ধামরাইয়ে বিনোদনকেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা
Published: 13th, February 2025 GMT
ঢাকার ধামরাই উপজেলায় আলাদীনস পার্কের কর্মীদের সঙ্গে ঢাকার মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে কলেজের শিক্ষক আবদুল হাই বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলাটি করেন।
মামলার আসামিরা হলেন আলাদীনস পার্কের মালিকের ছেলে রিফাত মাহমুদ (৩৫), পার্কের ব্যবস্থাপক রনি (৪৮), মালিক আলাউদ্দিন (৫৭), পার্কের কর্মী আবুল কালাম আজাদ (৩৫)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার বাদী আবদুল হাই আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলাদীনস পার্কের লোকজন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তাঁরা কাঠের লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তাঁরা ধামরাই ও সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহত শিক্ষার্থী জাকারিয়া সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেলে এখনো ভর্তি। আরেক শিক্ষার্থী রিফাতকে আজ এনাম মেডিকেল থেকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে।
গতকাল বিকেলে ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সিতী পাল্লী এলাকায় আলাদীনস পার্কে কয়েক শিক্ষার্থীর মুঠোফোন হারানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে ওই সংঘর্ষ হয়। গতকাল দুপুরে কয়েকজন শিক্ষার্থী পার্কের সুইমিংপুলে গোসল করেন। এ সময় তাঁরা পার্ক কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট লকারে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ রাখেন। গোসল শেষে কয়েকজন দেখেন লকারে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ নেই। পরে পার্কের কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। তখন শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সমাধান হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী মুঠোফোন ও মানিব্যাগ হারানোর ক্ষোভে কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া পার্কের মূল ফটক দিয়ে বের হওয়ার সময় কয়েকটি জানালার কাচ ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা পার্কের সামনে কলেজের ভাড়া করা বাসে উঠার সময় পার্কের লোকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়।
এ বিষয়ে আলাদীনস পার্কের সুপারভাইজার শরীফুল ইসলাম বলেন, পিকনিক শেষ করে বিকেলের দিকে সাত থেকে আটজন শিক্ষার্থী পার্কের বিভিন্ন স্থানের কাচ ভাঙচুর করেন। পরে প্রধান ফটক দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানেও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পার্কের কর্মচারীরা ফটক আটকে দেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের থামাতে যান। তখন তাঁদের মারধর করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ৮ থেকে ১০ জন আহত হন। তাঁরা ধামরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা পার্কের বাইরে বেশ কিছু অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হয়তো স্থানীয় লোকজন বাস ভাঙচুর করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ক র কর ম স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
মেট্রোরেল কর্মীদের কর্মবিরতি, ভাড়া আদায় ব্যবস্থা অকার্যকর
এমআরটি পুলিশ সদস্য দ্বারা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন কর্মী মৌখিকভাবে ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছে মেট্রোরেল কর্মীরা। ফলে আজ সোমবার সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচলে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যাত্রীদের ভাড়া আদায় করার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে আছে।
মেট্রোরেলে ফার্মগেট স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে আটটার দিকে কারওয়ান বাজারে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী তাপসী রায়। তিনি বলেন, ফার্মগেটে ঢোকার সময় কার্ড পাঞ্চ করার পর তিনি যেতে পেরেছেন। তবে কারওয়ান বাজারে নেমে পাঞ্চ মেশিন তিনি অচল দেখেন। পাঞ্চ না করেই চলে আসতে পেরেছেন। এ সময় সেখানে থাকা কয়েকজন তাঁকে চলে যেতে বলেন। পরে জরিমানা করা হবে কি না জানতে চাইলে তাঁরা বলেন আজকে কিছু করা হবে না। টিকিটের কাউন্টারগুলোও বন্ধ দেখেছেন তিনি। ফলে যাদের এমআরটি ও র্যাপিড পাস আছে শুধু তারাই যাতায়াত করতে পারছেন। কেউ টিকিট কাটতে পারছেন না।
ডিএমটিসিএলের জনসংযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কর্মীদের ধর্মঘটের কারণে মেট্রোরেল চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। চলাচল স্বাভাবিক আছে । তবে কোথাও কোথাও কোথাও রাজস্ব আয়ে সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ স্টেশনে স্টেশনে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সুরাহা হয়ে যাবে।
রাতে 'ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ‘সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ' ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনা তুলে ধরে ছয়টি দাবি জানানো হয়।
মেট্রোরেল কর্মীদের দাবিগুলো হচ্ছে, আগামী এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ওই পুলিশ সদস্যকে (এসআই মাসুদ) স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে ও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে (কনস্টেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) শাস্তি দিতে হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। মেট্রোরেল, মেট্রো স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে হবে, এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্য সব কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অফিশিয়াল পরিচয়পত্র ও অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আহত কর্মীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে বলা হয়, দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মেট্রোরেলের সব কর্মী কর্মবিরতি পালন করব এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং মেট্রো স্টেশনে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, ‘আনুমানিক বিকেল সোয়া ৫টায় দুজন নারী কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ব্যতীত সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। তবে, সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান।'
'পরবর্তীতে ঠিক একইভাবে দুজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান, উক্ত বিষয়ের কারণ তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএ এর সঙ্গে ইএফও'তে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএ এর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে এবং কর্মরত আরেকজন টিএমও এর শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীগণ বিষয়টি অনুধাবন করে উক্ত এমআরটি পুলিশ এর হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে পুলিশের কাছ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।’