অনলাইনে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম এখন ইউটিউব। ভিডিও দেখার পাশাপাশি ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ করে আয়ত্ত করছেন অনেকে। তবে ইউটিউবে দীর্ঘদিন ভালোমানের ভিডিও প্রকাশ করলেও সেগুলোর দর্শকসংখ্যা (ভিউ) বেশি হয় না অনেকের। কিন্তু কেউ আবার একটি বা দুটি ভিডিও প্রকাশ করেই রাতারাতি ইউটিউব তারকায় পরিণত হয়ে যাচ্ছেন। আর তাই বাংলাদেশের ভিডিও কনটেন্ট বা আধেয় নির্মাতাদের ইউটিউবে ভিডিও জনপ্রিয় করার কৌশল শেখাতে গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। ‘ইউটিউব অ্যাকাডেমি ১.

০’ শীর্ষক এ বুটক্যাম্পে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বাচিত কনটেন্ট নির্মাতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইউটিউব তারকারা অংশ নেন।

বুটক্যাম্পে জানানো হয়, বাংলাদেশে ১০ হাজার গ্রাহক বা সাবস্ক্রাইবার থাকা ইউটিউব চ্যানেলের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। বাংলাদেশ থেকে অনেক ইউটিউব নির্মাতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাড়া ফেলেছেন। উদীয়মান নির্মাতাদের বৈশ্বিক দর্শককে আকর্ষণ করার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি ভিডিও জনপ্রিয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি শেখাতে এই বুটক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। বুটক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীদের কার্যকর ভিডিও তৈরির কৌশল, ভিডিও প্রকাশের নানা ধরন থেকে শুরু করে অ্যানালাইটিকস ব্যবহারের কৌশল হাতে–কলমে শেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুনইউটিউবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ চ্যানেলের নাম জানেন কি১৪ অক্টোবর ২০২৪

বুটক্যাম্পে বক্তব্য দেন জনপ্রিয় কনটেন্ট নির্মাতা ফারজানা আক্তার (ফারজানা ড্রয়িং একাডেমি), লিটন আলী খান (ভিলেজ গ্র্যান্ডপাস কুকিং), ওমর সানি সম্রাট (এসএস ফুড চ্যালেঞ্জ), রাফসান (দ্য ছোট ভাই) ও নাফিস সেলিম। তাঁরা নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে ভিডিও তৈরির গল্প ও নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। ফারজানা ড্রয়িং একাডেমির নির্মাতা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমি নিজের আগ্রহের বিষয়টি ইউটিউবে তুলে ধরার চেষ্টা করতে থাকি। ধীরে ধীরে দর্শকেরা আমার চ্যানেলে ভিড় জমাতে থাকেন। ২০১৬ সালে শুরু করা আমার চ্যানেলটিতে বর্তমানে ১ কোটি ৫৩ লাখ সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন।’ ভিলেজ গ্র্যান্ডপাস কুকিংয়ের নির্মাতা লিটন আলী খান বলেন, ‘আমি আমার গ্রামের তরুণদের কিছু অর্থ আয়ের জন্য ভিডিও নির্মাণ শুরু করি। আমার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৯ লাখ ৫০ হাজার।’

আরও পড়ুনইউটিউব চ্যানেল জনপ্রিয় করার ৭ কৌশল১৪ জানুয়ারি ২০২৩

জনপ্রিয় কনটেন্ট নির্মাতা রাফসান দ্য ছোট ভাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক ক্রিয়েটরের সঙ্গে আমি পরিচিত, যাঁরা রাজধানী ঢাকায় থাকেন। আজকের বুটক্যাম্পে আমি এমন সব নির্মাতার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি যাঁরা ক্যামেরার সামনে আসেন না, কিন্তু তাঁদের ভিডিওর দর্শক বিশ্বের নানা প্রান্তে রয়েছেন। তাঁদের তৈরি ভিডিওর নির্মাণশৈলী আর মানের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শকেরা তাঁদের কনটেন্ট সাদরে গ্রহণ করছেন। আমাদের দেশের নির্মাতারাও বিশ্বমানের কনটেন্ট তৈরি করছেন।’

আরও পড়ুনভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে এক বছরে ইউটিউবের আয় কত০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইউটিউব ইন্ডিয়া, সাউথ এশিয়া অ্যান্ড ইমার্জিং মার্কেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজয় বিদ্যাসাগর বুটক্যাম্প সম্পর্কে বলেন, ইউটিউব বাংলাদেশি নির্মাতাদের উৎসাহিত করার জন্য কাজ করছে। এই বুটক্যাম্প স্থানীয় নির্মাতাদের দক্ষতা বাড়াতে একটি টেকসই প্রচেষ্টার সূচনা। আমরা বাংলাদেশের নির্মাতাদের বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আসার জন্য সুযোগ তৈরি করতে পেরে আনন্দিত।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কনট ন ট

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালান ৩ চেয়ারম্যান

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কয়েকমাস ধরে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন নৌকা প্রতিকের তিন ইউপি চেয়ারম্যান। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে ঐ তিন ইউনিয়নের জনগণ। 

চেয়ারম্যানরা কোথায় আছেন তার হদিস কেউ জানে না। তারা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যথাসময়ে পাচ্ছেন না জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য সনদ ও প্রত্যয়নপত্র।

অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালানো চেয়ারম্যানরা হলেন- ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আহম্মেদ শেখ, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিলিয়া আমিনুল।

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। তারা পাঁচ জনই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। 

সেসময় টুঙ্গিপাড়ার মতো দেশের অধিকাংশ চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সরকার। 

তারপর থেকে উপজেলার ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলী ও বর্নির ইউপি চেয়ারম্যানরা অফিস করলেও পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ শুকুর আহম্মেদ আত্মগোপনে থেকে যান। তখন তার স্থলে প্যানেল চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস দায়িত্ব পান।

এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হন কুশলী ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সর্দার। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তার স্থলে দায়িত্ব পান প্যানেল চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ। তারপর থেকে বাকি তিন ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদ পরিচালনা করতে থাকেন।

২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন ঐ তিন ইউপি চেয়ারম্যান। আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা নিজ এলাকার জনগণের ফোনও রিসিভ করছে না। কখনো কখনো রিসিভ করলেও বিভিন্ন আবেদন সচিবদের কাছে রেখে যেতে বলছেন।

বর্নি ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন মুন্সী, হাফেজ মোহাম্মদ মোস্তাইনসহ অনেকে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল ঠিকমতো পরিষদে থাকেন না। নিজেদের কাজ ফেলে রেখে কয়েকমাস ধরে জন্মনিবন্ধনের জন্য ঘুরছি, কিন্তু চেয়ারম্যানের দেখা পাচ্ছি না। আর অন্যান্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ।”

তারা আরো বলেন, “চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বরও বন্ধ। চেয়ারম্যানের একটা স্বাক্ষরের জন্য জনগণের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। বর্নি ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন তারা।

বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, “চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল মাস খানেক হলো পরিষদে আসেন না। প্রতিদিন জনগণের আবেদন বা কাগজপত্র একটা ফাইলে রেখে দেই। আর চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল ইসলাম দুই একদিন পর পর ফাইলটি নিয়ে যান। আর চেয়ারম্যান কাগজপত্র সই করে পরে আবার পাঠিয়ে দেন। এভাবেই চলছে বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ।”

ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, সাহেদ তালুকদারসহ গোপালপুর ইউনিয়নের অনেকে বলেন, “চেয়ারম্যানরা আত্মগোপানে থাকায় ওয়ারিশান, নাগরিক, চারিত্রিক ও মৃত্যু সনদ নিতে দিনের পর দিন পরিষদে ঘুরেও জনগণ কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন জনগণের ভোগান্তি, অপরদিকে ব্যাপক সময় আপচয় হচ্ছে। শুনেছি চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন তারা। তাই জনজীবনের দুর্ভোগ কমাতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”

এ বিষয়ে জানতে গোপালপুর ও ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও দুই চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং আলী আহম্মেদ শেখকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে তাদের মোবাইলে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

তবে বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুলের হোয়াটসঅ্যাপে কল করলে তিনি রিসিভ করেন। তখন বেশ কিছুদিন পরিষদ কার্যালয়ে আসেন না জানিয়ে মিলিয়া আমিনুল বলেন, “পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের মিথ্যা মামলায় আমাকে ১০৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পরিষদে যেতে পারছি না।” 

এতে জনপ্রতিনিধিদের অফিস চলাকালীন কার্যালয়ে থাকার সরকারি নির্দেশ অমান্য হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেখানে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে দাঁড়ানো যায় না। তাই আমি ঘর পরিবর্তন করেছি, তবে এলাকাতেই আছি।”

তিনি দাবি করেন, তার এলাকার জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে না। কারণ, তার স্বামী ও সচিবের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে বসে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। কোনো কাজহই বাকি থাকে না।

এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক বলেন, “কোন জনপ্রতিনিধি অনুমোদনহীনভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃস্টি হয়। নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ও জনদুর্ভোগ লাগবে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ