শহীদ ড. জোহা দিবসকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব।

এ সময় উপাচার্য বলেন, “উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ড.

জোহার আত্মত্যাগের গুরুত্ব অনেক। তাৎপর্যের কারণে দিবসটি দেশজুড়ে পালিত হওয়ার কথা। তবে, দীর্ঘদিনের দাবির পরও সেটা এখনো হয়নি। অবিলম্বে শহীদ ড. জোহা দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।”

গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অবিলম্বে শহীদ ড. জোহা দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার জোর দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন ও অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক রহমান রাজু, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অমিত কুমার দত্ত, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আরিফুল ইসলাম, রিকশাচালক আনছার আলীসহ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি রায়হান ইসলাম বলেন, “স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে শহীদ জোহার অবদান অসামান্য। এই দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সেটা হয়নি। যা মহান এই শিক্ষকের আত্মত্যাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী ইতিহাসের অমর্যাদা। অবিলম্বে শহীদ ড. জোহা দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানাই। এই গণস্বাক্ষর ও গণবিবৃতি কর্মসূচি চলবে।”

সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা ছিলেন বাঙালি শিক্ষাবিদ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (তৎকালীন রিডার) ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন তিনি।

সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলায়।

ঢাকা/ফাহিম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘তিনটে ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেছে, স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই’

রাজকী বেগমের চোখের সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। তাঁর ছেলেমেয়েদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আহাজারি করতে করতে রাজকী বেগম বলছিলেন, ‘আমার তিনটে ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেছে, আমার স্বামী হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।’

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত শনিবার সকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজকী বেগমের স্বামী হাসিম মোল্যা (৩৮)। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রোববার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে হাসিম মোল্যার মরদেহ এসে পৌঁছায়। আসরের নামাজ পর জানাজা শেষে স্থানীয় বাগমারা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিয়ার হামিদপুর ইউনিয়নের শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে ঠান্ডু মোল্যা ও জনি মোল্যা পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ১৩ জন ও ২ পুলিশ সদস্য আহত হন৷ স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে গুরুতর আহত জনি মোল্যা ও তাঁর ভাই হাসিম মোল্যাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসিম মোল্যা মারা যান। ওই ঘটনায় সিরাজ মোল্যা ও আজিজার শেখ নামের দুজনকে ১টি একনলা বন্দুক, ২০টি গুলিসহ আটক করা হয়।

গতকাল বিকেলে শিলিমপুরে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার পরিবেশ থমথমে। নিহত ব্যক্তির প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা পক্ষের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়েছে। মরদেহ আসার খবরে আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন ভিড় করেছেন হাসিম মোল্যাদের বাড়িতে। অঝোরে কাঁদছেন বৃদ্ধ মা জাহিদা বেগম। তাঁর পাশেই কাঁদছেন হাসিম মোল্যার স্ত্রী রাজকী বেগম।

রাজকী বেগমের অভিযোগ, বাড়ির পাশে তাঁর সামনেই প্রতিপক্ষের লোকজন স্বামী ও সন্তানকে কুপিয়েছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী মারা গেছেন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজকী বেগম বলেন, ‘আমার সামনেই ওরা (প্রতিপক্ষ) স্বামীর মাথায় কোপ দেয়, হাত কেটে ফেলে। আমি কইছি, আর মারিস না, আমার কথা শুনল না। পাশেই আমার সন্তানরেও ওরা কোপাইয়ে ফেলাই থুইছে। ওই সময় আমার কেয়ামত হয়ে যাচ্ছে। আমি স্বামীর কাছে আসব, নাকি সন্তানের কাছে যাব। আমার ছেলের এক পায়ে তিনটে কোপ দেছে। আমি এসবের বিচার চাই।’

নিহত হাসিম মোল্যার বোন নাজনীন আক্তার বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমার এক ভাইয়ের হাত কেটে দেছে, ভাতিজাকে কুপিয়েছে। আমার আরেক ভাইকে খুন করিছে যারা, তাদের ফাঁসি চাই।’

এদিকে হাসিম মোল্যার মৃত্যুর পর প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা পক্ষের লোকজন এলাকায় না থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

গতকাল রাত ১০টার দিকে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক। নিহত হাসিমের মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার এখনো কোনো মামলা করেনি। তবে পুলিশকে মারধর এবং অস্ত্র, গুলিসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ