টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলায় এক শিশুকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে।

৯ বছর বয়সী ওই শিশুর নাম রানা মিয়া। সে উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামের আনছার আলীর ছেলে।

শিশু রানাকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রথম আলোর কাছে আছে। এতে দেখা যায়, রানার দুই হাত পেছনের দিকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। পিঠ ও দুই হাতের মাঝখানে খুঁটি। কিছু নারী-পুরুষ শিশুটিকে ঘিরে আছে, তাকে নানা প্রশ্ন করছে। এ সময় শিশুটিকে বলতে শোনা যায়, ‘হাত খুলে দেন, ঝিনঝি (ব্যথা) লাগছে।’

এলাকাবাসী ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিন দিন আগে দশলিয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি থেকে মুঠোফোন ও কিছু টাকা হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শিশু রানাকে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তার বাড়ি থেকে ধরে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক স্থানীয় বাজারে একটি মুদিদোকানের সামনে রড-সিমেন্টের তৈরি খুঁটির সঙ্গে তার দুই হাত বেঁধে রাখা হয়। এ সময় শিশুটিকে মারধর করেন মোস্তাফিজ ও তাঁর লোকজন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই শিশুর পরিবারের অভিযোগ, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে একটি মহল।
মঙ্গলবার রাতেই রানাকে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিশুটি হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ৮ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুরঞ্জন কুমার বলেন, শিশুটি বাঁ হাত ও বাঁ পায়ে আঘাত পেয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রানার মা রেখা বেগম অভিযোগ করেন, টাকা চুরির অভিযোগ এনে মোস্তাফিজুর তাঁর ছেলেকে বাড়ি থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যান। এরপর শিশুটিকে বিনা অপরাধে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালান। একপর্যায়ে তার হাতে সুচ ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় রানাকে ছাড়িয়ে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন তাঁরা। ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে রানার মা এই ঘটনার বিচার দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে মীমাংসার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রথমে তিনি কল ধরেননি। পরে তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

গতকাল রাতে সাদুল্যাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজ উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘শিশুটিকে খুঁটিতে বেঁধে রাখার কথা শুনেছি। আমি সশরীর হাসপাতালে তাকে দেখতে গিয়েছি। শিশুটির অভিভাবককে মামলা দেওয়ার কথা বলেছি। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত থানায় অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানাল পুলিশ, বলল নানা চ্যালেঞ্জের কথা

প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। পুলিশ বাহিনীকে সেবামুখী করতে এবং পুরোপুরি সঠিক ধারায় ফেরাতে এ কমিশন প্রয়োজন বলে জানান তাঁরা। পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বাধীন অথবা স্বশাসিত কমিশন এই সময়ে গঠন করতে না পারলে পুলিশ তার পুরোনো নেতিবাচক চরিত্রে ফিরে যাবে—এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশ বাহিনী পরিচালনায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, দাবি ও আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া ১১ জন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই বৈঠকে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), রেঞ্জ ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক), মহানগর পুলিশ কমিশনার, সব ইউনিটের প্রধান, সব অতিরিক্ত আইজিপি অংশ নেন। ১২৭ জন কর্মকর্তার উপস্থিত থাকার কথা ছিল বৈঠকে। এমআরটি পুলিশের ডিআইজি ছাড়া বাকি সব কর্মকর্তাই সভায় ছিলেন। সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব ও রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) ফারজানা ইসলাম।

বৈঠকে আইজিপি বাহারুল আলম তাঁর বক্তব্যে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। চারজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আইজিপি বৈঠকে বলেছেন পুলিশ কমিশন ভারতে আছে, পাকিস্তানে আছে, শ্রীলঙ্কায় আছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকে বের হওয়ার জন্যই পুলিশ কমিশন দরকার। আইজিপি আরও বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনে ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে আসেনি। এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে পুলিশ কিছুই জানে না। অথচ ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা রক্ষায় এটি সবচেয়ে জরুরি।

সংস্কারের এখনই সময়

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখতে পুলিশকে সঠিক ধারায় ফেরানোর এখনই উপযুক্ত সময়। এ সময়ে যদি পুলিশের মৌলিক সংস্কার না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে পুলিশ আবার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের মতো ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, এখন ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ। এখনই যদি পুলিশ কমিশন গঠন করা না হয়, তাহলে কোনো দিনই হবে না। পুলিশ কমিশন সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দাবি। ডিআইজি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মানুষ সংস্কারের কথা বলছে। আর পুলিশ বাহিনী নিজেরাই নিজেদের সংস্কারের কথা তুলে ধরছে। কিন্তু পুলিশের সংস্কারের কথা কেউ সেভাবে শুনছে না।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়টি সুস্পষ্ট না আসায় বাহিনীটির সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। ঐকমত্য কমিশনে পুলিশ সংস্কারের প্রসঙ্গটি না রেখে, ‘প্রশাসনিক ব্যবস্থার’ সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগে এই ক্ষোভ বাড়ে। এসব বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে বিস্তারিত বলতে চেয়েছিলেন কর্মকর্তারা। কিন্তু বৈঠকে আটজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও আইজিপিসহ মাত্র তিনজন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান।

তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা। ঢাকা, ১৭ মার্চ

সম্পর্কিত নিবন্ধ