ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলপরী লিখেছেন, ‘কর্মফল নিশ্চয়ই হয়েছে’
Published: 13th, February 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার দুই বছর পার হলো। ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে গণরুমে ডেকে তাঁকে রাতভর নির্যাতন করেছিলেন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতা–কর্মীরা। সেই রাতের স্মৃতি মনে করে গতকাল বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফুলপরী। বলেছেন, ‘মস্তিষ্ক যত দিন সুস্থ থাকবে, সেই রাত তত দিন স্মৃতি হয়ে থাকবে।’
ফুলপরী লিখেছেন, ২০২৩ সালের ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারির সময়টায় তিনি অনেক অসহায় ছিলেন। তিনি কিছু করেননি, অথচ ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অপমানের শিকার হয়েছিলেন। তাঁর ভাষায়, ‘জীবনে ফেলা আসা রাতগুলোর মধ্যে ওটা জঘন্যতম রাত। মনে হচ্ছিল, কোনো কোনো মার্ডার করা আসামির রিমান্ড চলছে। সঙ্গে সুইসাইড নোট আর শ্বাসকষ্টের জন্য আমারই ইনহেলার চেয়েও পাইনি। চলছে তো চলছেই, রাত শেষ হয়ে যায়, তা–ও প্রতিহিংসা বিন্দুমাত্র কমে না।’
পৃথিবীর কোনো প্রাণীকে ভয় পাওয়ার জন্য জন্ম হয়নি উল্লেখ করে ফুলপরী লিখেছেন, ‘তারা ভয় দেখায় যে মাঝরাতে হল থেকে বের করে দিব। শেয়াল–কুকুর ছিঁড়ে খাবে। বোকা চন্দ্রবিন্দুরা জানে না আমি ছোট থেকে শিয়াল–কুকুরের সঙ্গেই অন্ধকারে থেকে বড় হয়েছি। ভয় দেখায়ে বিন্দুমাত্র লাভ নাই। যাদের চিনি না, যাদের সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই, তারা শুধুমাত্র ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করার জন্য সাধারণ একটা নিরুপায় মনকে দুমড়েমুচড়ে পঙ্গু করে দেয়। মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকারটা হরণ করে নিতে চায়। নিষ্পাপ মনগুলোর হাহাকার, আত্মচিৎকার আপনাআপনিই অভিশাপে রূপ নেয়। তাদের কর্মফল নিশ্চয়ই হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা আবাসিক হলের গণরুমে আটকে রেখে ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতন করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পর সারা দেশে আলোচনার ঝড় ওঠে। গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো.
২০২৩ সালের ২১ আগস্ট ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেত্রীসহ পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী, হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।
ফুলপরী খাতুন এখন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকেন। তিনি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। সেই রাতের ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুই থেকে তিনবার শেখ হাসিনা হলে গিয়েছিলেন। প্রথম এক বছর তাঁর সঙ্গে তেমন কেউ মিশতেন না। তবে এক বছর ধরে তাঁকে ডেকে ডেকে সবাই কথা বলেন বলে জানালেন তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল র র জন য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা সিটির একমাত্র সচল হাসপাতালে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চল গাজা সিটির প্রধান আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে শনিবার রাতে (১২ এপ্রিল) দুটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। এতে হাসপাতালটির আইসিইউ এবং অস্ত্রোপচার বিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে। খবর বিবিসির।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজাজুড়ে নির্বিচার বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। রেহাই পায়নি হাসপাতালও। আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালটি গাজা সিটিতে সচল থাকা একমাত্র হাসপাতাল ছিল।
অনলাইনে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, হাসপাতালের দোতলা ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর সেখান থেকে আগুনের বিশাল কুণ্ডলি ছড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতালের বেডে থাকা কিছু রোগীকে দ্রুত অন্য স্থানে সরিয়ে নিতেও দেখা যায় ভিডিওতে।
আরো পড়ুন:
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অসুস্থ হওয়া ১৪ জন ঢাকা মেডিকেলে
চোখের জলে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি কামনায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সমাপ্ত
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হাসপাতালটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, কারণ এতে হামাসের একটি কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ছিল। গাজার বেসামরিক জরুরি পরিষেবা অনুসারে, কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
তবে, হাসপাতালের সঙ্গে সম্পর্কিত জেরুজালেমের এপিস্কোপাল ডায়োসিসের এক বিবৃতি অনুসারে, রোগীদের তাড়াহুড়ো করে সরিয়ে নেওয়ার ফলে চিকিৎসাধীন থাকা গুরুতর অসুস্থ এক শিশু মারা গেছে।”
গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাসপাতালের আইসিইউ এবং অস্ত্রোপচার ভবনটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। যার ফলে রোগী এবং হাসপাতাল কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে।
আইডিএফ জানিয়েছে, তারা বেসামরিক নাগরিক বা হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ক্ষতি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে সন্ত্রাসী অবকাঠামোর এলাকায় অগ্রিম সতর্কতা জারি, সুনির্দিষ্ট অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার এবং ড্রোন নজরদারি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেছেন, ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) হাসপাতালের এক চিকিৎসককে ফোন করে তাৎক্ষণিকভাবে ভবন খালি করার সতর্কবার্তা দিয়েছিল। চলে যাওয়ার জন্য মাত্র ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল।
স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া ফুটেজে হাসপাতালের কর্মী ও রোগীদেরকে বাইরে অন্ধকারের মধ্যেই অন্য জায়গায় সরে যেতে দেখা গেছে। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আশ্রয় নিয়ে থাকা নারী ও শিশুদেরকেও পালাতে দেখা যায় ফুটেজে।
দখলদার ইসরায়েল গত বছর গাজা সিটির সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফাকে পুরোপুরি ধ্বংস দিয়েছিল। এরপর আল-আহলি হাসপাতালটি সেখানকার প্রধান হাসপাতালে পরিণত হয়। শনিবার দিবাগত রাতে এই হাসপাতালটিতেও হামলা চালিয়েছে তারা। এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে একই হাসপাতালে হামলা চালিয়ে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করেছিল দখলদার ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ ১৫ মাস ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং এটি প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী এখন পর্যন্ত গাজার ৩৫টি হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার রোগী, আহত ব্যক্তি ও আশ্রয়প্রার্থী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ঢাকা/ফিরোজ