রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
Published: 13th, February 2025 GMT
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত জেলা ও মহানগর কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী কলেজের প্রধান ফটক থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মিছিলটি নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি ছয় মাসের জন্য ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আল আশরারুল ইমামকে আহ্বায়ক ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী হজরত আনাসকে সদস্যসচিব করে ১১৫ সদস্যবিশিষ্ট মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী মো.
কমিটি ঘোষণার পরদিন ঘোষিত কমিটিকে ‘পকেট’ কমিটি দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। পরে ২ ফেব্রুয়ারি কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী হাফিজ সরকারের সঞ্চালনায় আজ মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তব্য দেন কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম, সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আদিব মাহমুদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শাহদাত হোসেন, ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।
নিশাত তাসনিম বলেন, ‘এই পকেট কমিটিতে আমাকেও পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি পদত্যাগ করেছি। আমরা কোনো পদের জন্য আন্দোলন করিনি। এমনকি আজও এখানে পদ পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। আমরা রাজপথে আন্দোলন করতেই পছন্দ করি। জুলাইয়ের চেতনাকে কলঙ্কিত করবে, আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না। নতুন স্বাধীনতার পর একটা দক্ষ নেতৃত্ব প্রয়োজন, সেটা সেই নেতৃত্ব, যাঁরা রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছেন। আমরা এমন কাউকে দায়িত্ব দিতে পারি না, যাঁরা রাজশাহীর রাজপথ কী জানেনই না।’
শিক্ষার্থী আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরা লীগ, দোসরকে দিয়ে কমিটি মানব না। স্বৈরাচারের দোসরদের দিয়ে যদি কমিটি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চালানোর পাঁয়তারা করে, তাদের পরিণাম কিন্তু ভালো হবে না। যাঁদের এই কমিটিতে আনা হয়েছে, তাঁরা কেউ রাজশাহীর শহীদ সাকিব আনজুম, আলী রায়হানকেই চেনেন না।’ তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা হাসনাত আবদুল্লাহ ও মাহিন সরকারকে বলতে চাই, আগামী তিন দিনের মধ্যে যদি কমিটি বাতিল না করা হয়, আগামী রোববার তালাইমারী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।’
এ ব্যাপারে মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আল আশরারুল ইমাম বলেন, ‘আমি আন্দোলনে ছিলাম না, এটা জানি না তাঁরা কোন সেন্সে বলছেন। আওয়ামী লীগের দোসর একজনকে বলা হচ্ছে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেই আন্দোলনে এসেছেন। আন্দোলনের সময়ে কী ভূমিকা ছিল, সেটা দেখেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্র কমিটি দিয়েছে।’
জেলার আহ্বায়ক মো. নাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা কমিটি নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন নেই। কারও কোনো বিতর্কিত ভূমিকা নেই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কল জ র শ ক ষ র থ বর ষ র র কম ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধে পুতিনের সম্মতি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ফোনালাপ করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি এবং যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন তারা। উভয় নেতাই এই সংঘাতের সমাপ্তি টানতে স্থায়ী শান্তির বিষয়ে একমত হয়েছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উন্নত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। কথোপকথনে ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধে ট্রাম্পের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন পুতিন। ফোনালাপ শেষে এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির সামরিক বাহিনীকে এ-সম্পর্কিত আদেশও দিয়েছেন। পাশাপাশি কৃষ্ণসাগরে নৌ চলাচলের নিরাপত্তা সম্পর্কিত ট্রাম্পের প্রস্তাবেও গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া জানান পুতিন।
গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে এটি দ্বিতীয় আলাপ। ফেনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার ৩০ দিনের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা আলোচনার মূল বিষয় হিসেবে মনে করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে ইউক্রেন এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছিল। আলোচনায় পুতিন এই যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ এবং ওই সময়ে ইউক্রেনের সেনা সংগ্রহ ও পুনরায় সশস্ত্র হওয়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উত্থাপন করেছেন। পুতিন এ সময় বলেছেন, সংঘাতের সমাধান সমন্বিত, টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার নিরাপত্তা স্বার্থ ও যুদ্ধের মূল কারণগুলো বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
হোয়াইট হাউস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফোনালাপে দুই নেতা উল্লেখ করেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়েই এই যুদ্ধে প্রচুর সম্পদ ও প্রাণ হারিয়েছে, যা তাদের জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত ছিল। এই সংঘাত কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না এবং এটি বহু আগেই আন্তরিক ও সদিচ্ছাপূর্ণ শান্তি প্রচেষ্টার মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত ছিল। তারা কৌশলগত অস্ত্রের বিস্তার এবং ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বন্ধ করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া দুই নেতা একমত হয়েছেন, ইরান কখনোই এমন অবস্থানে থাকা উচিত নয়, যাতে তারা ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, উভয় নেতা বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উন্নত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বৃহৎ অর্থনৈতিক চুক্তি এবং ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে, যখন শান্তি নিশ্চিত হবে।
পরে ক্রেমলিনও একটি বিবৃতি দিয়ে জ্বালানি অবকাঠামো সম্পর্কিত যুদ্ধবিরতির তথ্য নিশ্চিত করে। এতে বলা হয়েছে, আলোচনায় ট্রাম্প প্রস্তাব করেন ৩০ দিনের জন্য সংঘর্ষে থাকা পক্ষগুলোকে জ্বালানি অবকাঠামোয় আঘাত থেকে পারস্পরিকভাবে বিরত থাকতে হবে। পুতিন এই উদ্যোগের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেন এবং রুশ সেনাবাহিনীকে তা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কৃষ্ণসাগরে নৌ চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্পের একটি সুপরিচিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রস্তাবেও গঠনমূলকভাবে সাড়া দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। উভয় নেতাই এই ধরনের চুক্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ আরও বিস্তারিত আলোচনা শুরু করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
ক্রেমলিনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সংঘাতের উত্তেজনা কমাতে এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে এর সমাধান খুঁজতে বিদেশি সামরিক সহায়তা ও কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করা জরুরি।
এদিকে ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইউক্রেন। এর আগে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা মঙ্গলবার বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে কিয়েভ বাধা নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে তারা ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি অর্জন করতে পারবেন।