জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ‘স্বস্তি’ প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে (জাতিসংঘের প্রতিবেদন) আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি যে সত্য ঘটনাগুলো উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। ...তারা সঠিকভাবেই বলেছে যে একজন ব্যক্তি বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই সব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যত গণহত্যা হয়েছে, তাঁর নির্দেশেই হয়েছে এবং যত মানবাধিকার লঙ্ঘন, সব তাঁর নির্দেশেই হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন যে ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে ফেরত দেবে এবং তাঁকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান সাক্ষাৎ করেন। পরে এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সত্য উদ্‌ঘাটিত হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমস্যাটা হচ্ছে, যখন জাতিসংঘ বলে, তখন আমরা ঘটনাগুলো বিশ্বাস করি।। আর যখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বলি, অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। যাহোক, আজ আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, জাতিসংঘের যে পর্যবেক্ষণ কমিটি এসেছে, তাদের যে রিপোর্ট, তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা সঠিকভাবেই বলেছে যে একজন ব্যক্তি বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই সব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’

ফখরুল বলেন, যত গণহত্যা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে এবং যত মানবাধিকার লঙ্ঘন, সব তাঁর নির্দেশেই হয়েছে এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া, প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেওয়া, আজ সেটাই ফুটে উঠেছে যে তাঁর নির্দেশেই এসব ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, সুতরাং এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট এবং তিনি এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন, নির্যাতন করেছেন এবং গণহত্যা করেছেন।

শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ না করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আজ এখান থেকে বলি, তাঁকে অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের হাতে ফেরত দেবে এবং বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাঁকে এবং তাঁর সহযোগী যাঁরা ছিলেন, সবাইকে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।’

‘আয়নাঘর’, আজ সত্য প্রমাণিত হলো

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের গতকাল ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারা অতীতে যে কথা বলেছিলেন, এখন সেগুলো সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

বিগত দিনগুলোয় বিএনপির লোকেরাই বেশি গুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম জিনিসটাকে আমি ভিন্নভাবে দেখি। গুম হওয়া, হত্যা করা, এটা শুধু সুনির্দিষ্ট কোনো একটা দলের কথা আমি বলতে চাই না। এটা বাংলাদেশের মানুষকে গুম করা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। এ কথা আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি এবং যখন আয়নাঘরের প্রতিবেদনটা বের হয়, নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। তখন কিন্তু বিগত সরকার পুরোপুরি নাকচ করেছে। তারা বলেছে যে এ ধরনের কিছু নাই। কিন্তু প্রথম থেকেই কাজটা চলে এসেছে।’

পতিত আওয়ামী লীগর সরকারের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা মানুষকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, জঙ্গি সংগঠন করছে, এ ধরনের কথা বলে বন্দী করে নির্যাতন করে তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা বের করার চেষ্টা করেছেন। কিছু লোককে তারা সেখানে রেখে দিয়েছিল যে বিভিন্ন সময়ে তাঁদের দিয়ে জঙ্গি নাটক সাজাবে। ট্রেনিং হচ্ছে, বোমা তৈরি করা হচ্ছ, এসব করা হচ্ছে বলে। আজ প্রমাণিত হলো, আমরা যে কথা বলেছি, সেগুলো সত্যি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দলকে ধ্বংস করেছে।

‘আ.

লীগকে নিষিদ্ধ করা’, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর উল্লেখ করে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে...আমরা বিষয়গুলো আগেই বলেছি যে এ বিষয়ে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এ বিষয়ে বারবার বলে আসছি যে আমরা একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রে সব দলের ওপর আমরা আস্থা রাখি। সেগুলো আমরা অতীতেও চর্চা করেছি। সেভাবেই আমরা মনে করি, কোনো পার্টি থাকবে কি থাকবে না, নির্বাচন করবে কি করবে না, কাজ করবে কি করবে না, সেগুলো জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।’

ব্রিফিংয়ে বিএনপির মহাসচিব জানান, ব্রিটেনের ডেপুটি হাইকমিশনারের (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার) সঙ্গে রুটিন আলোচনা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, নির্বাচন, সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিদেশি মিশন যেগুলো আছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে তাদের কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়। এখন যেসব পরিবর্তন হচ্ছে, যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলো তারা জানতে চায়। তিনি বলেন, ‘প্রতিটা দেশেরই পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ভর করে সেই দেশের ভেতরকার রাজনৈতিক অবস্থার ওপর। সে বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। রাজনৈতিক অবস্থা, কবে নির্বাচন হচ্ছে, বর্তমান সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে সম্পর্ক জানতে চেয়েছে।’

ব্রিফিংয়ে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ন র দ শ ই হয় ছ ফখর ল ইসল ম গণতন ত র ধ ব স কর র জন ত ক সরক র র গণহত য ই বল ছ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আগে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে

জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চাইলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মত অনুযায়ী আগে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আগে জাতীয় নির্বাচন দিলে ক্ষমতায় যাওয়া দল স্বৈরাচারী হয়ে উঠবে—এমন ভাবলে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়েও তা ঠেকানো যাবে না।

‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতন্ত্রকে টেকসই করবে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। রাজধানীর উত্তরায় উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে নাগরিক ঐক্য, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এই আলোচনা সভা ও ইফতারের আয়োজন করে।

এই আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে অন্তত দুই বছর তো লাগবে। এই সময়ে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, সেটা সামাল দিতে পারবেন? কত মানুষ মারা যাবে, বলতে পারেন? আবেগে অনেক কিছু বলা যায়; কিন্তু আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র চলে না, রাজনীতি চলে না।’ তিনি আরও বলেন, গায়ের জোরে কেউ ক্ষমতায় যেতেও পারবে না, থাকতেও পারবে না। কেউ যদি মনে করে, নির্বাচন দিলে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা স্বৈরাচারী হয়ে উঠবে, নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে তো সেটা ঠেকানো যাবে না। সেটা ঠেকাতে হলে রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেই লড়াই জারি রাখতে হবে।

মাগুরার শিশুটির মৃত্যুতে গভীর শোক এবং ধর্ষক–হত্যাকারীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর লক্ষ্য ছিল নতুন বাংলাদেশের। যে নতুন বাংলাদেশ মানে, মাগুরার ওই শিশুটি বা অন্য শিশুরা নিরাপদ থাকবে, মানুষ না খেয়ে থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবে না, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে।

আলোচনা সভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। যদি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চান, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।’ তিনি বলেন, আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন মানে স্বৈরাচার হাসিনার ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন, পতিত আওয়ামী লীগের টাকার খেলা। এর মধ্য দিয়ে আবারও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সারা দেশ দাপিয়ে বেড়াবে।

আমজনতার দলের আহ্বায়ক মিয়া মশিউজ্জামান বলেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী লড়াই হয়েছে হাসিনার পতনের পর একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নয়। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এমন কোনো দাবি নিয়ে হাজির হবেন না, যাতে দেশে আবারও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।’

অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সংগঠক মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ডাকসুর সাবেক জিএস মোস্তাক আহমেদসহ গণতন্ত্র মঞ্চ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালীগঞ্জে বিএনপি নেতা ফিরোজের ইফতার মাহফিল 
  • শেখ হাসিনার সহযোগী আসামি সাবেক আইজিপি মামুন
  • গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাসিনার সঙ্গে আসামি হলেন সাবেক আইজিপি মামুন
  • ক্ষমতা নয়, বিশ্বাস করি গণতন্ত্রের রাজনীতিতে
  • সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী জাতিসংঘ মহাসচিব: জামায়াত
  • জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন রাজনৈতিক নেতারা
  • ২ দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা
  • এক মাস গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করবে ইনকিলাব মঞ্চ
  • আমরা স্বদেশে ফিরতে চাই
  • জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আগে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে