ডিস্ক প্রলাপস কেন হয়, সতর্কতা ও চিকিৎসা কী
Published: 13th, February 2025 GMT
মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মাঝখানের ফাঁকা স্থানটিতে নরম যে অংশ থাকে তার নাম ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক। এ ডিস্ক যখন জায়গা থেকে সরে যায়, তখন তাকে ডিস্ক প্রলাপস বলে। এ অবস্থাকে অনেকেই বলেন যে মেরুদণ্ডের হাড় সরে গেছে। আসলে ডিসপ্লেসমেন্ট হয় ডিস্কের, হাড়ের নয়।
সাধারণত ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইনে ডিস্ক প্রলাপস বেশি হয়। নারী-পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীরা এ রোগে বেশি ভোগেন।
ডিস্ক প্রলাপস কেন হয়
মেরুদণ্ডের সঙ্গে যে স্পাইনাল লিগামেন্ট ও মাংসপেশি লাগানো থাকে, এগুলো
দুর্বল হয়ে গেলে ডিস্ক সরে যেতে পারে।
অসচেতনভাবে সামনের দিকে ঝুঁকে ভারী কিছু ওঠাতে গেলে হঠাৎ এমন হতে পারে।
আঘাত পেলে বা উঁচু স্থান থেকে পড়ে গেলে।
দীর্ঘক্ষণ নিচে বসে কাজ করলে, এমনকি সামনের দিকে ঝুঁকে জুতার ফিতা বাঁধতে গেলে অথবা বেসিনে মুখ ধুতে গেলেও অসতর্কতায় ডিস্ক প্রলাপস হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন
ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইনে প্রলাপস হলে ঘাড়ে ব্যথা, ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে ছড়ায় এবং হাতে তীব্র ব্যথা হয়। হাত ঝিনঝিন করে বা অবশ অবশ মনে হয়। হাতের শক্তি কমে যায় বা হাত দুর্বল হয়ে আসে। তীব্রতা বেশি হলে অনেক ক্ষেত্রে হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে আসে।
কোমর বা লাম্বার স্পাইনে হলে কোমরে ব্যথা, ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়ায়। পা ভারী বা অধিক ওজন মনে হয়। পায়ে জ্বালাপোড়া, পায়ের শক্তি কম অনুভব করা, অনেক ক্ষেত্রে পায়ে মাংসপেশি শুকিয়ে যায়। তীব্রতা বেশি হলে অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মলমূত্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়।
কীভাবে শনাক্ত করা যায়
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরীক্ষার পাশাপাশি আক্রান্ত স্পাইনের এমআরআইয়ের মাধ্যমে কোন লেভেলে কতটুকু ডিস্ক প্রলাপস, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করেন।
চিকিৎসা
প্রয়োজনীয় ব্যথা উপশমকারী ওষুধের পাশাপাশি সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে, অর্থাৎ ব্যথা তীব্র থাকার সময় হাঁটাচলা করা যাবে না। এরপর সঠিক ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী দুই থেকে চার সপ্তাহ ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি থেকে দিনে দু-তিনবার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে ও চিকিৎসক নির্দেশিত থেরাপিউটিক ব্যায়াম করলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন।
জীবনযাপনে সতর্কতা
সামনে ঝুঁকে ভারী কাজ করবেন না।
শোবার জন্য মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন।
ভারী ওজন তোলা নিষেধ।
মাঝারি শক্ত বিছানায় শোবেন।
ভ্রমণে সারভাইক্যাল কলার অথবা লাম্বার করসেট ব্যবহার করবেন।
চিকিৎসকের নির্দেশিত ব্যায়াম করবেন।
এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা
আরও পড়ুনপুরুষের সমস্যা ভেরিকোসিল কেন হয়, চিকিৎসা কী?০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শাহবাগে শিক্ষক নিয়োগপ্রত্যাশীদের আন্দোলন থেকে ১৪ জন আটক
শাহবাগ মোড়ে সরকারি প্রাথমিকের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আটকের বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজন পুরুষ ও সাতজন নারী রয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৬ হাজার ৫৩১ জনের বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা অষ্টম দিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়কের ওপর অবস্থান নেন সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। এতে সায়েন্সল্যাব হয়ে মৎস্যভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর দেড়টার দিকে প্রায় শতাধিক শিক্ষক দ্রুত নিয়োগের দাবিতে রাস্তায় নেমে পড়েন। একই সময় পাশে অবস্থান করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। দুপুর আড়াইটার পর পুলিশ তাদের শাহবাগ মোড থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় জলকামান থেকে তাদের ওপর পানি ছিটানো হয়। এক পর্যায়ে শাহবাগ মোড থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন তারা। বেলা পৌনে তিনটার দিকে তারা পাশেই জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন।
এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় অনেককেই কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়।
রাশেদা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘এ সরকার আমাদের চাকরি দিয়েও কেড়ে নিয়েছে। তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি। চাকরি ফিরিয়ে না দিলে সন্তানদের নিয়েই রাস্তায় শহীদ হয়ে যাব।’
হাইকোর্টের রায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া তৃতীয় ধাপের প্রার্থীদের রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আন্দোলন করছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ ছয় হাজার ৫৩১ জন প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর আগে ১৯ নভেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগপত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচাপতি মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। কোটা পদ্ধিত অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়ায় আদালত এ আদেশ দেন।
৩১ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ৫৩১ জন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
গত ২৮ মে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) মৌখিক পরীক্ষাসহ নিয়োগপ্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণসংক্রান্ত হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন, আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মৌখিক পরীক্ষা নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে এই নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে আসা অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।