পবিত্র শবে বরাতে আতশবাজি-পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি
Published: 13th, February 2025 GMT
আগামীকাল শুক্রবার রাতে ধর্মীয় গাম্ভীর্যের সঙ্গে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। এদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি-পটকা ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য বেচাকেনা, বহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষা, শান্তিপূর্ণভাবে পালন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি ও পটকা ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য বেচাকেনা, বহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলো। ডিএমপি অরডিন্যান্স-১৯৭৬-এর ২৮ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
হিজরি সনের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি (পবিত্র শবে বরাত) ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রাত হিসেবে পরিচিত। এই রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ তাআলা।
মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন। পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তাও নিয়ে আসে। শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস। তাই শবে বরাত থেকেই কার্যত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুরে দফায় দফায় সংঘর্ষ–ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, এএসপিসহ আহত ৫০
মাদারীপুরের রাজৈরে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষ অন্তত ৪০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে পুরো এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন।
গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রাজৈর উপজেলার ব্যাপারীপাড়া মোড়ে বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে পুলিশের দুটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামের ১২টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। পরে রাত ১১টার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কয়েক ঘণ্টা যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর আগে গত শনিবার রাতে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে পুলিশের ৮ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।
পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২ এপ্রিল রাজৈর উপজেলার বদরপাশা গ্রামের আতিয়ার আকনের ছেলে জুনায়েদ তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আতশবাজি ফোটান। এতে বাধা দেন একই গ্রামের মোয়াজ্জেম খানের ছেলে জোবায়ের খান ও তাঁর বন্ধুরা। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এর জেরে পরদিন সকালে রাজৈরের ব্যাপারীপাড়া মোড়ে জোবায়েরকে একা পেয়ে পিটিয়ে ডান পা ভেঙে দেয় জুনায়েদ ও তাঁর লোকজন। পরে আহত জোবায়েরের বড় ভাই সালমান খান বাদী হয়ে জুনায়েদকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নামে রাজৈর থানায় একটি মামলা করেন।
১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় অনিক রাজৈর বাজারে গেলে ধাওয়া দেন জুনায়েদ ও তাঁর বন্ধুরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। বিষয়টি মীসাংসার জন্য গতকাল দুপুরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা দুই পক্ষের লোকজনকে ডাকেন। আজ সোমবার সকাল ১০টায় সালিস মীমাংসার জন্য একসঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এর আগেই রোববার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ১২টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে বদরপাশা গ্রামের বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি পুলিশ। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম, রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খানসহ পুলিশের ১১ সদস্য ও উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মেহেদী মীর (২২), রাসেল শেখ (২৮), সাহাপাড়ার মনোতোষ সাহা (৫০) ও আলমদস্তা গ্রামের মো. তোওফিককে (৩৭) রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা রাজৈর ও মাদারীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সজীব মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মাইক দিয়ে দুই গ্রামের লোকজনকে জড়ো করা হয়। তাঁদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বৃষ্টির মতো ইটের খোয়া নিক্ষেপ করা হয়। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ দমাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হলে তাঁরা টর্চলাইট ব্যবহার করে সংঘর্ষে জড়ান।
রাজৈর থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদ খান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আবার সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাসদস্য টহলে রয়েছেন। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের ১১ জন আহত ও ২টি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হবে।