিনি বুধবার ‘সালথা উপজেলা প্রেস ক্লাব’ গড়ে তুলেছেন। শুধু তাই নয়, নিজেই হয়েছেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি টুটু চৌধুরী। আর সাধারণ সম্পাদক করেছেন ছাত্রলীগ নেতা মো.

আরিফুল ইসলামকে। আরিফুল সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।

জানা গেছে, স্থানীয় একটি হোটেলে তিন-চারজন বসে সালথা উপজেলা নামক প্রেস ক্লাবের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে মাত্র একজন সাংবাদিক থাকলেও বাকিরা কেউই সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত নন বলে জানা গেছে। কমিটিতে সদস্য হয়েছেন শওকত হোসেন মুকুল ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও যুগ্ম সম্পাদক পদ পেয়েছেন রুবেল রানা। তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। 

স্থানীয়রা সাংবাদিকরা জানান, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সালথা প্রেস ক্লাবের সদস্য হন টুটু চৌধুরী। এরপর তিনি একটি পত্রিকার আইডি কার্ড যোগাড় করেন। টুটু চৌধুরী পঞ্চম শ্রেণি পাস। নিউজ লিখতে না পারলেও নিজেকে বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি শুরু করেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা অজুহাতে চাঁদা তোলেন। অবৈধ মাটি-বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এমন কোনো অপরাধ নেই তিনি করতেন না। তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন এলাকাবাসী। তবে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হওয়ায় ভয়ে কেউ টুটু চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুখ খুলেননি। লাবু চৌধুরীর ছত্রছায়ায় থেকে বছরের পর বছর মাদক ব্যবসা, টেন্ডার বাণিজ্য ও থানায় দালালি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে টুটুর বিরুদ্ধে। 

গত ৫ আগস্ট  শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টুটু চৌধুরীকে সালথা প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সম্প্রতি সাবেক এমপি শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর সম্পদের পাহাড় নিয়ে নিউজ করায় কালের কণ্ঠের সালথা-নগরকান্দা প্রতিনিধি নুরুল ইসলামকে হত্যার হুমকি দেন টুটু চৌধুরী।

স্থানীয়রা জানান, সালথা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ইমদাদ আলী খসরুর সৎ ভাই টুটু চৌধুরী। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টুটু চৌধুরীও ভোল পাল্টে ফেলেন। টুটুর এক ভাই বিএনপি নেতা ও আরেক ভাই জামায়াত নেতা। যে কারণে তিনি এখন নিজেকে বিএনপি নেতার ভাই পরিচয় দিয়ে থানায় দালালি ও ফের চাঁদাবাজি শুরু করেছেন। 

টুটু চৌধুরীর এমন কর্মকাণ্ড পুলিশ-প্রশাসনের নজরে এলে তিনি নতুন একটি প্রেস ক্লাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকার বিনিময় কয়েকজন যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভুঁইফোড় অনলাইন ও কিছু অখ্যাত পত্রিকার কার্ড বানিয়ে দেন। এর মধ্যে কম্পিউটারের দোকান থেকে ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়েও সদস্য করা হয়েছে। চলমান অভিযানে গ্রেপ্তার এড়াতে, পুলিশ-প্রশাসনের থেকে সুবিধা পেতে ও ফের চাঁদাবাজি করার পরিকল্পনা থেকেই টুটু চৌধুরী এই প্রেস ক্লাব গড়ে তোলেন বলে মনে করছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

সালথা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. সেলিম মোল্যা বলেন, ‘টুটু চৌধুরীকে আমি সংবাদ লিখতে দেখিনি। সে একজন উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি। তার খারাপ আচরণের কারণে সালথা প্রেস ক্লাব থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন জানতে পারলাম, তিনি নামধারী একটি সাংবাদিক সংগঠন করে কিছু সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে সালথা প্রেস ক্লাবের ভবন দখলের হুমকি দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনি সহযোগিতা নেব।’ 

এসব অভিযোগের ব্যাপারে সালথা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরীর বলেন, ‘আমি মানবজমিন পত্রিকার সালথা উপজেলা প্রতিনিধি এবং আমার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আমার দেশ পত্রিকার সালথা উপজেলা প্রতিনিধি।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে টুটু চৌধুরী বলেন, ‘সালথা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সেলিম মোল্লার সঙ্গে নেতৃত্ব নিয়ে আমার বিরোধ রয়েছে, দীর্ঘদিন বনিবনা হচ্ছে না। এজন্য আমি আলাদা প্রেস ক্লাব করছি। অন্য কোন উদ্দেশ্য নয়।’ তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতি-অনিয়ম এর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘একটি চক্র আমাকে হেনস্থা করতে এসব মিথ্যে অভিযোগ ছড়াচ্ছে।’

মানবজমিন পত্রিকার ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি মাহাবুবুল ইসলাম পিকুল বলেন, ‘মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরীকে নিয়োগ দিয়েছিল মানবজমিন কর্তৃপক্ষ। তবে তিনি সক্রিয় ছিলেন না। তাই তার বিরুদ্ধে অফিসে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অফিস থেকে আমাকে সালথা উপজেলার সংবাদ পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে  জানতে পারলাম। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। এলাকায় কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ল ইসল ম উপজ ল সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

রিকশার পাদানিতে গুলিবিদ্ধ নাফিসের সেই ছবির স্কেচ স্থান পেল জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রচ্ছদে

গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজ রিকশার পাদানিতে পড়ে আছে। রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।

গত ৪ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ এমন একটি ছবি তোলেন। ৪ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার পর পত্রিকাটির প্রথম পাতায় ছাপা ১৭ বছর বয়সী নাফিজের এই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

সেই ছবি দেখেই নাফিজের মা-বাবা সন্তানের খোঁজ পান। যদিও মা–বাবা নাফিজের খোঁজ যখন পান, তখন সে আর বেঁচে ছিল না।

রিকশার পাদানিতে নাফিজের নিথর দেহ পড়ে থাকার সেই ছবির স্কেচ (আঁকা ছবি) এবার স্থান পেল জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে ১২৭ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।

গত ১২ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘পাদানিতে ঝুলতে থাকা গুলিবিদ্ধ নাফিজ তখনো রিকশার রড ধরে ছিল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজকে পুলিশ যখন রিকশার পাদানিতে তুলে দেয়, তখনো সে রিকশার রডটি হাত দিয়ে ধরে রেখেছিল। রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ তাকে নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটের একটি হাসপাতালে ঢুকতে গেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বাধা দেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক। পরে ১৭ বছরের গোলাম নাফিজকে নিয়ে রিকশাচালক খামারবাড়ির দিকে চলে যান।

দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাধার পরও রিকশার পাদানিতে ঝুলতে থাকা নাফিজের কয়েকটি ছবি তুলতে পেরেছিলেন। ৪ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার পর পত্রিকাটির প্রথম পাতায় ছাপা নাফিজের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ছবি দেখেই নাফিজের মা-বাবা সন্তানের খোঁজ পান।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘এখন মা-বাবা আর ওই ফটোসাংবাদিকের আক্ষেপ, যদি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যেত আর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো ছেলেটিকে বাঁচানো সম্ভব হতো। গোলাম নাফিজ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে গুলিতে মারা যায়। সে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। পরিবারসহ থাকত মহাখালীতে। দুই ভাই তারা। নাফিজ ছোট।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রিকশার পাদানিতে গুলিবিদ্ধ নাফিসের সেই ছবির স্কেচ স্থান পেল জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রচ্ছদে