শাহবাগে শিক্ষক নিয়োগপ্রত্যাশীদের আন্দোলন থেকে ১৪ জন আটক
Published: 13th, February 2025 GMT
শাহবাগ মোড়ে সরকারি প্রাথমিকের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আটকের বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজন পুরুষ ও সাতজন নারী রয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৬ হাজার ৫৩১ জনের বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা অষ্টম দিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়কের ওপর অবস্থান নেন সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। এতে সায়েন্সল্যাব হয়ে মৎস্যভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর দেড়টার দিকে প্রায় শতাধিক শিক্ষক দ্রুত নিয়োগের দাবিতে রাস্তায় নেমে পড়েন। একই সময় পাশে অবস্থান করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। দুপুর আড়াইটার পর পুলিশ তাদের শাহবাগ মোড থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় জলকামান থেকে তাদের ওপর পানি ছিটানো হয়। এক পর্যায়ে শাহবাগ মোড থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন তারা। বেলা পৌনে তিনটার দিকে তারা পাশেই জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন।
এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় অনেককেই কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়।
রাশেদা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘এ সরকার আমাদের চাকরি দিয়েও কেড়ে নিয়েছে। তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি। চাকরি ফিরিয়ে না দিলে সন্তানদের নিয়েই রাস্তায় শহীদ হয়ে যাব।’
হাইকোর্টের রায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া তৃতীয় ধাপের প্রার্থীদের রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আন্দোলন করছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ ছয় হাজার ৫৩১ জন প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর আগে ১৯ নভেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগপত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচাপতি মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। কোটা পদ্ধিত অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়ায় আদালত এ আদেশ দেন।
৩১ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ৫৩১ জন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
গত ২৮ মে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) মৌখিক পরীক্ষাসহ নিয়োগপ্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণসংক্রান্ত হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন, আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মৌখিক পরীক্ষা নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে এই নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে আসা অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আটক অবস থ ন র সহক র পর ক ষ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলের
সংবিধান সংস্কার কমিশন বড় ধরনের কাঠামোগত সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তাই তাদের সুপারিশের বাস্তবায়ন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করবে। দলগুলো ঐকমত্য হলে নির্বাচনে আগে-পরে করা সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে আশু করণীয় প্রস্তাব নেই বলে বলে জানান কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ একটা আরেকটার সঙ্গে সংযুক্ত। স্কেল হয়তো ডাউন করা যেতে পারে, কিন্তু পুরো বাদ দেওয়া প্রায় অসম্ভব। সেই বিবেচনায় প্রধান করণীয় হচ্ছে- ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, তার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ঐক্য এবং প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা যে, তারা ক্ষমতায় গেলে সংস্কারের জন্য কাজ করবে।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা যেহেতু বড় ধরনের কাঠামোগত সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলোর ক্ষেত্রে প্রথমে দরকার জাতীয় ঐকমত্য। রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু নির্বাচন করবেন, দেশ চালাবেন তাদের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া জরুরি। সেটা নিশ্চিত করতে হবে আগে। তারা যদি ঐকমত্য পৌঁছান, তাহলে সেটি কি এখন করতে চান, নাকি নির্বাচনের পরে করতে চান, নাকি নতুন সংসদে করতে চান, নাকি গণভোটের মাধ্যমে করতে চান- সেটা তারাই নির্ধারণ করবে।
সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রস্তাব দিয়েছেন। দীর্ঘ এক দশক ধরে আলোচনা চলছে। বছর তিনেক আগে একটি রাজনৈতিক দল তাদের সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা রাজনৈতিক দলগুলোর এ ব্যাপারে আন্তরিকতা আছে।
৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদের কারণে প্রধানমন্ত্রীকে সরানোর কোনো প্রক্রিয়া হাতে নেই। বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী একের ভেতর চার। তার অভাবনীয় ক্ষমতা। তিনি চাইলে রাষ্ট্রপতিকে দিয়েও অনেক কিছু করতে পারেন। এ রকম ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে কীভাবে অপসারণ করবেন, যদি অনাস্থা প্রস্তাব না আনা যায়। ৭০ অনুচ্ছেদ অবিকৃত রেখে মৌলিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবেন বলে আমাদের মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি একবার প্রধানমন্ত্রী হলে নিজের দলের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে নন, এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার পথটা কি? ৭০ অনুচ্ছেদ অবিকৃত রেখে কোনো পদ্ধতি আবিষ্কার করা যায়নি। এটা ৫২ বছরের অভিজ্ঞতা।’
গণভোটের সুপারিশ যৌক্তিক বলে মনে করেন আলী রীয়াজ। তার মতে, দেশে সংবিধান সংশোধন হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যদের ভোটে কিন্তু তারা কখনও দেশের ৫০ শতাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। আলী রীয়াজ বলেন, দুই-তৃতীয়াংশ থেকে বেরিয়ে আসার পথ হচ্ছে অধিকতর জনগণের নিশ্চিত করা। বাহাত্তরের সংবিধানে গণভোট না থাকলেও জনগণের মতামত নিতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাতিল করা হয়। আর বাংলাদেশে যেসব ক্ষমতাসীন দল সংবিধান সংশোধন করেছে, তারা কখনও নির্বাচনের আগে জনগণের মতামত নেননি।
মনোনয়নে ১০ শতাংশ তরুণ ও ২১ বছরে বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচনের সুপারিশ শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছি ১০ শতাংশ মনোনয়ন যেন তরুণ-তরুণীদের দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। একইভাবে আমরা ২১ বছরের কথাও বলেছি। সেটা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলেও এ শিক্ষার্থীরাই যে মনোনয়ন পাবেন সেই নিশ্চয়তা তো কেউ করতে পারে না, আমরাও না। ফলে বিশেষভাবে একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি হবে, সেই বিবেচনা করে করা হয়নি।’ তরুণ কারা সেটা আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে বলে জানান কমিশনের সদস্য ড. শরীফ ভূঁইয়া।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে কিনা- এমন প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, গণভোটের মাধ্যমে হবে কিনা, সেটা সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। সেই সুপারিশ দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের কর্মপরিধির মধ্যেই নেই।
বহুত্ববাদ সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভাষা, সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, ধর্ম সমস্ত কিছুর মধ্যে যে পার্থক্যগুলো আছে, সেগুলোকে শুধুমাত্র স্বীকার বা স্বীকৃতি নয়, তাদের যেন সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা যায়। সে কারণে বহুত্ববাদিতার কথা রয়েছে। আমাদের কাছে বহুত্ববাদিতা ধারণাটা মনে হয়েছে আরও আরেক বেশি ব্যাপক, যাতে বিভিন্ন মত-পথ, পরিচয়কে সংশ্লিষ্ট করা যায়। বহুত্ববাদের বিষয়টি ধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বলে জানান তিনি।
সুপারিশের প্রায় সবক্ষেত্রে কমিশনের সদস্যরা ঐকমত্য হলেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সুপারিশে হয়নি বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আমাদের অংশীজনের একটি ব্যাপক অংশ এটি রাখার কথা বলেছেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এটা বলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য সুমাইয়া খায়ের, ইমরান সিদ্দিক, মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ড. শরীফ ভূঁইয়া, এম মঈন আলম ফিরোজী, ফিরোজ আহমেদ, মো. মুসতাইন বিল্লাহ।