সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানের আওতায় দুর্ধর্ষ হাসিম সরদারসহ তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে শ্যামনগর থানা পুলিশ। পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলামের নির্দেশনায় ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুর রহমানের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করেন শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড (গুমানতলী) আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিম সরদারকে সোনারমোড় মাছের আড়ৎ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে, বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে অপর দুই আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল কুদ্দুস (৪৭) ও সাহাবুদ্দীন গাজী (৫৫)-কে যথাক্রমে উপজেলার পশ্চিম কৈখালী ও মুন্সিগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত হাসিম সরদার গুমানতলী গ্রামের মোস্তফা সরদারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে, পশ্চিম কৈখালী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.

রুহুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। তিনি মৃত কালাচাঁদ গাজীর ছেলে। এছাড়া, মুন্সিগঞ্জ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সাহাবুদ্দীন গাজী (৫৫), যিনি মৃত এন্তাজ আলী গাজীর ছেলে, তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শ্যামনগর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবীর মোল্যা জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের (মামলা নং ১৬/৩৩২, তারিখ ২৯ নভেম্বর) আওতায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শিশির হোসেনসহ অনেকেই জানিয়েছেন, হাসিম সরদার শ্যামনগরের আলোচিত সন্ত্রাসী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি জগলুল হায়দারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। বিগত সরকার পরিবর্তনের পরও তিনি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘের দখল ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী সরবরাহ ছিল তার মূল কাজ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় আরও অভিযান পরিচালনা করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর হ স ম সরদ র শ য মনগর আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

শ্যামনগরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন কৃষকদল নেতা

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ও নাশকতার অভিযোগে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কাশিমাড়ী ইউনিয়ন কৃষকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমানত মোল্যা। ১৪ মার্চ রাতে শ্যামনগর থানায় বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলায় ৫১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০-১২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি জগলুল হায়দার, সহ-সভাপতি জহুরুল হায়দার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী আনিছুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের প্রায় ২০-২২ জন নেতার নামও রয়েছে।

তবে বিএনপির একাংশের দাবি, মামলায় ষড়যন্ত্র করে কাশিমাড়ী ইউনিয়নের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন— ইউনিয়ন শ্রমিকদল সভাপতি আতিয়ার, যুবদলের সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান, ইউনিয়ন কৃষকদল সভাপতির পিতা বিএনপি কর্মী নজরুল ইসলাম নজু, শ্রমিকদল নেতা রফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এবং কৃষকদলের সদস্য সচিব আব্দুল গফ্ফারসহ অন্যান্য নেতাকর্মী।

উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেছেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ মামলা করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, বিএনপিরই একাংশের নেতা আজিজুল সরদার, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল ওয়াহেদ ও আশেক মুন্নার ষড়যন্ত্রে এসব নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ১২ মার্চ ইউনিয়ন বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যেখানে জামায়াতের কিছু কর্মীও জড়িয়ে পড়ে। এরপর ১৩ মার্চ রাতে জয়নগর এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় থেমে থেমে কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, কাশিমাড়ী এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপি নেতারা একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম থাকলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মামলার বাদী আমানত মোল্যা জানান, বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর নাম মামলায় এসেছে কারণ তারা লাঠিসোটা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন।

এদিকে, মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আজিজুল সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি। উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আশেক ইলাহী মুন্না জানান, তিনি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ছিলেন এবং মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদও নিজেকে মামলার বিষয় থেকে দূরে থাকার কথা জানান।

এদিকে এই মামলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা মামলাটিকে প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার তদন্ত করছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্যামনগরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন কৃষকদল নেতা