কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে বোমা সদৃশ বস্তু, ঘিরে রেখেছে পুলিশ
Published: 13th, February 2025 GMT
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (চিনিকল) প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাল টেপ মোড়ানো একটি বস্তুকে নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বোমা সদৃশ বস্তু সন্দেহে এটিকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় চিনিকলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা (বিপিএম-সেবা) সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বস্তুটি কি জিনিস এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। বোম্ব ডিসপোজাল টিমকে জানানো হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেনারেল অফিস ও ক্লাবের পাশের ছোট জঙ্গলের মধ্যে লাল টেপে মোড়ানো একটি বস্তু দেখতে পান কোম্পানির কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীরা। পরে বোমা ধারণা করে দ্রুত দর্শনা থানা পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্পে খবর দেন তারা।
এদিকে, খবর পেয়ে জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, দর্শনা থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মুহম্মদ শহীদ তিতুমীর ও সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনাস্থলের আশপাশে কাউকেই যেতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ সদস্যরা ঘিরে রেখেছে।
ওসি মুহম্মদ শহীদ তিতুমীর বলেন, র্যাব-৫ এর বোম্ব ডিসপোজাল টিমকে জানানো হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে আসলে জানা যাবে এটি বোমা নাকি অন্য কিছু।
এ বিষয়ে জানতে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচালক রাব্বি হাসানের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শীতল অগ্নি
কয়েক দিনের মধ্যেই সারা শহরে হজরত ইবরাহিমের (আ.) মূর্তি ভাঙার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ল, একপর্যায়ে রাজা নমরুদের কানেও পৌঁছল। সেকালে রাজা-বাদশাহরা নিজেদের কেবল দুনিয়ার হর্তাকর্তাই না, বিভিন্ন কাল্পনিক দেবদেবীর অবতার মনে করত। কেউ বলত আমি অমুক দেবতার সন্তান, আবার কেউ বলত আমিই দেবতা, মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। মূলত ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে ও জনতাকে বশে রাখতে তারা এসব মিথ্যা গল্প সাজাত। নমরুদও ছিল এই শ্রেণির রাজা, রাজত্বের পাশাপাশি সে দেবত্বেরও দাবিদার ছিল। (সহজ তাফসীরুল কুরআন, মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪১১, মাকতাবাতুল আশরাফ।)
ইবরাহিমের (আ.) এক আল্লাহর দাওয়াত তার মধ্যে কাঁপুনি সৃষ্টি করল। সে ভাবল, এই লোক তো আমার রাজত্বের জন্য হুমকি। সে নির্দেশ দিল, এখনই তাকে পাকড়াও করে রাজদরবারে নিয়ে আসো। হজরত ইবরাহিম (আ.) এটাকে দাওয়াতি কাজের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ধরে নিলেন।
আরও পড়ুনইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রাজদরবারে ইবরাহিম (আ.) ও নমরুদ মুখোমুখি। উপস্থিত সভাসদ ও সাধারণ মানুষ। নমরুদ জিজ্ঞেস করল, তুমি যে খোদার কথা প্রচার করো—তার সম্পর্কে বলো। ইবরাহিম (আ.) বললেন, আমার রব তিনিই—যিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। নমরুদ বলল, আমিও তো জীবন ও মৃত্যু দিই! এই বলে একজন নিরপরাধ লোককে হত্যা করল, আরেকজন দাগি আসামিকে মুক্ত করে দিল। ইবরাহিম (আ.) বুঝতে পারলেন নমরুদ ভাষার মারপ্যাঁচ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি এবার বললেন, ‘আমার রব তিনি—যিনি পূবদিক থেকে সূর্য উদিত করেন, আপনি পারলে পশ্চিমদিক থেকে সূর্য উদিত করে দেখান তো!’ এ কথা শুনে নমরুদ লা-জওয়াব হয়ে গেল। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৮)
ইবরাহিম (আ.) ও নমরুদের কথোপকথন থেকে আমরা কথা বলার চারটি সূত্র বের করতে পারি:
১. এমন ভাষায় কথা বলতে হবে, যেভাবে কথা বললে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না।
২. কথায় কোনো ফাঁকফোকড় থাকবে না। কারণ মন্দ মানুষ সব সময় কথার ফাঁকফোকড় কাজে লাগিয়ে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
৩. কথা হবে সারগর্ভ। আমাদের কথা ‘হালকা’ হলে চলবে না। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষেরা হালকা কথা বলেন না।
৪. অতিরিক্ত কথা না বলে ‘সুনির্দিষ্ট’ কথা বলতে হবে।
আরও পড়ুনরানি বিলকিস ও হজরত সোলায়মানের (আ.) ঘটনা১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫যাই হোক, সত্যকে স্বীকার করার বদলে নমরুদ ধরে নিল তাকে অপমান করা হয়েছে। রাজা থেকে প্রজা সবাই একজোট হয়ে গেল—পূর্বপুরুষের ধর্মের বিরোধিতা ও দেবতাকে অসম্মানের দায়ে হজরত ইবরাহিমকে (আ.) আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে। পোড়ানোর দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হলো। এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভীড় করল। চারদিকে হইহই রব পড়ে গেল, লোকজন প্রবল উৎসাহে লাকড়ি জোগাড় করতে লাগল। চারদিকে দেয়াল বানিয়ে অগ্নিকুণ্ড বানানো হলো। কিন্তু হজরত ইবরাহিমের (আ.) মনে কোনো ভয় ছিল না, তিনি ছিলেন একদম শান্ত। কারণ তিনি জানেন আল্লাহ-তাআলাই একমাত্র সহায়ক, তিনি যদি হেফাজত করতে চান তবে কারুর সাধ্য নাই তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করার।
নমরুদ একটি চড়কায় করে হজরত ইবরাহিমকে (আ.) সেই আগুনে নিক্ষেপ করল। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। ঠিক ওই মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা আগুনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আগুন, তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও শান্তিদায়ক হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৬৯)
অমনি আগুন ঠান্ডা ও আরামদায়ক হয়ে গেল। তিনি বলেন, আমি অগ্নিকুণ্ডে অবস্থাকালীন যে আরাম-আয়েশ পেয়েছিলাম, জীবনে আর কোনো দিনও তা পাইনি। ইবরাহিম (আ.) অগ্নিকুণ্ডে ৭দিন অবস্থান করেন, কোনো কোনো ইতিহাসবিদ বলেন ৪০দিন। যতদিনই হোক, এ ছিল এক আশ্চর্য ঘটনা। আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের মাধ্যমে এমন অনেক অলৌকিক ঘটনা দেখান।
কয়েকদিন বাদে নমরুদ আগুনে উঁকি মেরে ইবরাহিমকে (আ.) নিরুদ্বিগ্ন দেখতে পেয়ে সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। সে ইবরাহিমকে (আ.) আগুন থেকে বের হয়ে আসতে বলে। তিনি বের হয়ে এলে নমরুদ বলল, ইবরাহিম, তোমার খোদা তো অনেক শক্তিশালী, আমি তার নামে চার হাজার গরু কোরবানি করব। ইবরাহিম (আ.) বললেন, কুফরি অবস্থায় আপনার কোরবানি কবুল হবে না, আপনাকে প্রথমে ঈমান গ্রহণ করতে হবে। নমরুদ বলল, আমি তো আমার রাজত্ব ছাড়তে পারব না। এরপর সে সত্যি সত্যিই ৪,০০০ গরু জবাই করেছিল। (সীরাত বিশ্বকোষ, ১/৩৪৩-৩৪৪, ইফাবা)
নমরুদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্ট বিবরণ নেই। অনেকে বলেন, তার নাকের ছিদ্র দিয়ে একটি মশা ঢুকে গিয়ে মস্তিষ্কে উৎপাত করতে শুরু করে। সে হাতুড়ি দিয়ে ক্রমাগত নিজের মাথায় আঘাত করত। এভাবেই তার মৃত্যু হয়। (তাফসীরে তাবারী, ৫/৫৫, ইফাবা)
আরও পড়ুনবিপদে হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পাঠের মাহাত্ম্য০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫