টাকা চুরির অভিযোগ এনে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় এক শিশুকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। 

গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। 

শিশুটি রানা মিয়া (৯) সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামের আনছার আলীর ছেলে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গতকাল বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে। 

খুঁটিতে বেঁধে রাখার ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুটির দুই হাত পিছনে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা। পিঠ ও বাঁধা দুই হাতের মাঝখানে খুঁটি। কয়েকজন নারী-পুরুষ তাকে ঘিরে রয়েছে। স্থানীয়রা তাকে নানা প্রশ্ন করছে। 

এসময় শিশুটিকে বলতে শোনা যায়, “হাত খুলে দেন ঝিনঝি (ব্যথা) লাগছে।” সেসময় শিশুটিকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। ঠোঁট ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল।

শিশুটির মা রেখা বেগম জানান, দু’দিন আগে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি থেকে মোবাইল ও কিছু টাকা হারিয়ে যায়। এই ঘটনায় জড়িত মনে করে শিশুটিকে মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে সন্দেহজনকভাবে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী স্থানীয় বাজারের একটি মুদি দোকানের সামনের রড সিমেন্টের তৈরি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। এসময় তাকে নির্যাতন করে মারধর করে ওই ব্যবসায়ী ও তার লোকজন। এক পর্যায়ে বাচ্চাটির হাতে সুঁচ ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতেই তাকে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবারও (১৩ ফেব্রুয়ারি) শিশুটি হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ৮ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটি বাম হাত ও বাম পায়ে আঘাত পেয়েছে। উঠেও দাঁড়াতে পারছে না। 

সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সুরঞ্জন কুমার বলেন, “শিশুটি বাম হাত ও বাম পায়ে আঘাত পেয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।” 

শিশুটির মা রেখা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “টাকা চুরির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। তারপর আমার শিশু ছেলেকে বিনা অপরাধে খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আমার ছেলেকে ছেড়ে দেয় তারা। আমার ছেলে কোন দোষ করেনি। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই। কিন্তু আমাকে মীমাংসার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।”

এসব বিষয় জানতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রথমে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কিছুক্ষণ পর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সাদুল্লাপুর থানার ওসি তাজ উদ্দিন খন্দকার জানান, শিশুটিকে খুঁটিতে বেঁধে রাখার কথা শুনেছি। আমি স্বশরীরে হাসপাতালে তাকে দেখতে গিয়েছি। শিশুটির অভিভাবককে মামলা দেওয়ার কথা বলেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/মাসুম/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ ল ল প র উপজ ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মারমাদের মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব যে কারণে হয়, যেভাবে এল

মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাইং উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে আছে ‘মৈতা রিলং পোয়ে’ বা মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব। এই উৎসবে পরস্পরের দিকে পানি ছিটিয়ে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হন মারমারা। ‘সাংগ্রাইংমা ঞি ঞি ঞা ঞা রিকোজাই পামে’(এসো হে সাংগ্রাইংয়ে সবাই মৈত্রী পানিবর্ষণে) গানটিও দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আছে এই উৎসবের ‘থিম সং’।

গবেষক ও মারমা জনগোষ্ঠীর প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবের শুরু গত শতকের সত্তরের দশকে। কিছু তরুণ মিয়ানমারে সাংগ্রাইং উৎসবে এ ধরনের আয়োজন দেখে দেশেও এর প্রচলন করেন। আর ‘সাংগ্রাইংমা ঞি ঞি ঞা ঞা রিকোজাই পামে’ উৎসবের থিম সং হয়েছে ১৯৮৪ সালে।

মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবকে অনেকেই ‘জলকেলি’ ও ‘পানি খেলা’ বলে থাকেন। তবে এসব নাম আপত্তিকর বলে মনে করেন মারমা সমাজের অনেকেই। তাঁদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে ধর্মের যোগ থাকা অনুষ্ঠানটি ভুলভাবে উপস্থাপন হয়।

এবারের সাংগ্রাইং উপলক্ষে আজ বুধবার থেকে বান্দরবান জেলা শহরে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব শুরু হয়েছে। তবে জেলার অন্যান্য জায়গায় গতকাল মঙ্গলবার এই উৎসব শুরু হয়। খাগড়াছড়িতে কোথাও কোথাও সোমবার শুরু হয়েছে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব।

মারমা জনগোষ্ঠীর প্রবীণদের একজন শিক্ষাবিদ থোয়াইংচ প্রু। তিনি প্রথম আলকে বলেন, সাংগ্রাইং আখ্যেয়া বা মূল সাংগ্রাই দিনে বুদ্ধমূর্তি স্নানের আগে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব হয় না। এটা প্রথাসিদ্ধ রীতি। তাই মৈত্রী পানিবর্ষণের সঙ্গে ধর্মের যোগ বেশ স্পষ্ট। তিনি বলেন, পানিকে মারমারা পবিত্র মনে করে। তাই সাংগ্রাইং উৎসবে বন্ধুত্বের বন্ধন এবং পরস্পরের প্রতি মৈত্রী ভাবনা নবায়ন ও সুদৃঢ় করার জন্য একে-অপরের দিকে পানি ছোড়েন। পানি ছিটানোর পর কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালে বোঝা যাবে, বন্ধুত্বের সম্পর্কে ও বন্ধনে টানাপোড়েন আছে। এটিই মৈত্রী পানিবর্ষণের মূল্যবোধ। এ কারণে অনেক সময় অযাচিত কাউকে পানিবর্ষণ করলে আগে সালিসের মুখোমুখিও হতে হতো।

মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবে মেতেছেন মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা। গতকাল বান্দরবানের ডলুপাড়ায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ