ঢাকার ধামরাই উপজেলায় আলাদীনস পার্কের কর্মীদের সঙ্গে ঢাকার মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে কলেজের শিক্ষক আবদুল হাই বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন আলাদীনস পার্কের মালিকের ছেলে রিফাত মাহমুদ (৩৫), পার্কের ব্যবস্থাপক রনি (৪৮), মালিক আলাউদ্দিন (৫৭), পার্কের কর্মী আবুল কালাম আজাদ (৩৫)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার বাদী আবদুল হাই আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলাদীনস পার্কের লোকজন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তাঁরা কাঠের লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তাঁরা ধামরাই ও সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহত শিক্ষার্থী জাকারিয়া সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেলে এখনো ভর্তি। আরেক শিক্ষার্থী রিফাতকে আজ এনাম মেডিকেল থেকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে।

গতকাল বিকেলে ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সিতী পাল্লী এলাকায় আলাদীনস পার্কে কয়েক শিক্ষার্থীর মুঠোফোন হারানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে ওই সংঘর্ষ হয়। গতকাল দুপুরে কয়েকজন শিক্ষার্থী পার্কের সুইমিংপুলে গোসল করেন। এ সময় তাঁরা পার্ক কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট লকারে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ রাখেন। গোসল শেষে কয়েকজন দেখেন লকারে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ নেই। পরে পার্কের কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তখন শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সমাধান হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী মুঠোফোন ও মানিব্যাগ হারানোর ক্ষোভে কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া পার্কের মূল ফটক দিয়ে বের হওয়ার সময় কয়েকটি জানালার কাচ ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা পার্কের সামনে কলেজের ভাড়া করা বাসে উঠার সময় পার্কের লোকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়।

এ বিষয়ে আলাদীনস পার্কের সুপারভাইজার শরীফুল ইসলাম বলেন, পিকনিক শেষ করে বিকেলের দিকে সাত থেকে আটজন শিক্ষার্থী পার্কের বিভিন্ন স্থানের কাচ ভাঙচুর করেন। পরে প্রধান ফটক দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানেও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পার্কের কর্মচারীরা ফটক আটকে দেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের থামাতে যান। তখন তাঁদের মারধর করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ৮ থেকে ১০ জন আহত হন। তাঁরা ধামরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা পার্কের বাইরে বেশ কিছু অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হয়তো স্থানীয় লোকজন বাস ভাঙচুর করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ক র কর ম স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

‘তোর দুই নাতির মাথার দাম তিন লাখ টাকা, পুলিশ জানলে চলবে গুলি’

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে উড়ো চিঠিতে রেজাউল ইসলাম (৫৭) নামের এক গামছা বিক্রির হকারের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার মধ্যে টাকা না দিলে বা পুলিশকে জানালে হকারসহ তার দুই নাতিকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে গেল দুই মাসে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে উড়ো চিঠিতে তিনবার চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী রেজাউল উপজেলার সদকী ইউনিয়নের বাটিকামারা এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে। তিনি ফুটপাতে গামছা বিক্রি করে সংসার চালান। এ ঘটনায় রেজাউল আজ দুপুরে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

লিখিত অভিযোগে রেজাউল উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন ফুটপাতে গামছা বিক্রি করি। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে অজ্ঞাত কে বা কারা আমার বাড়ির জানালা ভেঙে দেয়। জানালা ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে বাইরে এসে দেখি যে, অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে লেখা একটি চিঠি। চিঠিতে আমার কাছে তিন লাখ দাবি করা হয়েছে। রাত ১২টার মধ্যে টাকা না দিলে দুই নাতিকে হত্যা করা হবে। বিষয়টি পুলিশ অথবা কাউকে জানালে আমাকেও গুলি হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়া- রাজবাড়ি সড়ক থেকে ২০০ মিটার নিচে হকার রেজাউলের চার কক্ষ বিশিষ্ট টিনসেডের আধপাকা ঘর। সেখানে স্ত্রী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী, মেয়ে, ২ নাতিসহ সাতজনের বসবাস। ঘরের একটি কাঁচের জানালা ভাঙা। 

এ সময় রেজাউলের মেয়ে রিমা খাতুন বলেন, ‘কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। তবুও কে বা কারা চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। গত রাতসহ গেল দুই মাসে তিনবার এ ঘটনা ঘটেছে। এতে আমরা আতঙ্কিত।’

বুধবার রাতে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া চিঠিটি সমকালের হাতে এসেছে। চিঠিতে লেখা রয়েছে, ‘ভয় নাই, আজ মারবে নানে। চলে গেলাম। তোর দুই নাতি ছেলের মাথার দাম ধরা হয়েছে তিন লাখ টাকা। আগামীকাল রাত ১২টার মধ্যে তিন লাখ টাকা নিয়ে চলে আসবি। আর এটা আমার এলাকা। তাই পুলিশ বা অন্য কোনো ঝামেলা না করলে তোর ভালো হবে। আর যদি কিছু করিস তাহলে, রেজাউল তুই বাড়ির বাইরে আসলে আগে তোকে পাখির মতো গুলি করে মারবে, মনে রাখিস। আজ গুলি করলে মারতে পারতাম। কিন্তু মারিনি, একটা সুযোগ দিলাম। মনে রাখিস আগামীকাল রাত ১২টার মধ্যে টাকা নিয়ে চলে আসবি।’

ভুক্তভোগী রেজাউল বলেন, ‘কারা, কেন এমন করছে জানি না। পরিবার নিয়ে খুব ভয়ে আছি। বিচার চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। এর আগে ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম ‘

উড়ো চিঠিতে চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকির বিষয়ে লিখিত অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ