মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রীর ব্যাংককগামী ছেলেকে ঘিরে মাঝ আকাশে নাটকীয়তা
Published: 13th, February 2025 GMT
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী তানাজি সাওয়ান্তের ছেলে ঋষিরাজ সাওয়ান্ত ও তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে পুনে থেকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছিল একটি চার্টার্ড ফ্লাইট। দ্রুতই উড়োজাহাজটি ঘুরিয়ে পুনেতে ফিরতে মাঝ আকাশে বার্তা পান পাইলটরা। শুরুতে তাঁরা ভেবেছিলেন, বার্তাটি ভুয়া। তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরে নিশ্চিত হন, বার্তা সত্য। এতে উড়োজাহাজটি পুনেতে ফিরিয়ে আনেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট বিমান পরিবহন সংস্থার একজন নির্বাহী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ঘটনাটি গত সোমবারের। একটি বেসরকারি উড়োজাহাজ পরিবহন প্রতিষ্ঠানের চার্টার্ড ফ্লাইটটি ৩২ বছর বয়সী ঋষিরাজ সাওয়ান্ত ও তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে এদিন রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে পুনে বিমানবন্দরে ফেরত আসে।
প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী বলছেন, বার্তাটি যাচাই–বাছাই করার পরই উড়োজাহাজটিকে পুনেতে ফিরতে বলা হয়েছে।
ঋষিরাজ সাওয়ান্তকে অপহরণ করা হয়েছে বলে একটি মামলা করার পর তাঁদের নাটকীয়ভাবে মাঝ আকাশ থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সোমবার বিকেল চারটার দিকে পুনে পুলিশের কাছে অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি ফোনকল আসে। বলা হয়, ঋষিরাজকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা নিয়ে গেছেন। খবরটি শুনে ঋষিরাজের বাবা তানাজি পুলিশ স্টেশনে ছুটে যান এবং সহযোগিতা চান। পুলিশ তখন মামলা করে।
ঋষিরাজ ও তাঁর বন্ধুরা দাবি করেছেন, তাঁরা গোপনে ব্যবসায়িক কাজে থাইল্যান্ড যাচ্ছিলেন। তবে শিবসেনা নেতা তানাজি ও পরিবারের সদস্যরা তাঁদের এ ভ্রমণের তথ্য জানতেন না।
উড়োজাহাজ সংস্থাটির নির্বাহী বলেছেন, মাঝ আকাশ থেকে উড়োজাহাজটিকে ফিরিয়ে আনায় বেসামরিক উড়োজাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডিজিসিএ তাঁর কোম্পানির প্রশংসা করেছে। নির্বাহীর ধারণা, কোনো যাত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হওয়ার পর মাঝ আকাশ থেকে উড়োজাহাজ ফিরিয়ে আনার ঘটনা এটাই প্রথম।
সাধারণত চিকিৎসা কিংবা কারিগরিসংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজের পথ ঘুরিয়ে নেওয়া হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
ফ্লাইটটিকে যখন পুনেতে ফিরতে বলা হয়, তখন এটি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ারের (শ্রী বিজয়াপুরম) ওপর দিয়ে উড়ছিল। ঋষিরাজ সাওয়ান্ত ও তাঁর বন্ধুদের উড়োজাহাজ ঘুরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সে সময় কিছু জানানো হয়নি। এর ব্যাখ্যায় উড়োজাহাজ সংস্থার নির্বাহী বলেন, ঋষিরাজ ও তাঁর বন্ধুরা বিষয়টি জানতে পারলে পাইলটদের সঙ্গে হট্টগোল শুরু করতে পারেন—এমন আশঙ্কা ছিল।
উড়োজাহাজ ঘুরিয়ে দেওয়ার সময় যাত্রীদের সামনে থাকা স্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ জন্য উড়োজাহাজটি যে আবার পুনেতে ফিরছে, তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। খাবার খেয়ে তাঁরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
নির্বাহী আরও বলেন, পুনে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি অবতরণ করার পর ওই তিন যাত্রী অবাক হন এবং রেগে গিয়ে পাইলটদের বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। দায়িত্বে থাকা পাইলট তাঁদের বলেন, তাঁরা শুধু নির্দেশনা পালন করেছেন।
উড়োজাহাজটি অবতরণের পরপরই ভারতের কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী সিআইএসএফের সদস্যরা এর ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং ওই তিনজনকে নামিয়ে আনেন।
ঋষিরাজ সাওয়ান্ত পরে পুলিশকে বলেছেন, পরিবারের সদস্যরা খেপে যেতে পারেন—এমন ভয়ে তিনি তাঁদের না জানিয়েই চার্টার্ড উড়োজাহাজে করে থাইল্যান্ডে যাচ্ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে বিএনপি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে বিএনপি। দলটি মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে সরকার ততটা আন্তরিক নয়। তারা নির্বাচনকে তুলনামূলক কম গুরুত্ব দিচ্ছে।
সরকারের ওপর চাপ তৈরির অংশ হিসেবে সমমনাসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে বিএনপি। দুই সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকগুলো শেষ করতে চায় তারা। তারপর সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বিষয়ে আবার নিজেদের অবস্থান জানান দেবে দলটি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবং দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার থেকে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করছে বিএনপি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকেল ৩টায় ১২ দলীয় জোটের বৈঠকের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক এ আলোচনা শুরু হবে। সন্ধ্যায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দলের সঙ্গেও বসবে বিএনপি। সবার মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে দলটি।
বিএনপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত বুধবার নির্বাচনের সময় ও পথনকশা জানতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। সরকারের দিক থেকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় না পেয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি। পরদিন বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসে বিএনপি। সে বৈঠকের যে প্রতিক্রিয়া দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাতেও আছে অসন্তোষের ছাপ। এর পর রাতেই স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনায় বসে দলটি। সেখানে শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরেন। এর পর নির্বাচন বিষয়ে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি বিএনপির কাছে প্রতীয়মান, জমিরউদ্দিন সরকার তা তুলে ধরেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতাদের কাছে মনে হয়েছে, সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী জুনের কথা বললেও নির্বাচন নিয়ে আসলে তারা অনেকটা উদাসীন। উপদেষ্টাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বিএনপি নেতাদের কারও কারও মনে হয়েছে, নির্বাচন ২০২৬ সালের জুন পেরিয়ে ডিসেম্বরে চলে গেলেও সরকারের কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচনকে সরকার এখনও কার্যত আমলে নিচ্ছে না।
দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে অন্য দলগুলোর অবস্থানও পর্যালোচনা করেন বিএনপি নেতারা। তারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং আগে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর অবস্থান আস্তে আস্তে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তাদের অনেকেই কাছাকাছি অবস্থানে আসছে। আলোচনার মাধ্যমে এদের সবাইকে এক জায়গায় আনার প্রচেষ্টাকে জোরালো করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী রোজার আগে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতারা জামায়াতের এই অবস্থানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের ফসল। তাই সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি সরাসরি কোনো কর্মসূচি কিংবা বড় আন্দোলনে যেতে চাচ্ছে না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে তারা। বিএনপি চায় না এই সরকার ব্যর্থ হোক।
বৈঠকের সূত্র বলছে, নির্বাচন ইস্যুতে সরকার সুনির্দিষ্ট কী পদক্ষেপ নেয়, তা পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি। দলটির শঙ্কা, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও চাওয়া উপেক্ষা করে সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে দেশের চলমান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে ও অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। তাই চাপ তৈরি করে সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের গুরুত্ব বোঝাতে চায় বিএনপি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছিল। শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেন। পরে সেখান থেকে সরে গিয়ে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেন। বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন বিলম্বিত করতে নানা পক্ষ কাজ করছে। নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দু-একজন উপদেষ্টা এবং দু-একটি দলের নানা রকম বক্তব্যে নির্বাচন প্রলম্বিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয় বিএনপির মধ্যে।
বিএনপি মনে করে, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এর বেশি হলে তা হবে সময়ক্ষেপণ। দলটি মনে করছে, গুম, খুন ও গণহত্যায় জড়িতদের বিচার এবং সংস্কার কার্যক্রমও সেভাবে এগোচ্ছে না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেগুলো গুছিয়ে আনছে না সরকার।
বৈঠকে সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে একাধিক নেতা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে গতিতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করছে, তাতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।
এর পর সব দলের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে আরও সময় লাগবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তারা যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি করছেন এবং এটি দেওয়া যে জরুরি, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন বলে বৈঠকে তাদের মনে হয়নি। তাদের মনে হচ্ছে, সরকারের ভেতরের কোনো একটি পক্ষ নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। তাই বিএনপি যদি সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত না রাখে তাহলে নির্বাচন জুন নয়, আগামী বছরের ডিসেম্বরেও চলে যেতে পারে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সমকালকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও মানুষের অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা সেই অধিকার ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের কথা বলছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা সংকটে পড়তে পারে বলে আমাদের আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারেনি। এ অবস্থায় আমরা সমমনাসহ সব দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনের এগোতে চাই।’
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শব্দ : ৯২০