পুঁজিবাজারে পেপার ও প্রিন্টিং খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক শেয়ার হস্তান্তর করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, কোম্পানির মনোনীত পরিচালক মো.

মোবারক হোসেন তার স্ত্রী জাহানারা মোবারকের কাছে ১৮ হাজার ৭০১টি শেয়ার শেয়ার হস্তান্তর করবেন। জাহানারা মোবারক কোম্পানির একজন সাধারণ শেয়ারহোল্ডার।

আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং সিস্টেমসের বাইরে শেয়ারগুলো উপহার হিসেবে হস্তান্তর করবেন এই মনোনীত পরিচালক।

ঢাকা/এনটি/ইভা

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা’ মানে ট্রাম্পকে মানো

বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এখনো একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তবে চার মাস আগের তুলনায় দেশটির গণতন্ত্র অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেশের সংবিধান অপরিবর্তিত থাকলেও প্রেসিডেন্টের নিয়মকানুন উপেক্ষা এবং সেগুলো কার্যকর করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা এই অবস্থা তৈরি করেছে। 

প্রশ্ন হলো, কোনটা আসল যুক্তরাষ্ট্র—যেটি আইনকে সম্মান করে, নাকি যেটি আইনকে উপহাস করে? যদি দ্বিতীয়টাই বাস্তব হয়, তাহলে ব্রিটেন কি সেই যুক্তরাষ্ট্রকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে? এ প্রশ্ন ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ইউরোপ-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির ভেতরে লুকিয়ে আছে।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মতে, এই চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘যুক্তরাজ্যকে সত্যি ভালোবাসেন’ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে শুধু বাণিজ্য নয়, গভীর সাংস্কৃতিক মিলও রয়েছে। এটি সেই ভ্যান্সের বক্তব্যের বিপরীত, যিনি এ বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপকে খ্রিষ্টবিরোধী ও সেন্সরশিপপ্রবণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।

মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ইউরোপের সবচেয়ে বড় হুমকি আসছে ‘ভেতর থেকে’ এবং তারা সেই মূল্যবোধ থেকে সরে যাচ্ছে, যা একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলে ভ্যান্স আবার একই অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে। এটি যা আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানি ও নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলছে।

ভ্যান্স মূলত ‘অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট’-এর কথা বলছিলেন, যা সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ক্ষতিকর কনটেন্ট সরানোর দায়িত্ব দেয়। এই আইন ২০২২-২৩ সালে তৈরি হয় এবং এর পরিধি বারবার পরিবর্তিত হয়েছে।

বর্তমান আইনে সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ, বর্ণবিদ্বেষ, আত্মহত্যার প্ররোচনা, শিশু নির্যাতনের ছবি ইত্যাদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করবে যুক্তরাজ্যের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম। এখানে আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা বা এমনকি ফৌজদারি মামলা হতে পারে। বাস্তবে এই আইন কেমন কার্যকর হবে, তা এখন প্রশ্নের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে হলে এই আইনকে অনেকটা শিথিল করতে হতে পারে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অফকমের সঙ্গে দেখা করে অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে, তারা বিশ্বজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চায়।

স্টারমার সংসদীয় কমিটিতে স্বীকার করেছেন, প্রযুক্তি কীভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে, তা আলোচনার বিষয়। এমনকি কর ফাঁকি ঠেকাতে ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প একটি সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন। তাতে বলা হয়, বিদেশে মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর কোনো চাপ দিলে তা সহ্য করা হবে না। তারা যেকোনো নিয়ন্ত্রণকে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ’ বলে দেখাচ্ছে। এই নীতিকে ‘সর্বজনীন অধিকার রক্ষার’ ভাষায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। এটি একধরনের সাম্রাজ্যবাদী চাপের মতো। অন্য খাতে যেমন কৃষিপণ্যে যুক্তরাষ্ট্র এমন দাবি তুলতে পারে না, তারা এখনো বলেনি যে ক্লোরিন ধোয়া মুরগির মাংসকে ইউরোপে নিষিদ্ধ করা মতপ্রকাশের সীমালঙ্ঘন।

এটা ঠিক, অনলাইন কনটেন্ট কোনটা সহনীয় আর কোনটা নয়, তা নিয়ে যুক্তিসংগত মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে সবাই মানে, কিছু সীমা অবশ্যই আছে, যেমন শিশু যৌন নির্যাতনের ছবি কখনোই ‘মতপ্রকাশ’ নয়।

অনলাইন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেটি ঠিক করা অনেক জটিল বিষয়। তত্ত্বে যেমন কঠিন, বাস্তবে তা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, আমরা যেসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করি, সেগুলো আসলে ব্যক্তিগত মালিকানার লাভের জন্য চালানো ব্যবসা—সরকারি বা জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান নয়। এমন অবস্থায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব এমন এক মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া যুক্তরাজ্যের উচিত নয়, যাদের সঙ্গে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানির ঘনিষ্ঠ এবং অনেক সময় দুর্নীতির সম্পর্ক রয়েছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে সিলিকন ভ্যালির ধনকুবেরদের সম্পর্ক যে শুধু ব্যবসায়িক, তা নয়। এর মধ্যে আদর্শগত বিষয়ও জড়িত। এই ধনীরা নিজেদের ক্ষমতা ও অর্থ ব্যবহার করে ট্রাম্পকে জেতাতে সাহায্য করেছেন, এখন তাঁরা এর প্রতিদান চাইছেন।

ট্রাম্পের নীতির মধ্যে তেমন কোনো সুসংগত যুক্তি নেই। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ মানে তাঁর মতে হলো এমন বক্তব্য, যা প্রেসিডেন্টের নিজের পক্ষপাতকে আরও জোরালো করে তোলে। আর কেউ যদি তাঁর মিথ্যা কথা সত্য তথ্য দিয়ে সংশোধন করে, তাহলে সেটা ‘সেন্সরশিপ’ বলে বিবেচিত হয়।

এই বিভ্রান্তিকর চিন্তাভাবনা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নেই, যুক্তরাজ্যেও দেখা যাচ্ছে। দেশটির কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনোকও ঠিক এমনই ভাবেন। তিনি জেডি ভ্যান্সকে নিজের বন্ধু মনে করেন। মিউনিখে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স যে বক্তৃতা দেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বাডেনোক বলেন, ‘তিনি আসলে বেশ কিছু সত্য কথা বলেছেন।’ বাডেনোক নিজেও প্রায়ই বলেন, ব্রিটেনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে সরকারি দপ্তর হোয়াইটহল—এখন তথাকথিত ‘উয়োক’ (অর্থাৎ অতিরিক্ত প্রগতিশীল) মতাদর্শে আক্রান্ত, যা মানুষকে দমন করে।

যুক্তরাজ্যের উচিত নয় এমন একটি দেশের কাছ থেকে গণতন্ত্র শেখা, যারা সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখিয়ে ও মামলা দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের কথা মানতে বাধ্য করে, একদিকে স্বৈরাচারী শাসকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখে আর অন্যদিকে গণতান্ত্রিক বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এমনকি তারা নির্দোষ মানুষদের ধরে নিয়ে যায়, জেলে রাখে, আর আদালত তাদের মুক্তি দিতে বললেও সে আদেশ মানে না। 

এসবই সেই ‘মূল্যবোধ’, যেগুলো নিয়ে জেডি ভ্যান্স আফসোস করে বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র দূরে সরে যাচ্ছে। এই হচ্ছে সেই ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার’ আদর্শ, যা ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে মেনে নিতে হবে, রক্ষা করতে হবে। এই কি সেই ‘বাস্তব সাংস্কৃতিক মিল’, যার কারণে ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি পাওয়ার যোগ্য হবে? আমরা আশা করব, তা যেন না হয়।

রাফায়েল বের গার্ডিয়ান পত্রিকার কলাম লেখক

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ