ন্যূনতম সংস্কার কর্মসূচির একটি নকশা
Published: 13th, February 2025 GMT
অলিগার্কিক শাসনের পতন দেশের গভীর কাঠামোগত সংকটগুলো উন্মোচন করেছে। পতিত সরকার রেখে গেছে সর্বব্যাপী সংকট। জনগণের মধ্যে বাড়তে থাকা অসন্তোষ এখন বাস্তবতা। এ কারণেই দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
অপসারিত অলিগার্কিক শাসনব্যবস্থা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ ছিল। ব্যয় নির্বাহের সংকট মূলত শ্রমজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে চলছে। ব্যাংকিং খাত নগদ অর্থের সংকটে হিমশিম খাচ্ছে। নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে উৎপাদন ও সেবা খাত হচ্ছে সংকুচিত। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি নীতি স্থায়িত্বের অভাবে মূলধন বিনিয়োগ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। ফলে অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে মন্দার দিকে ধাবিত।
বিরাজমান এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি ভঙ্গুর এক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিচ্ছবি। রেখে যাওয়া ক্ষমতাকাঠামো ব্যর্থ হয়েছে টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়। গণতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবর্তে ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তথা গোষ্ঠীস্বার্থকেই রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে কায়েম করেছিল। অর্থনৈতিক নীতিকাঠামো সাধারণ জনগণের পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের শিকার হয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিচারব্যবস্থা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসন হারিয়েছে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার অভাবে একধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। পতিত শাসক জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই দেশ পরিচালনা করছিল।
নতুন রাজনৈতিক কাঠামো জরুরিঅন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বৈপরীত্যগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। তবে কোনো সরকারই বৈধ রাজনৈতিক ম্যান্ডেট ছাড়া কার্যকর অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আনতে পারবে না। বাংলাদেশকে এমন একটি শাসনকাঠামো গঠন করতে হবে, যা শুধু একটি সুবিধাভোগী শ্রেণির পরিবর্তে সাধারণ জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
সাম্য, গণতান্ত্রিক জবাবদিহি ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি প্রয়োজন। তাহলেই জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, আস্থা তৈরি এবং প্রকৃত সংস্কার কার্যকর করতে পারে। নির্বাচিত সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি অর্থনৈতিকভাবেও অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক বৈধতা ছাড়া যেকোনো দেশই স্থবিরতা, প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় এবং ক্রমবর্ধমান জন-অসন্তোষের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
সর্বসম্মত ন্যূনতম সংস্কার কর্মসূচিঅন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচন এবং বিচারব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে একাধিক কমিশন গঠন করেছে। এই সংস্কার পরিকল্পনা বিষয়ে দ্রুত সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার। ‘প্রথমে সংস্কার, পরে নির্বাচন’, এই নীতি সংকটকে আরও গভীর করবে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে সর্বসম্মত ন্যূনতম সংস্কার কর্মসূচি এখন অপরিহার্য।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত কমিশনগুলো তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করেছে। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করবে। মানুষের আশা সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাবে। তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ন্যূনতম সংস্কার কর্মসূচি সংলাপ আবর্তিত হতে পারে। ক.
এযাবৎ বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল স্বেচ্ছায় আরেকটি দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এই প্রবণতা বদলাতে হবে। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থা জনগণকে সত্যিকারের বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়নি। জনগণ ভয় ও হুমকি থেকে মুক্ত থেকে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে, এমন একটি নিরপেক্ষ ও নিরাপদ নির্বাচন সবার দাবি।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন ছাড়া বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমান সংকট দেখিয়েছে, শুধু শাসকের পরিবর্তনে সমস্যার সমাধান হয় না। কার্যকর রাজনৈতিক সংস্কৃতিই সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করে। নতুন সরকার কিছু সময় পর আবার স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে না যায়, এর জন্য নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারপ্রধানের ক্ষমতার আমূল সংস্কার জরুরি। একইভাবে রাষ্ট্রের তিন বিভাগ তথা সংসদ, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য আবশ্যিক। এদের গঠনগত কাঠামোয় পরিবর্তনও প্রয়োজনীয়।
এখন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। সেই জায়গায় স্থানীয় সরকারকেই কেন্দ্রে আনতে হবে। দলীয় রাজনীতির সংস্কার তথা রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিত না হলে ক্ষমতার দখলদারি থামানো যাবে না। প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির জন্য কঠোর নজরদারি ব্যবস্থার দরকার; অর্থাৎ সংলাপে প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামো—কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন রোধ এবং জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি—বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি হওয়া দরকার।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান স্পষ্ট করে জানান দিয়েছে যে রাষ্ট্রকে অবশ্যই গুটিকয় সুবিধাভোগীর পরিবর্তে অধিকাংশ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। জনগণ স্পষ্টতই প্রতিষ্ঠানগুলোর অবমূল্যায়ন এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
আগের সম্পদ-সংযোগনির্ভর সিন্ডিকেটগুলো রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে। ধনী ও রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যে আঁতাত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে। নাগরিক ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা ও সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীতন্ত্রের দৌরাত্ম্য থাকলে দেশ কোনো বহিরাগত চাপ মোকাবিলা করতে পারে না।
নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সামাজিক চুক্তি উপস্থাপনঅবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনই স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, আত্মবিশ্বাস তৈরি এবং প্রকৃত সংস্কার কার্যকর করার একমাত্র পথ। নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা রাজনৈতিক পছন্দের বিষয় নয়, এটি আবশ্যক অর্থনৈতিক গতিশীলতার জন্য।
সংলাপে সমঝোতার মাধ্যমে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের আগে জনগণের সামনে একটি নতুন সামাজিক চুক্তির স্পষ্ট বিস্তারিত রূপকল্প উপস্থাপন করাকে আবশ্যিক করতে হবে। ভোটাররা প্রস্তাবের বিভিন্ন অংশের বিচার-বিশ্লেষণ করে তাঁদের পছন্দসই দল ও প্রার্থী নির্বাচন করবেন। ইতিহাস সাক্ষী, প্রতিটি গণজাগরণই রাষ্ট্রের সংস্কারের নতুন যুগ সূচিত করে। অলিগার্কিক পৃষ্ঠপোষকতামূলক শাসন থেকে জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকল্প নেই।
শক্তিশালী, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকতামূলক নেটওয়ার্ক বিলোপ হতে পারে। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিই নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারে। সংস্কার কমিশনগুলোর অনেক প্রস্তাবই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব সামাজিক চুক্তিতে নিতে পারে। জনগণের সমর্থনপুষ্ট নির্বাচিত সরকারই বড় পরিসরে অধিকার, স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির নিশ্চয়তাদানকারী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের পথে
বাংলাদেশ এখন এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে হাজির হয়েছে। অর্থনৈতিক স্থবিরতা রাজনৈতিক সংকট থেকে বিচ্ছিন্নভাবে সমাধান করা যাবে না। গণতান্ত্রিক বৈধতা ছাড়া কোনো সরকারই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা স্থাপন বা প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে পারে না। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন ছাড়া বাংলাদেশ কোনোভাবেই টেকসই উন্নয়নের পথে এগোতে পারবে না।
বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া স্পষ্ট। আর তা হলো একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহির নাগরিক রাষ্ট্র। আর তা বাস্তবে রূপ দিতে হলে কেবল রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সামাজিক আন্দোলন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা তথা জনগণের মতামত ও তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে হবে। সুশাসনের জন্য সামাজিক আন্দোলনও জরুরি। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যেন তারা কেবল দলীয় পরিচয়ে নয়; বরং সুশাসন ও ন্যায্যতা স্থাপনকারীর পক্ষে নির্বাচনে সিদ্ধান্ত দেন। এখনই সময়, পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়ার।
● ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক শ ন শ চ ত কর র জন ত ক স জনগণ র ম জনগণ র স ক র যকর ক ষমত র ত সরক র সরক র র ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
মডেল মেঘনার পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী সমির রিমান্ডে
মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমের পূর্বপরিচিত ব্যবসায়ী মো. দেওয়ান সমিরকে চাঁদাবাজির মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। সানজানা ম্যানপাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সমির। গত বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিতর্কিত ধারায় প্রতিরোধ আটকাদেশে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি কাশিমপুর-২ নম্বর কারাগারে আছেন। বুধবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছেড়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। আটকের সময় রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মেঘনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্য বিদায় নেওয়া সৌদি রাষ্ট্রদূতের অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মেঘনাকে আটক করেছে পুলিশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ আসার পর এ ব্যাপারে পুলিশ পদক্ষেপ নেয়। এর পর রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার যোগাযোগ থাকার বিষয়টি জানতে পারেন গোয়েন্দারা। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে মেঘনার পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটি ব্যর্থ হলে তাঁকে আটক করা হয়। এদিকে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, নারীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে আসছেন আসামি দেওয়ান সমির। তাঁর বিরুদ্ধে সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেওয়ান সমিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত দেওয়ান সমিরকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়, আসামি গত জানুয়ারি থেকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের কাছ থেকে টাকা আদায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন হয়।
কাশিমপুর-২ কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. আল মামুন সমকালকে বলেন, প্রতিরোধমূলক আটকাদেশের বন্দিদের বিশেষ কক্ষে রাখা হয়। অন্যান্য বন্দির মতো তারা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় গোয়েন্দারা থাকেন।
নিন্দা-প্রতিবাদ
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক মেঘনা আলমের মুক্তিসহ এই আইন বিলোপের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। শনিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। কমিটির পক্ষে এই বিবৃতি পাঠান সংগঠনের সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বিবৃতিতে মেঘনা আলমের আটকের ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের স্বৈরাচারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন। অথচ এই আইন ব্যবহার করেই সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের অন্যায় আচরণ ও প্রতারণা ঢাকতে একজন নারীকে বাড়িতে হামলা করে তুলে নিয়ে একে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু গুম ও স্বেচ্ছাচারী আটকের ভিত্তি তৈরি করে নাগরিকের মানবাধিকারকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার পুনরায় ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের আনা ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ অভিযোগকে বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অবিলম্বে মেঘনা আলমের মুক্তি এবং এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারী পক্ষ। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো নারীপক্ষের আন্দোলন সম্পাদক সাফিয়া আজীম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দ্রুত এই কালো আইন বাতিল, মেঘনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। যে বা যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মেঘনা আলমের ব্যক্তিগত বিষয়কে রাষ্ট্রীয় ইস্যু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত বাহিনী কখনোই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কূটনৈতিক তোষণের যন্ত্র হতে পারে না। বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে।